রাজধানীর বনানীতে ন্যাম ভিলেজের একটি বাসায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন ইভান ওই ছাত্রীকে তার বাসায় নিতে কথিত মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলিয়ে দিলেও সেদিন বাসায় তার মা ছিলেন না। আর পরিবারকে জানিয়েই সেদিন ইভানের বাসায় গিয়েছিলেন ওই নির্যাতিত তরুণী।
ঘটনার পর বনানী থানায় ওই ছাত্রীর করা প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদনে-এফঅাইআর এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন ইভানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর পথচারীদের সহায়তায় থানায় চলে যান ওই কলেজছাত্রী।
বাহাউদ্দিন ইভানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এফআরআই-এ বলা হয়, ‘ফেসবুকে পরিচয় হয় ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন ইভানের সঙ্গে। তার সঙ্গে ১১ মাস ধরে ফেইসবুকে বন্ধুত্ব হয়। এ বন্ধুত্বের সূত্র ধরে, দুজনের ঘোরাঘুরি দেখা সাক্ষাত হতো। এ বন্ধুত্বের থেকেই ৪ মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়।
এই সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ০৪/০৭/২০১৭ তারিখে আমাকে আসামী রাত ৯টার দিকে ফোন করে জানায় যে, তার জন্মদিন এবং ওই জন্মদিনে আমাকে তার বাসায় যেতে বলে এবং তার মায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে এবং আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি তার মাকে জানাবে এই বলে জানায়। এরপর টেলিফোনে তার মায়ের পরিচয় দিয়ে একজন মহিলা আমার সঙ্গে কথা বলে এবং আমি তাকে তার মা বলে মনে করি। তারপর আমি আমার আপুর সঙ্গে কথা বলে ওই তারিখে রিক্সাযোগে রাত সাড়ে ১০টায় তার বাসার সামনে পৌঁছালে সে আমাকে রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে যায়।
আমি যাওয়ার পর বাসায় কাউকে দেখতে পাইনি। সে আমাকে তার ঘরে নিয়ে যায়। তার মা কোথায় জানতে চাইলে সে জানায় বাবা-মা অসুস্থ ঘুমিয়ে আছে। জোরে কথা বলা যাবে না, সকাল বেলায় পরিচয় করিয়ে দেবে বলে জানায়। বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোন আলামত দেখিনি। আমি তাই ভয় পাই এবং বাসায় চলে আসতে চাই। কিন্তু সে বাসায় আসতে দেয় না। সে আমাকে রাতের খাবার খাওয়ায় এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। আমি তাকে নিষেধ করলে সে আমাকে একদিন খেলে কিছু হবে না বলে জানায়।
তারপর ০৫/০৭/২০১৭ ইং তারিখে সে আমাকে তার ঘরে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকলে সে রাত সাড়ে তিনটায় আমার ব্যাগ রেখে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ওই ব্যাগের মধ্যে আমার ৩টা ড্রেস, ২টা জিন্স, ১টা কুর্তা, ৩টি মোবাইল চার্জার, সিমকার্ড, মেমরিকার্ড, নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল। তারপর আমি পথচারী ভদ্রলোকের সহায়তায় থানায় আসি।
এই ব্যক্তি আগেও বিবাহের প্রলোভনে আমাকে ধর্ষণ করেছে। আসামী আমাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতো। আমি মুখ খুললে সে তার কাছে থাকা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে এমন হুমকি দিতো। কিছুটা সুস্থ হয়ে এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলে এজহার দিতে দেরি হয়ে গেল।’
গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ তার দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফ এবং গাড়িচালক ও দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ওই ঘটনার মামলা চলার মধ্যেই আবারো ওই এলাকায় একই কায়দায় ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। জানা গেছে, অভিযুক্ত ইভানের বাবা বোরহানউদ্দিন একজন ব্যবসায়ী।