গণভোটে ইতিবাচক রায়ের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সমালোচকদের সতর্ক করেছেন। ‘নিজেদের অবস্থান জানতে’ হুঁশিয়ারি দিয়ে কারও মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না বলেও ঘোষণা তার। নানা অনিয়মে ‘গণভোট প্রচারণা আন্তর্জাতিক মানের হয় নি’, ইউরোপীয় পর্যবেক্ষকদের এমন অভিযোগ প্রত্যাখান করেছেন তিনি। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সামান্য ব্যবধানে এরদোগানের জয় দেশটির নির্বাচনী পর্ষদ বৈধতা দিয়েছে। তাই অনিয়ম, আপত্তি যাই থাকনা কেনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে যাচ্ছেন এরদোগান।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আয়োজিত গণভোটে ৫১.৮ শতাংশ অনুকূল ভোট পান এরদোগান। এই ফলে দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হওয়া এরদোগান সাংবিধানিকভাবেই আরও কর্তৃত্বময় হয়ে উঠবেন। আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্কের পর সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রভাবশালী নেতা এরদোগান।
গণভোট ঘিরে প্রতিকূলতা এরদোগানকে বিচলিত করতে পারবে না বলেই মত বিবিসির মার্ক লোয়েনের। তার বিশ্লেষন অনুযায়ী, নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য বিরোধীদের দাবিকে জোড়ালো করলেও ফল দিবে না। যে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র প্রেসিডেন্ট ও তার অনুগামীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ৮০ শতাংশ গণমাধ্যমই সরকার সমর্থক, তাদের পক্ষে রায় পাল্টানো কঠোর সংগ্রামের বিষয়। এমন বিতর্কিত গণভোটে তুরস্ক-ইইউ দ্বন্দ্বও কমবে না।
গণভোট ঘিরে অভিযোগ
ভোটের দিনের ‘ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু’ বলা হলেও নানা অনিয়ম তুলে ধরে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) ও দ্য কাউন্সিল অব ইউরোপ। দ্বিতীয়টির প্রতিনিধি দলের প্রধান সিজার ফ্লোরিন প্রেডা বলেন, গণভোট কাউন্সিল অব ইউরোপের নির্ধারিত মানে উন্নীত হতে পারেনি। এই কাউন্সিল একটি প্যান-ইউরোপিয়ান মানবাধিকার পর্ষদ, তুরস্ক যার সদস্য।
- এখানে ‘অসম পরিস্থিতি’ ছিলো এবং প্রচারণায় দুই পক্ষের ‘সমান সুযোগ ছিলো না’।
- প্রেসিডেন্ট এবং কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সক্রিয় হস্তক্ষেপের কারণে এই অসম পরিবেশ।
- বিরোধীদের সন্ত্রাসীদের অনুগামী তকমা দেওয়া
- রাষ্ট্রিয় সম্পত্তির অপব্যবহার
- জরুরি অবস্থার কারণে প্রয়োজনীয় মৌলিক অধিকারে কাঁটছাট (গত বছর জুলাইয়ে এক অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাৎ করেন এরদোগান। এর পর থেকেই জরুরি অবস্থা)
- কিছু ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক গণভোটের জন্য আইনি কাঠামো পর্যাপ্ত ছিলো না।
সিলবিহীন ব্যালট পেপার গ্রহণের অভিযোগও ছিলো। যার জবাবে তুরস্কের ইলেক্টোরাল বডির প্রধান সাদি গুভেন বলেন, সিলবিহীন ব্যালোট প্যাপারগুলো হাই ইলেক্টোরাল বোর্ডের এবং তা বৈধ। এমনটি গত নির্বাচনেও হয়েছিলো।
এরদোগানের বক্তব্য
এরদোগানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারের পক্ষে এই রায়ের পর আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান বলেন, পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত প্রতিবেদন তুরুস্ক দেখবে না, শুনবে না বা স্বীকৃতি দিবে না।
তিনি বলেন, সংবিধানের পরিবর্তন বিষয়ে সকল বিতর্কের সমাপ্তি টেনেছে এই রায়, তা একটি নির্বাহী প্রেসিডেন্সির সৃষ্টি করেছে। সংস্কারের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখন শুরু হবে। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকা ইইউ সদস্য থাকার বিষয়েও গণভোট হতে পারে।
গণভোটে সমর্থন বা সংসদের মাধ্যমে বিল আনা হলে তিনি মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন দিবেন বলেও জানান, যা ইইউ’তে তুরস্কের যোগদানের সকল সম্ভাবনার সমাপ্তি টানবে।
প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিউপিলস পার্টি (সিএইচসি) ৬০ শতাংশ ভোট পুনর্গনার দাবি করেছে। কুর্দিদের পিউপিলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) অনিয়মের অভিযোগ করেছে।
দেশটির বৃহত্তম তিনটি শহরই না বলেছে
তুরস্কের তিনটি বৃহত্তম তিন শহরে এরদোগান হেরেছে। ইস্তাম্বুল বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী আঙ্কারায় সামান্য ব্যবধানে হারলেও, ইজমির তৃতীয় বৃহত্তম শহর (৬৮.৮% না) বিপক্ষ ভোটই বেশি।
নতুন সংবিধানে কী থাকছে
- ২০১৯ সালের ৩রা নভেম্বর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
- প্রতি মেয়াদে ৫ বছর করে অন্তত দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। ফলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন এরদোগান।
- মন্ত্রী-সহ সকল শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট সরাসরি নিয়োগ করতে পারবেন।
- কয়েকজন ভাইস-প্রেসিডেন্টও মনোনীত করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বলে কিছু থাকবে না আর। বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন বিনালি ইলদিরিম।
- বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের।
- জরুরী অবস্থা জারি করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।