ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার আড়তদাররা যে ৪শ’ কোটি টাকা পাওনা রয়েছেন তা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্যানারি মালিক, কাঁচা চামড়ার আড়তদার ও এফবিসিসিআই’র বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে আরো একটি বৈঠক করে এ বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আর আগামী ৩১ আগস্ট ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে বৈঠকে এই পাওনা পরিশোধের অগ্রগতি জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের যে ৪শ কোটি টাকা পাওনা আছে, সেই পাওনা ৩ কিস্তিতে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ের বকেয়া অর্থ একটি কিস্তিতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের বকেয়া একটি কিস্তিতে এবং ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের বকেয়া অন্য একটি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী শনিবার (২৪ আগস্ট) ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা আরও একটি বৈঠক করবেন। বকেয়াগুলো কিভাবে পরিশোধ করা হবে, সে বিষয়ে ওই বৈঠকে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। কার কাছে কত টাকা বকেয়া রয়েছে সেই তালিকা প্রস্তুত করবেন।
এরপর আগামী ৩১ আগস্ট উভয় পক্ষের চামড়া ব্যবসায়ীরা আবার এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে তারা বিস্তারিত জানাবেন।
চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা বা নষ্ট হয়ে গেছে বলে যে সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে সে বিষয়ে ফজলে ফাহিম বলেন, চামড়া নষ্ট হয়েছে বলে যেভাবে বলা হচ্ছে আসলে সেভাবে হয়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ২/১টি ঘটনা ঘটেছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তে আড়তদাররা সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখনো বলতে পারছি না। তবে ৩১ আগস্টের বৈঠকের পর বলতে পারবো আমরা সন্তুষ্ট কিনা। তবে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের সব বকেয়া আমরা এক সাথে পেতে চাই।
তিনি বলেন, কোনো কোনো ট্যানারি মালিক ট্যানারি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাদের তো খুজে পাওয়া যাবে না। আবার কেউ সাভার ট্যানারি পল্লী থেকে ফিরে চলে আসছে। তাই এদের সবার কাছ থেকে কিভাবে পাওনা আদা করা যায় সে বলে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বকেয়া আদায়ের বিষয়ে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে আমাদের ৬শ’ ৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়। ৯ মাস ধরে ওই ঋণ পরিশোধ করি। এরপর ওই ঋণগুলোই আবার পুনঃতফসিল করে দেয়া হয়। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে অধিকাংশ ট্যানারি মালিক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে তারা ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পায়নি। তাই তারা আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, এই বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট। এবার আমরা নিজেরা বৈঠকে বসে ঠিক করে নেবো, পাওনাগুলো কবে, কিভাবে আদায় করা হবে।
এর আগে, আড়তদারদের পাওনা আদায়ে গত ১৮ আগস্ট সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে চামড়া কেনাবেচায় সম্মত হন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ওই বেঠকে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেয়া হয় এফবিসিসিআইকে।