চট্টগ্রাম থেকে: ভারতের বিপক্ষে চোখ জুড়ানো পারফরফ্যান্স করেই শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে খেলতে এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ফুটবলার। বসুন্ধরা কিংস ও চট্টগ্রাম আবাহনীতে ভরপুর উপস্থিতি লাল-সবুজদের অনেক সদস্যের। জাতীয় দলের কারা কাড়বেন নজর? এমন জিজ্ঞাসা নিয়ে যারা নজর রেখেছিলেন টুর্নামেন্টে, তাদের একপ্রকার হতাশই হতে হয়েছে! জাতীয় দলের ফিনিশং সমস্যাটা যেন আরও একবার প্রকট হল এ ক্লাব টুর্নামেন্টে এসেও!
গ্রুপপর্ব ও দুই সেমিফাইনালসহ চলতি শেখ কামাল কাপে ম্যাচ হয়েছে ১৪টি। গোলসংখ্যা ৫৬। ম্যাচ প্রতি গড়ে গোল ৪টি। স্বাগতিক চট্টগ্রামের খেলার বাইরেও যারা অন্য দলগুলোর খেলা দেখতে এসেছেন, তাদের খুব একটা হতাশ হতে হয়নি। তেরেঙ্গানু এফসি ও গোকুলম কেরালা এফসির খেলা ছাড়া প্রতি ম্যাচেই গোল হয়েছে। ড্র বলতে ওই একটি ম্যাচই। সবচেয়ে কম গোল হয়েছে মোহনবাগানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যাচে। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ওপার বাংলার ক্লাবের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল স্বাগতিকরা।
এত এত গোলের সব ম্যাচ, তাতে কত গোল এলো বাংলাদেশিদের পা থেকে? সংখ্যাটা জানলে রীতিমত হতাশই ভর করবে। বসুন্ধরা ও চট্টগ্রামের হয়ে খেলেছেন জাতীয় দলের ১৮ ফুটবলার। শেখ কামাল টুর্নামেন্টে তাদের সম্মিলিত গোল মাত্র ৩টি। যার একটি আবার জামাল ভূঁইয়ার। বাকি দুই গোল এসেছে চট্টগ্রামের কিশোর ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত ও বসুন্ধরা ফরোয়ার্ড মতিন মিয়াঁর থেকে।
দেশীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল যথারীতি জামাল ভূঁইয়াই। ভারত থেকে আসার পর যেন বৃহস্পতি তুঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের। গ্রুপপর্বে প্রথম দুম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। কিন্তু যাদের গোল করার কথা সেই ফরোয়ার্ডদের খবর কী?
জাতীয় দলের ফরোয়ার্ডদের মধ্যে সোহেল রানা খেলেন চট্টগ্রামে। গোল করা তো দূরের কথা নিজের নামের প্রতি সুবিচারই করতে পারেননি তিনি। বসুন্ধরায় ছিলেন বিপলু আহমেদ, মাহাবুবুর রহমান সুফিল, মতিন মিয়ারা। তাদের মধ্যে কেবল মতিনই পেরেছেন কোচ অস্কার ব্রুজেনের মন জয় করতে। বাকি সময় বিদেশিদের উপরই নির্ভর করতে হয়েছে দুদলের কোচের।
ক্লাবে এসেও দেশীয়দের এমন গোলখরা। উত্তরণের উপায় কী? চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হকের উত্তর, এই পর্যায়ে ফুটবলারদের আসলে শেখানোর কিছু নেই। সমাধান খুঁজতে যেতে হবে তৃণমূলে।
‘এভাবে আর কোনভাবেই একজন ফুটবলারকে তৈরি করা যাবে না। একজন আসল ফরোয়ার্ড খুঁজতে হলে এখন একদম তৃণমূলে যেতে হবে। এই বয়সে এসে জীবনকে (জাতীয় দল ফরোয়ার্ড) তৈরি করতে পারবো না। কোনভাবে মতিন, সুফিলদের পরিবর্তন করতে পারবো না। হয়তো এক-দুইটা ম্যাচে পরিবর্তন করতে পারবো, কিন্তু সব ম্যাচে সম্ভব না। এজন্য আমাদের তৃণমূলেই প্রতিভা খুঁজতে হবে।’
দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক শেখ কামাল কাপ আয়োজন করেও জাতীয় ফুটবলের কোন লাভ হবে না বলে মত মারুফুলের। কারণ, তৃণমূলে দুর্বল কাঠামো হওয়ায় ফুটবলার উঠে আসার পাইপলাইন কমে যাচ্ছে। টুর্নামেন্ট আয়োজন করার চেয়ে সেদিকেই নজর দিতে বলছেন উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী এ কোচ।