চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মোবাইল-ল্যাপটপে শুল্ক নয়, ইন্টারনেটও হোক ভ্যাট ও শুল্কমুক্ত

বিগত বাজেটগুলোর মতো এবারের বাজেটেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার তথ্য-প্রযুক্তিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সদ্য সাবেক ‍সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার।

পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তি খাতকে উৎসাহিত করতে এবং দেশে উৎপাদিত প্রযুক্তিপণ্যে বিশেষ সুবিধা চান তিনি। ইন্টারনেটের মূল্য সহনশীল করতে শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত করার দাবিও তার।

রাত পোহালেই বাজেট। এবারের বাজেটে দেশের সম্ভাবনাময় তথ্য-প্রযুক্তিখাতে আশা-ভরসার কথাগুলো চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তুলে ধরেছেন মোস্তফা জব্বার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও টেলিকম বিভাগের বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বাড়বে। অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকায় যাবে আশা করছি।’

মোস্তফা জব্বার

দেশের ইন্টারনেট পরিস্থিতির চালচিত্র তুলে ধরে বাজেটে এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব চেয়ে তিনি বলেন: দেশে ইন্টারনেটের কানেকশন বাড়লেও বিদ্যমান শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের চাপে প্রকৃত ব্যবহার বাড়েনি। ইন্টারনেট মানে এখন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ইন্টারনেটের বাড়তি মূল্য এর অন্যতম কারণ। ফলে এবারও আমরা ইন্টারনেট শুল্ক ও ভ্যাট মুক্ত করার দাবি জানাই।

সফটওয়্যার ও সেবাখাত থেকে ২০১৮ সালে এক বিলিয়ন ও ২০২১ সালে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সফটওয়্যার, সেবা ও হার্ডওয়্যার রপ্তানিতে নগদ সহায়তা চান এই তথ্য-প্রযুক্তিবিদ।

তিনি বলেন: বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশাটি হচ্ছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রপ্তানিতে নগদ সহায়তা। গত ২১ অক্টোবর ২০১৬ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি এই দাবিটি তুলে ধরি। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এটি বাস্তবায়নের আশ্বাস পেয়েছিলাম। আমরা এরই মাঝে গত বছর সাতশ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি। ২০১৭ সালে এটি এক বিলিয়ন অতিক্রম করবে। অন্যান্য রপ্তানিখাতগুলো আয়কর রেয়াতের পাশাপাশি নগদ সহায়তা পাচ্ছে। আমরাও সেটি পেতে পারি।

বিদায়ী বাজেটে সব ধরনের কম্পিউটার এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আনুষঙ্গিক বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দুই শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে পাঁচ শতাংশ করা হয়। বিদায়ী বছরে কম্পিউটার মনিটর, ফাইবার অপটিক্স ক্যাবল ইত্যাদির শুল্ক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়।

প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল পণ্য সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ধারণা স্পষ্ট করা দরকার। আমরা আমদানি পর্যায়ে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতকৃত হার্ডওয়্যার ও দেশে উৎপাদিত হয় তেমন সফটওয়্যার পণ্যের শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ এবং ভ্যাট ১০ শতাংশ আরোপ করাকে সমর্থন করি। এই ব্যবস্থার ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

তবে বিদেশ থেকে মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ইত্যাদি ডিজিটাল যন্ত্রের যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানির ওপর কোন শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাশিত নয় তার কাছে।

তিনি বলেন, আমরা দেশে ডিজিটাল পণ্য উৎপাদন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীও এটায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এই ব্যবস্থাটি করতে হবে। দেশীয় পণ্যে কোন স্তরে কোন শুল্ক বা ভ্যাট দেয়া যাবে না এবং দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্পখাতকেও আয়করমুক্ত করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য খুচরা ভ্যাট এবারও সর্বোচ্চ উদ্বেগের বিষয় বলে জানান তিনি।

নতুন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের ত্রুটি তুলে ধরে বিজয় কিবোর্ডের উদ্যোক্তা বলেন: এই প্রকল্পে এখনও বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেশের মুদি দোকানদার থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য যদি কেবল ইংরেজি ব্যবহার করে তবে কাজটি আত্মঘাতী হবে।

এবার সরকার ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেবে। উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের দুই দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার একশ ৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে বিদায়ী অর্থবছরে বাড়তি দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ পেয়েছিলো এ খাত।

আগের অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ছয়শ ২২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এই খাতে বিদায়ী বছরে আইসিটি ডিভিশনের জন্য এক হাজার আটশ ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো এক হাজার দুইশ ১০ কোটি টাকা। বিদায়ী বাজেটে টেলিকম খাতেও বরাদ্দ বেড়েছিল। ও্ই অর্থবছরের জন্য টেলিকম খাতের জন্য দুই হাজার পাঁচশ ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিলো দুই হাজার একশ ১৮ কোটি টাকা।