বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাছ থেকে পোলিও প্রতিষেধক তৈরিতে এক ধরনের তামাক গাছের মাধ্যমে সফল হয়েছেন গবেষকরা যা দারুণ সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের নরফোকের জন ইনিস সেন্টারের একদল গবেষক দাবি করছেন, তারা বিশেষ এক পদ্ধতিতে তামাক গাছের পাতা থেকে পোলিও ভাইরাসের মতো দেখতে ‘অবিকল বস্তু’ উৎপানে সক্ষম হয়েছেন, যা কোন সংক্রমণ ছাড়াই এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। এই উদ্ভাবনকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পোলিও টিকা তৈরির বিকল্প খুঁজে বের করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় এই গবেষণা পরিচালিত হয়। আগে পোলিও আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষের স্থায়ী পক্ষাঘাতের সৃষ্টি হতো।এখন আর এমনটা হয় না। তবে এখনও স্থায়ীভাবে এই রোগের সংক্রমণ রোধ করা যায়নি।
নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তামাক গাছের পাতা দিয়ে শুধু পোলিও ভাইরাসের টিকাই নয়, জিকা কিংবা ইবোলার টিকা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে গবেষকরা দাবি করেছেন। এমনকি সঠিক জেনেটিক কোডের ধারা ব্যবহার করতে পারলে অধিকাংশ ভাইরাসের টিকাই এই প্রযুক্তিতে তৈরি করা সম্ভব। এবং গাছ থেকে গবেষকরা ইতোমধ্যে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এমন এন্টিবডি তৈরি করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসের মতো দেখতে পোলিও ভাইরাসের ‘অবিকল নকল’ হবে এই প্রতিষেধক। বাইরে থেকে একে অনেকটা পোলিও ভাইরাসের মতো দেখালেও নতুন এই প্রতিষেধকের ভিতরটা ফাঁপা থাকবে। সংক্রমণ ছাড়াই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপাদান এই প্রতিষেধকের মধ্যে থাকবে।
জেনেটিক কোড ও বিশেষ ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ মাটিতে বেড়ে ওঠা গাছের পাতাকে পচিয়ে বানানো হবে প্রতিষেধক। এই প্রক্রিয়াটি অনেক সস্তা, সহজ এবং দ্রুত গতি সম্পন্ন। পাশাপাশি এটি রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখবে। এই পদক্ষেপ জিকা ও ইবোলা ভাইরাসের মতো বিশ্বের অনেক অপ্রত্যাশিত রোগের মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।
কি সেই পদ্ধতি?
তামাক গাছের পাতাকে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পোলিও ভাইরাস উৎপাদনের জন্য গবেষকরা সম্পর্কিত এক ধরনের তামাক গাছ ফ্যাক্টরিতে ‘চুরি’ করে আনেন। প্রথমে তামাক গাছটিকে একটি নতুন নির্দেশনায় বেড়ে উঠতে দেন তারা। পোলিও ভাইরাসের বাইরের আকৃতির মতো দেখতে হওয়ার জন্য শুরুতেই একটি জেনেটিক কোড তৈরি করে দেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবে গাছকে সংক্রমণ করে থাকে এমন ভাইরাস ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা হয়।
যে মাটিতে গাঠ বেড়ে ওঠে সেখানকার ব্যাকটেরিয়াতেও নতুন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, যা আগে তামাক গাছ পঁচাতে ব্যবহার করা হতো। গাঁজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে গাছগুলোতে জেনেটিকস কোড অনুযায়ী ভাইরাসের মতো আকৃতির বস্তু সৃষ্টি হয়। গাছের পাতা পঁচানোর জন্য পরে পানির সঙ্গে মেশানো হয়, যা থেকে আসে পোলিও প্রতিষেধক।
এ বিষয়ে জন ইনিস সেন্টারের অধ্যাপক জর্জ লোমোনোসফ বলেন, এগুলো সব অসাধারণ ভাল ‘নকল’ (ভাইরাসের মতো দেখতে)। এটা খুবই সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। নিকট ভবিষ্যতে গাছের ভেতরেই প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করবো।
বর্তমানে রোগটির প্রতিষেধক হিসেবে দুর্বল পোলিওভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে ‘ভ্যাকসিন-ডিরাইভড পোলিও’ ভাইরাসের সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ থাকে, যার ফলে পোলিও ভাইরাসের সম্পূর্ণ লক্ষণগুলো আবার দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্স এন্ড কন্ট্রোলের অধ্যক্ষ ডা. এন্ড্রু ম্যাকাডাম বলেন, বর্তমানে পোলিও টিকা বানাতে অনেক পরিমাণে জীবন্ত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেগুলো থেকে দুর্ঘটনাক্রমে পুর্নউৎপাদিত হয়ে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই থেকে যায়।
এই গবেষণার ফলে আমরা পোলিও রোগের বর্তমান প্রতিষেধকের প্রতিস্থাপনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। যার মাধ্যমে সহজ ও লাভজনক পদ্ধতিতে ভাইরাস সদৃশ বস্তুর উপর ভিত্তি করে প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হবে।