চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ ভারত নয়, বাংলাদেশ

বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটি, যা ফ্রান্স, জার্মানী ও নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যার সমান। বিশ্বের জনবহুল ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে গরীব দেশ বাংলাদেশ। তবে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন বাস্তবতার নিরিখ দাবি করে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টজ’র এক প্রতিবেদনে এমনই বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে এডিবির তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১ শতাংশ; যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত ৬ বছর ধরেই জিডিপি রয়েছে ৬ শতাংশের বেশি। অধিকাংশ বিশ্লেষকের প্রত্যাশা জিডিপি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

তবে দেশের দ্রুত উন্নয়নের ফলাফল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো না গেলে প্রবৃদ্ধির এই অর্জন কাজে আসবে না।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ গরীবের আয় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা একই সময়ে তুলনামূলক কম হয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতে।

এই সমন্বিত বৃদ্ধির ফলে, দারিদ্র্য হার কমে গেছে। ১৯৯১ সালে চরম দারিদ্র সীমার নিচে বাস করতো ৪০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা। বিশ্বব্যাংকের মতে যা এখন ১৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে বর্তমানে ৫ কোটিরও কম মানুষ চরম দারিদ্র সীমার নিচে রয়েছে।  

ইয়েল বিশ্বদ্যিালয়ের অর্থনীতিবিদ আহমেদ মুশফিক বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের উৎপাদন এবং শক্তিশালী এনজিও-এই দুইটি প্রধান কারনে বাংলাদেশের সাফল্য এসেছে।

২০১৫ সালে পোশাক রপ্তানিতে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করে বাংলাদেশ; যা জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ আর দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশ। ধারনা করা হয়, ২০১৬ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ গার্মেন্টস বেড়েছে।

মুশফিক বলেন, দূর্বল অবকাঠামো এবং কঠিন নিয়ন্ত্রক অবস্থার কারনে পোশাক শিল্পের ইতিহাসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটলেও এই শিল্পটি এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গার্মেন্টস শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে স্থানীয় কোম্পানিগুলিকে সুবিধা দিতে ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত টেক্সটাইল কোটা সিস্টেমের সুবিধাভোগী ছিল বাংলাদেশ। এই কৌটা সুবিধা কাজে লাগাতে কোরিয়ানরা বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে। তখন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কোরীয়দের সাথে কাজ করে দক্ষতা অর্জন করে। পরে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করে।

অর্থীনতিবিদ মুশফিক মনে করেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং স্বাস্থ্যখাতের উন্নতিতে এনজিওগুলোর অবদান রয়েছে। কারণ এদেশে একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ রয়েছে যারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করে। বলতে গেলে সরকারের মতোই কাজ করে তারা। বাংলাদেশে কাজ শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্র্যাক। প্রায় ৬ কোটি বাংলাদেশিকে টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনধারার মত মানবিক উন্নয়ন সূচকের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে।

তবে উন্নয় হলেও সবখাতে ভাল নয়। কারন গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে, কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটি ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদীর দিকে যাচ্ছে। জনসাধারণের অবকাঠামো বিনিয়োগের অভাবের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং রাজধানী ঢাকায় বাস করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ; যা বিশ্বের সর্বনিম্ন বাসযোগ্য শহরের শিরোনাম হওয়ার পর্যায়ে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে রানা প্লাজা দূর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিয়ে। কারণ ২০১২ সালের ওই ঘটনায় ১১শ শ্রমিকের প্রাণহানী ঘটে। এসব দূর্ঘটনা রোধ করতে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারন নিরাপত্তাজনিত কারনে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এ শিল্পকে করলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।