চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তাহলে দুষ্টের দমন করবে কে?

মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আর ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সার্কুলার জারি করেছিল, তাকে ‘দুষ্টের পালন, শিষ্টের দমন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট । শুধু তাই নয়, ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থাও জারি করেছেন আদালত।

ক’দিন আগে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, দেশের আর্থিকখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিজেই ঋণ খেলাপিদের জন্য ওই বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করতে। এমনিতেই নানা কারণে গত কয়েক বছর ব্যাংকিংখাতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। এরই মধ্যে আবার যখন এমন সার্কুলার আসে, তখন বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ই থাকে না। অথচ আর্থিকখাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ এই খেলাপি ঋণ।

আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করতে আসরে নেমে পড়েছে। ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ এই সুবিধা তারই বড় প্রমাণ। ঋণ খেলাপিদের জন্য সুবিধা শুধু এটুকুই নয়, আরো আছে। যেমন: এক বছরের ঋণ পরিশোধ না করে ১০ বছরের মধ্যে বাকি টাকা শোধ করা এবং নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন তারা। আর এ কারণেই বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ একে ‘দুষ্টের পালন, শিষ্টের দমন’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ নিয়ে গত বছর সাবেক অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছিলেন, প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে তা শোধ করেনি ঋণ গ্রহীতারা। নিশ্চয়ই এই এক বছরে তা আরো বেড়েছে। এই অবস্থায় এমন বিশেষ সুবিধা পেলে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কেননা এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের জন্য যেসব সুযোগ দিয়েছে, তাতে শেষ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ কমেনি। বরং বেড়েছে।

আমরা জানি, রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় এই ঋণ খেলাপিরা দাপিয়ে বেড়ায়। কোনো আইন দিয়েই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাদের ক্ষমতা এতটাই বেশি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যন্ত জিম্মি হয়ে থাকে এদের কাছে।

সাধারণত রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারে ‘শিষ্টের পালন এবং দুষ্টুকে দমনের শিক্ষা দিয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা তার উল্টো দেখছি। কিন্তু এই দুষ্টের পালন না করে দমন করতেই হবে। না হলে শিষ্টের পালন বলে আর কিছু থাকবে না। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনায় এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এমন করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রকেই এসব দুষ্টুদের দমন করে সমাজে দৃষ্টান্ত রাখতে হবে।