চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তারুণ্যের জোয়ারে চ্যাম্পিয়ন ‘কৌশলী’ জার্মানি

ক্লদিও ব্রাভো আর স্কুলপড়ুয়া চেহারার কিমিচের ওই মাথার যুদ্ধ পরে ই ক্যানকে দলগত আক্রমণ; দুটি ঘটনা মাত্র। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়। ৩৪ বছরের ‘শান্ত’ ব্রাভো হঠাৎ কেন ২২ বছরের এক বালকের সঙ্গে লাগতে গেলেন। চাপ, হতাশা আর চোখের সামনে স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেখার ক্লান্তি। স্টিনডলের একমাত্র গোলে জার্মানি তরুণ এক দল নিয়ে ১-০ ব্যবধানে কনফেডারেশন্স কাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন হলো ঠিকই, কিন্তু ফুটবল পিপাসীকে অনেক দিন এক চিলিকে মনে রাখতে বাধ্য করে গেল।

এই মনে রাখার কারণ কয়েক রকমের হতে পারে। ম্যাচ শেষে সীমানা রেখা টেনে কেউ বলতেই পারেন ‘খেললো চিলি, জিতলো জার্মানি।’ কথাটা মিথ্যে নয়, কিন্তু অসত্য। এই কথা মেনে নিলে জার্মানির সাইডলাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোককে যে অসম্মান করা হয়। সীমিত সম্পদকে কোন কৌশলে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে হয়, ফুটবলবিশ্বকে সেটা শিখিয়ে গেলেন ওই জোয়াকিম লো।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

জানতেন রক্ষণ তার দুর্বল। তাই ৩-৬-১ ফর্মেশন ঠিক রেখেও শুরুর একাদশে মিডফিল্ডার বেঞ্জামিন হেনরিকসের পরিবর্তে ডেকে পাঠান ডিফেন্ডার মুস্তাফিকে। চিলি যে রক্ষণের ওপর দাঁড়িয়ে ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে, সেই শক্তিশালী পজিশন এদিন চাপের মুখে ধারাবাহিক ভুল পাস দিয়ে গেল।

নিজেদের পরিচিত ফর্মেশন ৪-৩-৩  ধরে রেখে দল সাজান কোচ পিজ্জি। সেমিতে পর্তুগালকে যে দল নিয়ে হারিয়েছিলেন, এদিন সেই দল নিয়েই মাঠে নামেন। গোল হজম করার আগ পর্যন্ত বেশ বোঝা গেছে আক্রমণ নিয়ে অনুশীলনে ছেলেদের বিস্তর পড়ালেখা করিয়েছেন।

সাবধানী জার্মানি শুরুতে একের পর এক আক্রমণ ঠেকাতে থাকে। ম্যাচের পাঁচ মিনিটের মাথায়  তাদের বক্সে দারুণ এক দলগত আক্রমণে ঢুকে পড়ে চিলি। স্টিনডল মাঝমাঠে ডজ খেলে আরানগুইজ বল নিয়ে জার্মানির বক্সের দিকে উঠে আসেন। বিপজ্জনক এই অঞ্চল তখন প্রায় ফাঁকা। কিন্তু তিনি শট না নিয়ে বল দেন ভিদালকে। ভিদাল তালগোল পাকিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন।

১৯ মিনিটের মাথায় আরো একটি ‘প্রায় গোলে’র সুযোগ মাটি হয়ে যায় চিলির। ২০ গজ দূর থেকে ভিদাল গোলে শট নিলে জার্মান কিপার টের স্টেগেন ঠিকমতো ধরতে ব্যর্থ হন। ফিরতি বল যায় গোলের সামনে থাকা সানচেজের কাছে। এত কাছে থেকেও বাইরে মারেন তিনি!

জোয়াকিম লো’র আকাশে হাত। চোখ বিশ্বকাপে।

পরের মিনিটে দিয়াজের হাস্যকর ভুলে পিছিয়ে পড়ে চিলি। বক্সের সামনে ডিফেন্ডারের কাছ থেকে ব্যাকপাস পান। সামনে জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ঋনার। দিয়াজ বল রিসিভ করেই নিজের ভারসাম্য হারান। দ্রুত বলে চলে আসেন ঋনার। কেড়ে নিয়ে একটু সামনে যান। বাঁদিকে অরক্ষিত ছিলেন স্টিনডল।  সেমির নায়ক ক্লদিও ব্রাভো বার ছেড়ে ঋনারকে চার্জ করতে আসেন।  ঋনারও সুযোগ বুঝে স্কয়ার পাসে স্টিনডলকে বল ছাড়েন। তিনি হেসেখেলে বল জালে পাঠান।

৩৬তম মিনিটে লিও গোরেজৎকা দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। রুডি মাঝমাঠ থেকে তাকে ফাঁকায় দেখে বল দেন। গোরেজৎকা বল কাট করে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ব্যাকপোস্টে মাটি কামড়ানো শট নিতে যেয়ে একটুর জন্য বাইরে মারেন। পরবর্তী চার মিনিটের মাথায় ড্রাক্সলার আর গোরেজৎকা আরো দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে আবারও গোরেজৎকা সুযোগ হাতছাড়া করেন। ড্রাক্সলারের কাছে বল পেয়ে এবারও গোলের হাত দুয়েক সামনে থেকে ব্রাভোর শরীরে বল মারেন।

বিরতি থেকে ফিরে চিলি নিজেদের সহজাত খেলা গুছিয়ে আক্রমণে নজর দেয়।  দলকে ডুবিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া দিয়াজকে ৫২ মিনিটের সময় উঠিয়ে নেন চিলির কোচ। তার পরিবর্তে ডিফেন্ডার ভ্যালেন্সিয়াকে নামান।

মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠা জার্মানি দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম বলার মতো আক্রমণ পায় ৫৫তম মিনিটে। গোটা টুর্নামেন্টে নজরকাড়া ড্রাক্সলার বেশ খানিকটা পথ পড়ি দিয়ে চিলির বক্সে ঢুকে পড়েন। বাঁপায়ের শেষ টোকাটা নিজের মতো করতে পারলে চিলি ডুবে যায় তখনই!

৭২তম মিনিটে  বক্সের ভেতর থেকে সানচেজের নেয়া শটের সামনে হঠাৎ উড়ে এসে প্রতিরোধ করেন রুডি। পরের মিনিটে ভিদালের নেয়া বিদ্যুৎ গতির শট বারের উপর দিয়ে গেলে আর্তনাদে ফেটে পড়েন চিলির ‘দুষ্টু বালক’।

আকাশের বুকে সান্ত্বনা খুঁজছেন ভিদাল

শেষ সময়ে চিলি গোলের জন্য হা-হুতাশ করতে থাকে। মিসও হয় সমানতালে। এক পর্যায়ে দলের সবাই মেজাজ হারান। রেফারি কয়েকটি লালকার্ড দেখালে অবাক হওয়ার কিছু থাকতো না। সেই দৃশ্য দেখতে হয়নি চিলিয়ানদের। কিন্তু ঠিকই বুকে পাথরচাপা দিতে হয়েছে একটি সত্যকে মেনে নিয়ে। বল দখলের লড়াইয়ে ৬১ শতাংশ এগিয়ে থেকেও হারতে হলো তাদের।

আর জার্মানি?

জোয়াকিম লো বার্তা দিয়ে গেলেন, আমার ঘরে একে-৪৭ যেমন আছে, আছে পুঁচকে বন্দুকও। বিশ্বকাপ তুমি সাবধান হও!