২০০৮ সালের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অন্যতম প্রধান ভরসা তরুণরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক, তাজ উদ্দিন আহমেদরা তরুণ বয়সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তার আগে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শত্রুর বুলেটে বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তরুণরাই। যুগে যুগে কালে কালে তরুণরাই জাতীর ভাগ্য বিধাতা। তাই তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হবে সবার আগে। তাই বর্তমান সরকারের নেতেৃত্বের অগ্রভাগে দেখা যাচ্ছে এই প্রজন্মের তরুণদের পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে।
শেখ হাসিনার সরকারে তরুণদের আরেক নাম তাজউদ্দীন আহমেদ এর সন্তান সোহেল তাজকে দেখা গেছে। অচীরেই তাকে আবারো হয়তো দেখা যাবে এই সরকারের মন্ত্রী সভায়। এছাড়া তরুণ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং এমপি নাহিম রাজ্জাক দেশে বিদেশে সুনাম বয়ে আনছেন রাজনীতিতে তাদের ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যে বলেছেন- ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবীনদের ভোট বেশি পাবে আওয়ামী লীগ। তাই তরুণ ভোটারদের প্রতিই আস্থা রাখতে হচ্ছে। তরুণদের মাঝে আমরা যে আগ্রহ দেখেছি, যে সহযোগিতা পেয়েছি, তারা যেভাবে আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে, সাড়া দিয়েছে, আমরা এতে খুবই আশাবাদী।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারণায় তরুণদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়ের পরে এক দশক পেরিয়ে তার কতোটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেই হিসাব নিকাশ করার সময় এসেছে? নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে তরুণরা সরকারের কাজে কতোটা সন্তুষ্ট? কিংবা প্রতি বছরের উন্নয়ন প্রকল্প ও বাজেটে তরুণদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার কতোটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেই সমীকরণ মেলানোর সচেষ্টাও করা যেতে পারে। সরকারের বিগত এবং চলমান প্রস্তাবিত বাজেটে তরুণদের স্বাথ সংরক্ষণে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই ফিরিস্তির পর্যালোচনার জোর দাবি রাখে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা কী গবেষণা করেছেন? যে তরুণদের ওপর ভরসা করে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় তাদের কষ্ট বা মানসিকতা বুঝার ক্ষেত্রে কতোটা আগ্রহী হতে দেখা যায় তাদের? শুধু আওয়ামী লীগ নয় বরং সব রাজনৈতিক দলকে নতুন করে তরুণদের আগ্রহ, তারুণ্যের পছন্দ, কর্মসংস্থান, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের বিষয়ে ভাবতে হবে। তরুণদের স্বার্থ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যতো বেশি প্রতিযোগিতা হবে ততোই ভালো। তখন যেখানে তাদের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে সেখানেই তরুণরা ভোট দেবে। এছাড়া তরুণদের বাদ দিয়ে যে কারও ক্ষমতায় আসার পথ অনেকটা কঠিন, তা ক্ষমতাসীনদের কথায় বোঝা যায়।
কিন্তু যাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের এত চিন্তা ভাবনা, সেই তারুণ্যের জন্য এবারের বাজেট কতোটা তরুণবান্ধব? অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন ‘যুগের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে তরুণদের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত সামগ্রী ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিকীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে আমরা উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। উদ্ভাবন ভিত্তিক ব্যক্তি উদ্যোগের বিকাশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থানে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ এছাড়া বিভিন্ন খাতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারের এসব উদ্যোগের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা এবং অনলাইন ভিত্তিক ভার্চুয়াল ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র করের আওতার বাইরে রেখে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তাহলে তরুণরা নির্দিষ্ট কোনো চাকরির পেছনে না ছুটে আরও বেশি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হবে। এক্ষেত্রে তারা চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। তাই চলমান বাজেটের প্রক্রিয়াকে আরও তরুণবান্ধব করতে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা আরও উদ্যোগী হবেন বলে আমরা আশা করি। বাজেট আর্থিক সংস্থান এবং ব্যয়ের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। বাজেটের উদ্দেশ্য খুবই সুনির্দিষ্ট। কোন পরিবারের মাসিক বা বাৎসরিক বাজেট করা হলে তখন গৃহস্বামী বা স্ত্রীর মাথায় সুনির্দিষ্ট কিছু স্বপ্ন থাকে। সাময়িক বা স্বল্পমেয়াদি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য অর্থাৎ বেঁচে থাকা ও দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা, সম্পত্তি ক্রয় ইত্যাদিসহ নানাবিধ বিষয় সেখানে থাকে।
আমাদের বাজেটের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী সেই বিষয়ে প্রথমে স্পষ্ট হতে হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শুনে আমরা যেটা উপলব্ধি করতে পারি তা হলো, স্বল্পমেয়াদে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা আমোদের লক্ষ্য। সাধারণ মানুষের অধিকাংশই অর্থনীতির ছাত্র নন। প্রবৃদ্ধি শব্দটি জণসাধারণের কাছে তাই গোলমেলে মনে হয়। এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- ধরা যাক, কোন পরিবারে কর্তার উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর কর্ত্রীর ৫ ফুট ২ ইঞ্চি আর তাদের দুই সন্তানের ৩ ফুট ২ ইঞ্চি আর ২ ফুট ১ ইঞ্চি হলে এই পরিবারের গড় উচ্চতা হবে সাড়ে ৪ ফুট। এখন কেউ যদি তাদের গড় উচ্চতা ভেবে সাড়ে ৪ ফুট মাপের চারটি পোশাক বানিয়ে এনে তাদেরকে ঈদ উপহার দিলে কি তাই ঘটবে? পরিবারের সবাই কি খুশি হবে? ওই পোশাক কি কেউ পরতে পারবে?
এখন বাংলাদেশে একটি কথা খুবই প্রচলিত আছে আর তা হলো বাংলাদেশেরে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেণ্ড। এই দেশের এখনকার আনুমানিক ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা ৩৫ বছরের নিচে। এই জনগোষ্ঠীর অন্যতম এবং প্রধান চাহিদা কী? চোখ বন্ধ করেই বলা যায়- চাকরি আর কর্মসংস্থান। আমাদের বাজেটের মাপকাঠি ধীরে ধীরে বেকারত্বহীন হয়ে উঠছে। তার উদাহরণ এই বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে তরুণদের কমসংস্থানের দিকে বিশেষ নজরদেয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সফলতা নিভর্র করে এই কর্মসংস্থানের উপরে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে বেকার সমস্যা তো আরও সুগভীর। এই দেশের যুবকরা বিদেশে গণরুমে গাদাগাদি করে থেকে দেশে টাকা পাঠায়। মরু ডিঙিয়ে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে চায়। কাজের খোঁজে তারা নৌকায় বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড বা মালেশিয়ার গহীন জঙ্গলে গণকবরে শেষ পরিণতি বেছে নেয়।
এই পরিস্থিতি বিবেচরনা করে দেশের আগামী প্রজন্মকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দিক নির্দেশনা আছে এবারের বাজেটে। এবারের বাজেটে দেশে বেকার সংখ্যা কত বা এ বাজেট কতজন বেকারের কর্মসংস্থান করতে পারে, তার উল্লেখ আছে। এছাড়া দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ লোক কর্মবাজারে ঢুকছে। তাদের চাকরি ব্যবস্থার পরিকল্পনার ছাপ আছে এবারের বাজেটে। পাশাপাশি প্রযুক্তির জন্য চাকরির বাজার যাতে সংকোচন না হয়- সেই বিষয়েরও গাইড লাইন আছে এই সরকারের শেষ বাজেটে। বাজেটে আছে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, যা ২০১৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে, ফলে দেশে ৬৩ লাখ ও বিদেশে ৫১ লাখ চাকরি সৃষ্টি হয়েছে’ (প্যারা ৩১ বাজেট বক্তৃতা)। ৬৩ লাখ গৃহকর্মী এরই মধ্যে কাজ করছেন। এখানে কর্ম সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর বিদেশে গৃহকর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা আমরা ইদানীং দেখছি। বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশে নারী গৃহকর্মী পাঠায় না। আমাদের দূতাবাস থেকে দরিদ্র ও নির্যাতিত গৃহকর্মীরা যাতে সহযোগিতা পান তার সুরক্ষা রয়েছে বাজেটে।
এ বাজেট যেনো বেপরোয়া চাকরি প্রত্যাশী তরুণের জন্য আশার বাণী হয়ে এসেছে? অনেক তরুণের কাছে হয়তো বাজেট মানে জিনিসের দাম বাড়া বা কমা। অনেকে হয়তো বাজেট পড়েন ভাইভায় জবাব দেয়ার জন্য। অনেকে জানেনও না, কী আছে বাজেটে। কিন্তু তরুণদেরকে সত্যিকার অর্থে জানতে হবে এই বাজেট তাদের। তরুণদের জন্য কী আছে বাজেটে? তারা আমাদের শিল্পের জন্য উপযোগী, এ কথা বলা হয়েছে। কথাটি সত্য। আমাদের দেশে কয়েক কোটি বেকার। কিন্তু শিল্প কারখানা যখন লোক সন্ধান করে তখন উপযুক্ত লোক পায় না। যুবকরা তো প্রচলিত পদ্ধতিতেই শিক্ষা গ্রহণ করছেন। সেটা যদি শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, যুবক কী করে বুঝবেন? শিল্প ও শিক্ষার জাত্যাভিমানের জন্য আমরা কত যুব শক্তি নষ্ট করছি? তাদের কাছ থেকে বেতন ভাতা নিয়ে কত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাসাদ মালিক বনে যাচ্ছে! তাহলে তরুণ কেন চাকরি পান না?
প্রচলিত শিক্ষা থেকে তরুণদের বের করে কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ধাবিত করতে অর্থমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিয়েছেন বাজেটে। তরুণরা কর্মক্ষম। শক্তিতে ভরপুর। সৃজনশীল। যৌবনের ধর্মই উদ্যম, উৎসাহ, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, নতুন কিছু করা। আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের চূড়ায় বসে আছি। এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড স্থায়ী করতে হবে অনেক বছর বড়জোর ৮০-১০০ বছর। আমরা এরই মধ্যে প্রায় ১৮-২০ বছর পেরিয়ে এসেছি। তারপর জনসংখ্যা যাতে বুড়িয়ে না যায়। তখন বরং জনসংখ্যা যাতে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়। তাদের কর্মক্ষমতা কমে না যায়। এই দিকেও বাজেটে নজর দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এই বাজেটে তরুণদের স্বাস্থ্য ব্যয় এবং ভাতা বাড়বে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের উদ্ভব ঘটার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিমালা, অবকাঠামো তৈরি ও যুবসমাজকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন বলে ছক তৈরি করা হয়েছে বাজেটে। সর্বোপরি আমলাতন্ত্রকে নির্দেশনা দিয়ে তরুণদের অগ্রাধিকার স্থাপনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় তার তাগিদ দেখা গেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এই কাজ যত দ্রুত হয় তত ভালো। এখনো কোনো নীতিমালা গ্রহণ করলে তার ফল আসতে পাঁচ-ছয় বছর বা তারও বেশি (সিদ্ধান্তের ধরনভেদে) লাগতে পারে। তাই বাজেটে প্রত্যেক নীতি নেয়ার আগে প্রশ্ন করা উচিত, এ নীতি যুবকদের বেকারত্ব দুর করবে? কিংবা তাদের স্বকর্মসংস্থানে সহায়তা করবে? তারুণ্য আগ্নেয়গিরির মতো। সঠিক পথে ব্যবহার না করতে পারলে বুমেরাং হবে। মাদকাসক্ত হবে। জঙ্গি হবে। ছিনতাই করবে। সমাজ, পরিবার ও দেশের বোঝা হবে। এই সব উপলব্ধির চূড়ান্ত সন্নিবেশ এই বাজেটে দেখে আপ্লুত হতে পারেন দেশের যুব সমাজ এবং নিঃসন্দেহে অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটকে বলা যেতে পারে তরুণ্য বান্ধব বাজেট।
প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ লোক চাকরির বাজারে ঢোকে (প্যারা ২৫-বাজেট বক্তৃতা)। এ তরুণ-তরুণীদের কীভাবে চাকরির ব্যবস্থা হবে- বাজেটে তার দিক নির্দেশনা আছে। আমাদের অনেক উদ্যোক্তা বাসা থেকে ব্যবসা করেন। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুসারে তাদের ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। আমাদের দেশের অনেক নারী উদ্যোক্তা ঘরে বসে এফ-কমার্স বা ফেসবুক কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করেন। তাদের আকার খুব ক্ষুদ্র। ই-কমার্স ব্যবসা লাভজনক হতে অনেক সময় লাগে। কারণ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইট কাঠের দোকানদার। তারা প্রায় একই উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ক্রেতার দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়। যদিও তাদের স্থায়ী ইট কাঠের দোকান নেই, কিন্তু পরিচিতির জন্য প্রচুর ব্যয় করতে হয়। তাদের অনেক পণ্য ফেরত আসে। সেক্ষেত্রে পাঠানো এবং ফেরত আনার খরচ বিক্রেতাকে বহন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে টাকা পেতে দেরি হয়। কিন্তু সরবরহাকারীকে টাকা পরিশোধ করে দিতে হয়।
আপাত দৃষ্টিতে তাই ই-কমার্স ব্যবসা লাভজনক মনে হলেও আদৌ তা নয়। সরকার ৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য করে আবার তুলে নিয়েছে। ধন্যবাদ সরকারকে। উবার ও পাঠাও-এর ওপর ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান লাভজনক হতে অনেক সময় লাগে। দেশে ট্যাক্সি সার্ভিস নেই বললে চলে। সিএনজি চালকরা প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ইচ্ছে হলে যান, ইচ্ছে না হলে যান না। গেলেও মিটারে যান না। ভাড়া অত্যধিক দাবি করেন। অবশ্য এর পেছনে অনেক টাকা ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স পাওয়ার কথা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করান। তাই অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা যাত্রীদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। তদুপরি এ সেবা বিদ্যমান একটি সম্পত্তির অধিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
ফলে নতুন গাড়ি কেনার প্রয়োজন হ্রাস পায়। তাই ভ্যাট বা কর আদায়ের সঙ্গে ব্যবসার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদানও বিবেচনায় নেয়া দরকার। ই-কমার্স, উবার, পাঠাওয়ের মতো স্টার্টআপগুলো বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে। কেউ ভালো করছে। কেউ ফেল করছে। স্টার্টআপ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বা ধারণা নিয়ে শুরু করা ব্যবসা, যা প্রচলিত ব্যবসা গ্রাহককে যেভাবে সেবা দেয়, তাকে পাল্টে দেয়। গ্রাহকের অপূরণীয় কোনো চাহিদা পূরণ করে। যেমন- বিকাশ অতি সহজে গ্রাহকের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়, ডক্টরলা অতি সহজে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দেয়।
বাংলাদেশের অনেক সমস্যা এসব উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে তরুণরা সমাধান করতে পারেন। সরকারও এ-টু-আই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে সেই উদ্দেশে এগোচ্ছে। এসব স্টার্টআপের অর্থায়নের জন্য প্রয়োজন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন ২০১৫ সালে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জন্য বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। কিন্তু দেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পূর্ণোদ্যমে কার্যকর করার জন্য আরো অনেক নীতি-সহায়তা প্রয়োজন। যেমন- ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল নিবন্ধনের জন্য ২ শতাংশ স্টাম্প ডিউটি প্রয়োজন, যা এ শিল্পের জন্য বিশাল বাধাস্বরূপ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ স্টার্টআপের বিশাল চারণভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক বিশ্বখ্যাত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি সেসব স্টার্টআপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে। আমরা উপযুক্ত নীতিমালা ও অবকাঠামো দিলে সহজেই তাদের আকৃষ্ট করতে পারি। সিদ্ধান্ত আমাদের-আমরা কি বর্তমানের ৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে মাতোয়ারা হব, নাকি বিলিয়ন ডলার কোম্পানি গড়ে উঠতে দেব?তারপর তাদের থেকে উপযুক্ত কর আদায় করব। এই সব বিষয়েরও নীতিগত ব্যবস্থার ছাপ দেখা গেছে এবারের বাজেটে। তরুণদের উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেওয়া না হলে বাংলাদেশের উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে না। এজন্য তরুণদের উদ্যোগে অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার ও জামানতের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব বিচেনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেছে সরকার। একই সঙ্গে ব্যবসা শুরু করার খরচ কমানো, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এফডিআই বাড়ানো ও করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাবও ইতিবাচক আছে বাজেটে।
দেশের সব উন্নয়ন ভাবনার কেন্দ্রে রাখতে হবে তরুণ সমাজকে। কারণ তারাই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারিগর। তরুণ উদ্যোক্তাসহ সবার জন্য বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দেশকে এগিয়ে নিতে তরুণ সমাজকে গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে তারা। বাজেট প্রণয়নে উদ্যোক্তাসহ তরুণ সমাজের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বাজেটের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারেও তরুণ সমাজের উন্নয়নের বিষয়গুলো থাকতে হবে। বাজেট তো রয়েছেই, আগামী নির্বাচনেও কোন দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের নিয়ে বেশি কর্মসূচি রাখে তাও দেখার বিষয়।
এই অর্থবছরের বাজেট হয়েছে ন্যায্যতাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক। দেশের সব নাগরিক যাতে সমান সুযোগ পায় সে ব্যবস্থা আছে বাজেটে। সুশাসনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ উন্নয়নে সুশাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকার বড় বাজেট করে বলে অনেকে বলে থাকেন। তবে ইদানীং আর বাজেটকে বড় বলা হচ্ছে না। আমাদের জিডিপি বাড়ছে, অর্থনীতির আকার বাড়ছে। ফলে বাজেট আরও বড় হওয়া দরকার। এছাড়া আরও অনেক ক্ষেত্রে কাঠামো ও আইনগত সংস্কার জরুরি। কারণ সরকার আইনের চাপে জর্জরিত। অনেক কাজ করতে গেলেই আইনের বাধাগুলো চলে আসে। কর কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এনবিআর এবং দুদকের মধ্যে সমন্বয় দরকার। কারণ কর পরিশোধ না করলেই যে সে অপরাধী বিষয়টি তা নয়। দুদককে তা বুঝতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সম্মান দিতে হবে। কোনো অভিযোগ থাকলে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সমাধান করা যেতে পারে।
সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয়ে সমালোচনা আছে। অনেকে বলেন, এতে অলস মানুষ বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সরকার তা মনে করে না। এতে সমাজে ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে সমস্যা আছে। অনেকেই এ ধরনের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় না। বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথ উদ্যোগে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গঠন করে তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করতে পারে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের জন্য বেশ কিছু লক্ষ্য ঠিক করেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক বলছে, ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশ ভাল করছে। ব্যবসা শুরু করার খরচের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে এগিয়ে আছে। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা এখন ব্যবসায়ীরা সহজে পাচ্ছেন। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সেবা। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে বাজেটে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আগামীতে বাড়বে। যে কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য করপোরেট করে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে বাজেটে। যাতে ব্যবসায়ীরা কর থেকে যে ছাড় পাবে তা সক্ষমতা উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারে।
করপোরেট কর হার একবারে কমানো সম্ভব না হলে ধাপে ধাপে কমানো যেতে পারে। পাশাপাশি ট্যাক্স নেট বাড়ানো যেতে পারে। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে কর্মসংস্থান হবে না। সেজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো নিতে হবে। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো না গেলে আগামীতে অনেক সমস্যা তৈরি হবে। এই সব বাধা যাতে অনায়াসে পেরিয়ে যেতে পারে তরুণরা তার ব্যবস্থা করেছেন বাজেটে অর্থমন্ত্রী।
বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার, মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি-এসব খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী আলোচিত। দেশ যে লক্ষ্যে এগোচ্ছে তা অর্জন করতে অবকাঠামো খাতে বছরে দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ দরকার। দেশ থেকে এই পরিমাণ বিনিয়োগ সম্ভব নয়। তাই আইনি জটিলতা বিভিন্ন কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা না আসার পথ বন্ধ করা হয়েছে বাজেটে। বাজেটে ব্যবস্থা নেওয়ায় বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসতে হবে এখন। নীতিগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বাজেটে করার কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। আবার দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ব্যবস্থাও সহজ করা হয়েছে বাজেটে।
বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তারা ব্যাংকে গেলেই জামানত চাওয়া হয়, উদ্যোক্তাদের তো ব্যবসায়িক আইডিয়া ছাড়া আর কিছু নেই। তাহলে তারা তহবিল পাবে কোথায়। তাই বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া ঋণ দানের বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছে বাজেটে। এদিকে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণের সুদহারও কমানো যাচ্ছে না। কারণ আমানতকারীরা নিরাপদে অনেক সুদে বিনিয়োগ করতে পারছেন। ব্যাংক সঞ্চয়পত্রের কম সুদ দিলে আমানতকারীরা কেন আসবে। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার না কমানো হয়েছে এতে উদ্যোক্তারা ১৬ শতাংশ সুদের কমে ঋণ পাবে। আর তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
দেশের ব্যাংকগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করছে। প্রত্যেকটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা আলাদা রেখে তরুণদের অর্থায়ন ব্যবস্থা অাছে বাজেটে। হলমার্কের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকা আটকে যাওয়ার চেয়ে শত শত তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে যদি আটকেও যায়, তাতে দেশের ক্ষতির চেয়ে বরং উন্নতি হবে। এর পাশাপাশি বড় বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হবে। যে দেশের পুঁজিবাজার যত শক্তিশালী, সে দেশের অর্থনীতি তত শক্তিশালী। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করতে হবে। কারণ একক বিনিয়োগের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ। ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড তাদের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এগিয়েছে।
এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড ও সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে-এই সবের পূর্ণাঙ্গ সলিউশন আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বর্তমানে দেশে তরুণ সমাজ, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আকার বড় হচ্ছে। আগামী ১৫ বছর এ অবস্থা থাকবে। যে কারণে তরুণদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার এখনই সময়। এখন শহরে, শহরের বাইরে বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফলে তরুণদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী বাজেটের দুটো দিক আছে। একটি হচ্ছে, এ বাজেট বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট, আর বাজেটের পরপরই জাতীয় নির্বাচন। অন্যটি হচ্ছে দেশ উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা পর্যায়ে রয়েছে; এ যাত্রা সফল করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছু চাপ রয়েছে। সেগুলো ওভারকাম করার একটা উদ্যোগ বাজেটে আছে। আবার নির্বাচনের জন্য কর কাঠামোতে এমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, যাতে পরবর্তী সময়ে চাপ তৈরি হয়। বিশেষ করে করপোরেট কর কমানোর চাপ থাকলেও বিষয়টি পর্যালোচনা ছিল, প্রয়োজনে ধাপে ধাপে কমানো হবে। অন্যান্য কর বিষয়ক সংস্কার বিশেষ করে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ভুলে না গিয়ে কাজেট আলোচনায় তা রাখা হয়েছে যাতে আগামীতে বাস্তবায়ন সহজ হয়। কারিগরি দিকটি এগিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আগামীর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য কী করা দরকার তার একটি রূপরেখা বাজেটে পাওয়া গেছে। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যেসব মন্ত্রণালয় ভালোভাবে বরাদ্দ ব্যয় করেছে, তাদের বেশি বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ বাজেটকে শক্তিশালী করেছে।
সম্প্রতি অনেক অপ্রচলিত খাতে রপ্তানি হচ্ছে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ক কাজের টেন্ডারে অংশ নিচ্ছি। আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজও করছি। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে, উন্নত দেশের কোম্পানিগুলো যে ধরনের দর প্রস্তাব করে তা আমরা পারছি না। এটা দক্ষতা ঘাটতির জন্য হচ্ছে তা নয়, এর অন্যতম কারণ ব্যয়। সরকার যেভাবে আমাদের আয় থেকে কর নেয় তাতে আমরা কোনোভাবেই ব্যয় কমাতে পারি না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআরে গেলে কেউ কথা শুনতে চায় না। কিন্তু অন্যান্য দেশে এ ধরনের আয়ে সরকার কর নেওয়ার পরিবর্তে প্রণোদনা দেয়। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় সরকার এ ধরনের রফতানি আয়ে প্রণোদনা দিয়েছে, এতে করে এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে।
টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ আছে বাজেটে। দেশ এখন এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাচ্ছে, অর্থায়ন খরচ কম হতে হবে। নতুবা এ যাত্রা সহজ হবে না। অর্থায়নের খরচ কমানো না গেলে বড় বিনিয়োগ হবে না। নগদ সহায়তায় অনেক অপব্যবহার হয়। অনেকে রপ্তানি না করেই সহায়তা নেয়। এ জন্য সহায়তার ধরন পাল্টানো হয়েছে বাজেটে। সরকার বিদ্যুৎ বিল বা এ ধরনের ইউটিলিটিতে ছাড় দিয়েছে বাজেটে। এতে প্রকৃত ব্যবহারকারীরা ছাড় পাবে। আবার নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসার খরচ কম হবে। গ্রিন ফিল্ড প্রজেক্টে সরকারের সহায়তা জরুরি। ব্যাংকে দুর্নীতি হচ্ছে, তা থামানো দরকার। নতুবা ব্যাংক ঋণের সুদহার কমবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বাজেটে।
দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। তার সাথে সঙ্গতি রেখে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার বাজেটে। উন্নত দেশগুলোতে জনস্বাস্থ্যেই সরকারের সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম থাকে। এখন অনেক ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করছে, সেখানে ভলান্টারি কার্যক্রমও আছে। এসব কার্যক্রমে সরকারকে সহযোগিতা করবে এই বাজেটের মাধ্যমে। এ খাতে গবেষণা এখন গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকেও নজর দিয়েছে বাজেটে সরকার। এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্যোগ থাকা দরকার। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার জন্য কর ছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছে বাজেটে।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে, তাই সাইবার নিরাপত্তা, নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার ফায়ার ওয়াল ও অন্যান্য মালামাল আমদানিতে শুল্ক আর ইন্টারনেটে ১৫ ভ্যাট কমিয়েছে। আইটি অবকাঠামো স্থাপন করতেও অনেক ব্যয় হচ্ছে। ফাইবার অপটিক্যালসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট আমদানিতে অনেক ডিউটি রয়েছে। এগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের ম্যান্ডেডের সঙ্গে যায় না। আবার আইটি খাত জামানতের অভাবে ঋণ পায় না।
ব্যাংকগুলো জামানত ছাড়া ঋণ দিতে চায়। এ জন্য এ খাতের মেধাস্বত্ব বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে জামানত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। কারণ একজন আইটি জ্ঞানসম্পন্ন কিন্তু তার জমি বা বাড়ি নেই, তাহলে কি সে ব্যবসা করবে না। ইইএফ ফান্ড এখন বন্ধ, এ তহবিলটি দ্রুত চালু করার উদ্যোগ আছে বাজেটে। এ ছাড়া বাজেটে একটি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যেখান থেকে আইটি কোম্পানিগুলো সহজ শর্তে ঋণ পাবে। এ খাতের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল করেও অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে বলে বাজেট থেকে জানা গেছে।
এ খাতের অর্থায়নের ব্যবস্থা না হলে আগামীতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা রোবোটিকসে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এ ছাড়া ইন্টারনেট এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমাসহ দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ইন্টারনেট জড়িয়ে আছে। এ খাতে তাই ভ্যাট কমিয়ে সরকার তরুণদের কাজ করার পথ প্রশস্ত করেছে বাজেটের মাধ্যমে। সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ করলে এই সরকারের তারুণ্যদীপ্ত মনের বহিঃপ্রকাশ ফুঁটে উঠেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। তাই অনায়াসে এ কথা বলা যায়-এই সরকার তারুণ্যের পক্ষের আর তাই তারা ঘোষণা করেছে তরুণ বান্ধব বাজেট।