গত দুবছর করোনা মাহামারির কারণে আমাদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসব আনেকটা ম্লান ছিল। উৎসব যেন উৎসবের মত ছিল না। এবারের ঈদ উৎসব তাই এনেছে আমাদের জীবনে নতুন আমেজ। এবারই প্রাণ খুলে দেশের মানুষ উৎসবে সামিল হতে পারছে।
ত্যাগের মহিমায় আবার এল ঈদ উল আজহা। ঈদ মানে ধনী-দরিদ্র মিলে মিশে এক সাম্যের আনন্দ। পেছনের দুঃখ দুর্দশাকে ভুলে গিয়ে আনন্দের উৎসবে মিলিত হওয়াই ঈদ। ঈদ-উল-আজহার আছে আরেকটি বিশেষ দিক। এদিন মহান আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেয়া হয়। ঈদ উল আজহার তাৎপর্য তাই মুসলিমদের কাছে বিশেষ অর্থ বহন করে। ঈদ আনন্দের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের নিকট উৎসবের আমেজ। বাঙালির জীবনে ঈদ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবের আনন্দ বাঙালির জীবনে ভিন্নমাত্রা প্রদান করে থাকে। এবারের ঈদ এলো বন্যায় নিঃশেষ হওয়া মানুষের কান্না নিয়ে। গত কিছুদিন আগে সিলেট সুনামগঞ্জসহ হাওড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। মানুষের সীমাহীন দুঃখ দুর্দশায় সরকার ও মানুষ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সব হারানো মানুষ এখনও স্বাভবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। সুনামগঞ্জের পানিও এখনও নামেনি। এ ঈদে তাদের কথাও মনে রাখতে হবে। কোরবানি ঈদের মূল তাৎপর্য যেন হয় মনের পশুকে কোরবানি দিয়ে মানবতা, সহমর্মিতা আর কল্যাণের উদ্ভাসন। এই উৎসব আনন্দে আমরা যেন ভুলে না যাই দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা দুর্গত মানুষের কথাও। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে আমরা যেন তাদের পাশে দাঁড়াই। আমরা যেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুর্ণবাসনে কাজ করতে পারি-সেটা হোক এ ঈদের চাওয়া। বানভাসি মানুষের ঈদ যেন ম্লান না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ত্যাগের মহিমায় যেন প্রকৃতই মানবতার জয়গানে উদ্ভাসিত হই আমরা সবাই। এই ঈদে এটাই যেন হয় সকলের আনন্দ উৎসবের মূলমন্ত্র।
বন্যা মহামারি প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই দেশে উৎসব আসে। আমরা কখনও তা পুরোমাত্রায় উপভোগ করতে পারি না-কখনও পারি। এবারের ঈদ যেন দেশের সকল মানুষের মুখে হাসি ফোটায় এটাই হোক ঈদ আনন্দের মূলমন্ত্র।