চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

তোয়ালে রপ্তানির আড়ালে মাদক পাচার, চক্রে আছে বিদেশি ডিগ্রিধারী

অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশানের তরল থেকে কেটামিন মাদক সংগ্রহ করে তা সাদা তোয়ালেতে স্প্রে করে তোয়ালেগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করতো একটি চক্র। লন্ডনে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে এসে এই চক্রের সাথে জড়ায় মীর মঞ্জুর মোর্শেদ সানী। তার সঙ্গে এই চক্রে ছিল এলএলবি সম্পন্ন করা চয়ন এবং এমবিএ সম্পন্ন করা হাবিবুল্লাহ।

উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করেও মাদক পাচারের ব্যবসায় জড়ানোর অভিযোগে এই চক্রের মূল হোতা মীর মঞ্জুর মোর্শেদ সানীসহ মাহমুদুল হাসান চয়ন ও হাবিবুল্লাহ খানকে আটক করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর পল্লবী এলাকার একটি বাড়ির ৭ম তলার ফ্ল্যাট থেকে র্যা ব-১ এর একটি অভিযানিক দল তাদেরকে আটক করে। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে দেড় লিটার তরল কেটামিন ও সাড়ে ৩ কেজি কেটামিনযুক্ত ৩৪টি সাদা তোয়ালে উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন: বাংলাদেশে শুধুমাত্র অপারেশন থিয়েটারে এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশান ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশানের ১৪৫টি বোতল এবং ১৮০টি খালি বোতল তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

‘১০ মি. লি. ওষুধসহ বোতলের লেবেলে উল্লেখিত লেখা থেকে জানা যায়, প্রতি মিলি লিটারে ৫০ মি. গ্রা. কেটামিন রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি বোতলে ৫০০ মি. গ্রা. কেটামিন রয়েছে। এই চক্রটি অবৈধভাবে বাজার থেকে এসব ইনজেকশানের বোতলগুলো সংগ্রহ করতো। তারপর সেসব লিকুইড একটি পাত্রে জাল দিতো। তারপর সেই তরলটি সাদা তোয়ালেতে স্প্রে করে শুকানোর পর পলিথিন দিয়ে প্যাকেটজাত করে তোয়ালেগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করতো। প্রতি তোয়ালেতে ১০০ গ্রাম কেটামিন থাকতো এবং প্রতি তোয়ালের বাজার মূল্য ২০-৩০ পাউন্ড। পাচারকৃত তোয়ালে থেকে ক্যটামিন লিক্যুইড ফর্মে অথবা পাউডার সংগ্রহ করা সম্ভব।’

মুফতি মাহমুদ খান বলেন: আটক সানী লন্ডনে পড়াশোনা শেষ করে ৫-৬ মাস আগে দেশে ফিরে আসে। চয়ন এলএলবি সম্পন্ন করেছে এবং হাবিবুল্লাহ এমবিএ সম্পন্ন করেছে। তাদের একজন বাজার থেকে এ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশান সরবরাহ করতো, একজন প্রক্রিয়াজাত করতো এবং আরেকজন কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করতো। তারা এ পর্যন্ত চারটি চালান স্পেনে পাঠিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আরেকটি চালান কুরিয়ার সার্ভিস থেকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন: সানীর বড়ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্না প্রায় ১৫ বছর ধরে স্পেনে বসবাস করছে। সে স্পেনের এক নাগরিক আরামডো গঞ্জালিওসহ দুইদফা বাংলাদেশে এসে কেটামিন প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতিটা তাদেরকে শিখিয়ে যায়।

কুরিয়ার সার্ভিসের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন: কেটামিনগুলো তোয়ালের একপাশে স্প্রে করা অবস্থায় থাকে। পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা এবং ল্যাব টেস্ট ছাড়া তোয়ালে ধরেও কেটামিনের উপস্থিতি বুঝার উপায় নেই। প্রাথমিকভাবে কুরিয়ারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।