বাবা ছিলেন বাউল শিল্পী। সেখান থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ তার। তবে তৃতীয় লিঙ্গ হওয়ায় সমাজে সেভাবে স্থান হয়ে ওঠেনি জান্নাত জাহানের। কিন্ত তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে না বেঁচে সমাজের আর দশটা মানুষের মতোই বাঁচতে চায় জান্নাত। সেখান থেকেই তার উঠে আসার গল্প। আর সে গল্পের অংশ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের শিল্পী জান্নাতের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা ‘জান্নাত গাইছে’।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গ্রীন রোডের বিন্দুধারীতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি ও আধুনিক গানসহ বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর মধ্যে মায়াবন বিহারিনী হরিণী, ভেঙে মোর ঘরের চাবি, তুই যদি হইতি গলার মালা, আমি রাই বিনোদনী, আমরা মলয় বাতাসে ভেসে ভেসে যাবো, শাওন রাতে যদি, সহ বিভিন্ন গান অন্যতম। আয়োজনে শিল্পীর গানের মাঝে মাঝে নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন জন।
রাজধানীতে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সদাচারণ প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং রিথিংক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একজন তৃতীয় লিঙ্গ যে কাজে পারদর্শী বা আগ্রহী, তাকে সে কাজ শেখানোর মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সঙ্গীতে আগ্রহী জান্নাত’কে ছয় মাস ধরে সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দিয়েছে রিথিংক। প্রশিক্ষণ শেষে শিল্পী জান্নাতের মঞ্চে শুভাগমন উপলক্ষ্যে রিথিংক আয়োজন করে তার একক সঙ্গীত সন্ধ্যা ‘জান্নাত গাইছে’।
আয়োজনের শুরুতেই দর্শক ও অতিথিদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ হলেও আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে চাই না। গান দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চাই। একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। রিথিংক সেই প্লাটফর্মটা আমাকে তৈরী করে দিয়েছে, এজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই অন্য সকল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘোরা বাদ দিয়ে সমাজে কিছু করে প্রতিষ্ঠিত হোক।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রি-থিংকের পরিচালক লুলু-আল-মারজান। তিনি বলেন, আমরা চাই তৃতীয় লিঙ্গদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটাতে। সে লক্ষ্যেই আজকের এ আয়োজন। আমরা চাই আপনারাও তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করেন। এর ফলে তাদের সাথে আমাদের দূরত্বটা যেন ঘুচে যায়।
আয়োজনে টিকেট বিক্রি করে দর্শকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সর্বোমোট ১০ হাজার টাকা শিল্পী জান্নাতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।