তুরস্কে গত শুক্রবারের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে বরং ক্ষমতাসীন জামায়াত ঘরানার জাস্টিস পার্টি এবং প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
অভ্যুত্থান চেষ্টার অজুহাতে এবার দেশটির সেনাবাহিনীর চিরাচরিত ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব হ্রাসের এক মহাসুযোগ পেয়েছেন এরদোগান। তাই শুক্রবার রাতের সেনা বিদ্রোহকে ‘নকল বিদ্রোহ’ বলছে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা।
আর এমন সন্দেহ গাঢ় হয়েছে যখন খোদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তথাকথিত সেনা অভ্যুত্থানকে ‘আল্লাহর রহমত’ বলে অভিহিত করেন। সামাজিক মাধ্যমে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং তুরস্কের এই ‘সেনা বিদ্রোহ’কে অনেকেই তুলনা করছেন ১৯৩৩ সালে হিটলারের একটি কূটকৌশলের সঙ্গে।
নিজের ক্ষমতার ভিত্তি মজবুত করতে জার্মানির সংসদভবনে আগুন লাগিয়ে দেন হিটলার। প্রচার চালানো হয় অভ্যুত্থান হয়েছে। ইতিহাসে এই ঘটনাকে বলা হয় ‘রাইখসট্যাগ ফায়ার’। এই ঘটনাকে কম্যুনিস্ট চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে জনস্বাধীনতা বাতিল করে গণগ্রেফতারের আদেশ দিয়েছিলেন হিটলার।
তুরস্কের সেনা বিদ্রোহকেও হিটলারে সেই কূটচালের পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখছে সামজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। কারণ তথাকথিত ওই বিদ্রোহের পর এরদোগান সমস্ত দোষ চাপান তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত ফেতুল্লাহ গুলেনের ওপর এবং গুলেন সমর্থকদের ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। শুক্রবারের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনীর ভেতর গুলেন সমর্থকদের নিশ্চিহ্ন করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বেশ খোলামেলাভাবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এরদোগান।
আর এই মনোভাবই ভাবাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। ব্যর্থ সেনা বিদ্রোহের অজুহাতে তুরস্কের ক্ষমতায় এরদোগানের জেঁকে বসার চেষ্টা ধীরে ধীরে আরও খোলাসা হচ্ছে। পলিটিকো ম্যাগাজিনের ইউরোপ প্রতিনিধি রায়ান হিথ এক তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ‘শুক্রবারের নকল অভ্যুত্থান গণতন্ত্রের এক নকল যোদ্ধাকেই সাহায্য করবে। খুব শিগগিরই হয়তো নির্বাচন দেয়া হবে। সেখানে এই অভ্যুত্থানকে কাজে লাগিয়ে বিপুল বিক্রমে আবারও ১০-১৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসবে জাস্টিস পার্টি এবং আমরা পাবো একজন নির্বাচিত স্বৈরশাসক। শুধু তা-ই নয় কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের সংবিধান থেকে ধর্মনিরেপক্ষতার ধারা হারিয়ে যাবে এবং আরও কট্টর ধর্মান্ধতা পুরো দেশকে গ্রাস করবে’।
আরও এক টুইট বার্তায় আরেকটি সূত্রের উল্লেখ করে জানানো হয়, হয়তো শুক্রবারের বিদ্রোহটি আসল ছিল, তবে এই বিদ্রোহের পরিণতি সম্পর্কে সুনিশ্চিত ছিল ক্ষমতাসীন সরকার এবং এরদোগান। কারণ অগোছালো সেনাদের বিদ্রোহটি সরকারের পতনের জন্য যথেষ্ট ছিল না’।
আশঙ্কা ইতোমধ্যেই সত্য হতে শুরু করেছে। বিদ্রোহের ঠিক পরপরই একই মাপের পতাকা হাতে এবং এরদোগানের ছবি সম্বলিত পোস্টার হাতে রাস্তায় নেমে আসে জাস্টিস পার্টির সমর্থকরা। বিদ্রোহের অবসানের পর এসব সমর্থকদের হাতে বিদ্রোহী সেনাদের নির্যাতিত হতে দেখা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে। হত্যা করা হয় ১’শ ৯০ জনেরও বেশি সেনাকে। তুর্কি সুপ্রিম কোর্টের আড়াই হাজারেরও বেশি বিচারককে বরখাস্ত করা হয় এবং ১’শ ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।