প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতিমদেরকে তার ‘অত্যন্ত কাছের’ এবং ‘আপনজন’ আখ্যায়িত করে তাঁদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তোমাদের একটি কথা বলতে চাই, তোমরা অনাথ এবং অসহায় নও, তোমরা আমার অত্যন্ত কাছের এবং আপনজন। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবসময় তোমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন আমি তোমাদের পাশে আছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে মুজিববর্ষ এবং জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেশের ৮৫টি শিশু পরিবার এবং ছয়টি ‘শিশু নিবাস এর শিশুদের দ্বারা ৫০ হাজারবার কোরআন খতম উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর এর উদ্যোগে আগারগাঁওস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দান করেন।
বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করাই আমার সব সময়ের প্রচেষ্টা। স্বাভাবিকভাবেই আমরা এতিমদের বেদনা খুব ভালভাবে অনুভব করতে পারি। কারণ আমরা ১৫ হত্যাকাণ্ডে মধ্য দিয়ে এতিম হয়েছি। তোমরা একেবারে একা না। আমরা আছি তোমাদের পাশে। আমি এবং আমার ছোট বোন (শেখ রেহনা) সবসময় তোমাদের কথা চিন্তা করি।’
শেখ হাসিনা এ সময় ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট শাহাদত বরণকারী তাঁর ভাই, সন্তান-সন্তুতি এবং নাতি-নাতনীদের জন্মদিন এতিমদের সাথে নিয়ে উদযাপন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন,‘আমরা এসব দিনে কোন প্রকার জন্মদিনের পার্টি বা ভোজের আয়োজন করি না বরং তোমাদের মত অনাথদের সাথে নিয়েই পালন করি এবং যা কিছুই আয়োজন থাকে (খাদার-দাবার) তা এতিমখানাতে পাঠিয়ে দেই। আমরা মনে করি জন্মদিনের পার্টি করায় কোন লাভ নেই, এটাই সব থেকে বড় কাজ হবে যদি এতিমদের মুখে কিছু খাবার তুলে দেওয়া যায়, সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তাঁর মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাও একই কাজ করতেন মর্মে স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘মা পরিবারের কারও জন্মদিন হলেই এতিমদের খাবার এবং সাহায্য পাঠাতেন।’
প্রধানমন্ত্রী এতিমদের লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের একথাটা মনে রাখতে হবে যে, পিতা-মাতা কারো চীরকাল থাকে না। কাজেই তোমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এবং তাঁরা (পিতা-মাতা) যেখানেই থাকুন তাঁরা নিশ্চই তোমাদের জন্য দোয়া করছেন। তোমাদের মধ্যে অনেকেরই মেধা রয়েছে। যাঁরা দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে।’
স্বাধীনতা অর্জনের পরে দেশের মানুষের কল্যাণে জাতির পিতা গৃহীত নানাবিধ পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই সংবিধানে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করে যান এবং শিশু অধিকার আইন প্রণয়ন করেন। জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই তাঁর সরকার এতিমদের কল্যাণে বহুমুখি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনই জাতির পিতার স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সে লক্ষ্য অর্জনেই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে জাতির পিতার আত্মা শান্তি পায় এবং তাঁর রক্ত যেন বিফলে না যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তারা ঘৃণিত। কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে আমরা তাদের বিচারের সম্মুখীন করেছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সে শক্তি দিয়েছেন এবং সেজন্য আমরা তাঁর শোকরিয়া আদায় করছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় এ সময় দেশবাসীর প্রতি পুনরায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাঁর দল আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকেও দু:সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। দেশের জনগণ যেন দ্রুত করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভ করে আবারও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য আল্লাহর দরবারেও তিনি প্রার্থনা করেন।
তিনি জাতির পিতার শাহাদত বার্ষিকী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ৫০ হাজার বার কোরআন খতম করায় শিশু পরিবার এবং শিশু নিবাসের শিশুদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ মূল অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন। প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিশু পরিবারের দুই ক্ষুদে সদস্য সামিয়া আখতার এবং বিজয় ইসলামও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব তোফাজ্জ্বল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যানের মধ্যে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।