চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে বিশ্ব উষ্ণায়ন

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আর্দ্রতা হ্রাসের তীব্র হুমকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। কার্বন নিঃসরণ কমানো না হলে ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে মানুষের বেঁচে থাকার যোগ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রার একেবারে কাছাকাছি চলে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দলের পরিচালিত পরিবেশ বিষয়ক সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ৩০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য মারাত্মক তাপপ্রবাহের শিকার হতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর মোট জীববৈচিত্র্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগের আবাসস্থল। তাই এই অঞ্চল বিশ্ব উষ্ণায়নে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওয়েট বাল্ব পরীক্ষা
বিশ্বের বেশিরভাগ আবহাওয়া স্টেশনে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য দু’ধরণের থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়: ড্রাই বাল্ব এবং ওয়েট বাল্ব। ড্রাই বাল্ব মূলত বাতাসের তাপমাত্রা রেকর্ড করে। অন্যদিকে ওয়েট বাল্ব বাতাসে থাকা আপেক্ষিক আর্দ্রতার তাপমাত্রা মাপে। এই তাপমাত্রাটি সাধারণত বিশুদ্ধ বাতাসের চেয়ে তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়।

এই ওয়েট বাল্বের রিডিং মানব জাতির জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাইরের ত্বকের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে মোটামুটি। তাপমাত্রার এই পার্থক্যটাই ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

ওয়েট বাল্ব থার্মোমিটারে যদি পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হয়, মানুষ দেহ থেকে তাপ বের করে দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এই অবস্থায় দুনিয়ার সবচেয়ে সুস্থ সবল মানুষটাও মাত্র ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন
১৯৭৯ থেকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সমন্বিত মানচিত্র

তাই ওয়েট বাল্বে ৩৫ ডিগ্রিকে মানুষের টিকে থাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ধরা হয়। তবে আর্দ্রতাসম্পন্ন ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বেশিরভাগ মানুষের জন্য চরম বিপজ্জনক তাপমাত্রা বলে মনে করা হয়।

খুব কম সময়ই পৃথিবীতে কোনো এলাকার ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ইরানে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের  খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল এই রিডিং। ওই বছরই গ্রীষ্মে ভারত ও পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।

এই ওয়েট বাল্বকেই কেন্দ্র ধরে পরিচালিত গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে যেমন উচ্চমাত্রায় কার্বন নির্গমন চলছে, তেমনই চলতে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যেই গঙ্গা উপত্যকা, উত্তরপূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, চীনের পূর্ব উপকূল, শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চল এবং পাকিস্তানের ইন্দুস উপত্যকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ এলাকা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যাবে।

এই এলাকাগুলো পানির কাছে এবং সহনীয় তাপমাত্রার কারণে কৃষিকাজ ও মানব বসতির জন্য বেশি উপযোগী হওয়ায় এখানেই জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাই এসব অঞ্চল ভবিষ্যতে বিশ্ব উষ্ণায়নের ঝুঁকিতে খুব বেশি আছে বলে বিবিসি’কে জানান প্রধান গবেষক ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র (এমআইটি) অধ্যাপক এলফাতিহ এলতাহির।