গর্ভবতী মায়েদের জন্য তৃণমুল পর্যায়ে পর্যাপ্ত সেবার সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও প্রসব পরবর্তী সময়ে তেমন সেবা পাচ্ছে না মায়েরা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে বাল্যবিবাহের শিকার কম বয়সের মায়েরা। প্রসব পরবর্তী সমস্যায় সরকারি সেবা না পেয়ে অনেকেই সেবা নিচ্ছেন বেসরকারী চিকিৎসকের কাছে।
সরেজমিনে পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এখানে দুজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে যিনি আছেন তিনিও অনুপস্থিত । ওই চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন একজন আয়া। ধাক্কামারা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া দিপ্তি রাণী বলেন, ম্যাডাম পঞ্চগড়ে মিটিংয়ে গেছেন।
এই ইউনিয়নে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। গর্ভাবস্থা ও গর্ভপরবর্তী সময়ে নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগেন কম বয়সের এসব মায়েরা। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রসব পরবর্তী সময়ে তেমন সেবা পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে তাদের চিকিৎসা নিতে হয় বেসরকারী চিকিৎসকের কাছে। ভুক্তভোগী এক রোগী বলেন, এখানকার ডাক্তাররা জ্বর, মাথা ব্যথার চিকিৎসা দিতে চায় না। আমাদের বলে, এতো চিকিৎসা কী দেওয়া যায়?
আর একজন ভুক্তভোগী বলেন, বিকাল চারটা পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও তারা থাকেনা। বেলা একটার মধ্যেই বন্ধ করে দেয়। তাই কষ্ট করে টাকা দিয়ে আমরা বেসরকারী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নেই।
প্রসব পরবর্তী কম বয়সের মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সংস্থা ইমেজের জরিপে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি ইউনিয়নের ৪৫ শতাংশ কম বয়সী মায়েরা প্রসব পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন বেসরকারী চিকিৎসকের কাছে। আর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা গ্রহণ করেন মাত্র ৬ দশমিক ৭ শাতাংশ মা।
ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারীভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা খাতা কলমে থাকলেও বাস্তবে মাঠে পাওয়া যায়নি তাদের। পঞ্চগড় জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনসুর আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে এবং ওয়ার্ডে সরকার ক্লিনিক ও কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য।
তিনি আরো বলেন, কেনো তারা স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না এটা আমাদেরও ভাবনার বিষয়।
তবে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মায়েরা তেমন স্বাস্থ্যসেবা না পেলেও পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন জেলা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।