রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন সত্যিকারের অভিভাবকের মতো। আর সহকর্মীদের কাছে বন্ধুভাবাপন্ন ও মিশুক মনের এক মানুষ ছিলেন। এমনটাই জানিয়েছেন তার শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা।
প্রিয় শিক্ষক জলি আপার আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনেই তার শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তারা বলেছেন একজন আদর্শ শিক্ষক আর সুন্দর মনের মানুষের কথা।
জলি আপার শিক্ষার্থী সাংবাদিক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা বলেন: সিগ্ধ, মৃদুভাষী মিষ্টি একজন মানুষ ছিলেন জলি আপা। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষও ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর কথা মনে করে চ্যানেল আই’র সিনিয়র রিপোর্টার কেকা বলেন, ‘আমার তৃতীয় বর্ষে থাকতে জলি আপা টিচার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেন। শিক্ষার্থীদের কাছে টেনে নেওয়ায় তার মধ্যে এক ধরণের মাধুর্য ছিল, কম কথা বললেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা খুবই মর্মাহত।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জলি আপার আরেক শিক্ষার্থী সাংবাদিক মাহফুজ মিশু। প্রিয় শিক্ষকের আকস্মিক মৃত্যুতে দুঃখভারাক্রান্ত মিশু জানান, ‘সাংবাদিকতা বিভাগের সকলের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন জলি আপা। যার কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখেছি।’
শিক্ষক হিসেবে কেমন ছিলেন জলি আপা এ প্রশ্নের জবাবে যমুনা টিভির মাহফুজ মিশু বলেন, ‘আপা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন, সংবাদে কাজ করতেন, মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা থাকায় তার ক্লাসগুলো ছিল শিক্ষণীয়। তিনি আমাদের রিপোর্টিং এবং এডিটিং ক্লাস নিতেন।
‘আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগের বর্তমানে যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছেন তাদের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান জলির আপার। তিনি পড়াশুনার বাইরেও আমাদের সঙ্গে অভিভাবকের আচরণ করতেন। আমি নিজেও পড়াশুনা ছাড়াও যেকোন প্রয়োজনে আপার সঙ্গে কথা বলতাম।’
মিশু আরও বলেন, ‘জলির আপার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, তারা উচ্চ শ্রেণীর লোক ছিল, ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ভয়ংকর রকমের স্মার্ট একজন মানুষ।’
শুধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয় সহকর্মীদের কাছেও একই রকম এবং মিশুক মনের অধিকারী ছিলেন আকতার জাহান জলি।
তার সহকর্মী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘জলি শুধু আমার সহকর্মী না, ও ছিলো আমার ছোট বোনের মতো। আমরা একত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি।
‘প্রচণ্ড বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়াও আমার সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগও ছিল। কয়েকদিন আগেও আমার পরিবারের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছিল জলি।’
শুক্রবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তার মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক আকতার জাহান জলির মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, এক দিনেরও বেশী সময় আগে তার মৃত্যু হয়েছে।
পরে তার কক্ষ থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে তিনি প্রেস ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদেও সাংবাদিকতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করা আকতার জাহান জলি।