রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের পর এ নিয়ে ক্ষোভ-পাল্টা ক্ষোভ চলছে। অনেকে বিশেষ করে ডা. আব্দুল্লাহর মতো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় ক্ষুব্ধ। অনেকে বলছেন, ভুল চিকিৎসা যার মাধ্যমেই হোক, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে অনেকে সরব হয়েছেন।
সাংবাদিক রকিবুল শিপন এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন: ডা. আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার অনুরোধ কেন? আর তার বিরুদ্ধে মামলা হলে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থাই বা লজ্জায় পড়ে কিভাবে? কাউকে বেনিফিট অব দ্য ডাউট দেওয়ার তো কোন দরকার নেই। মামলা যেহেতু হয়েছে তার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার অন্তত দুটো কারণে। প্রথমত এখন মামলা তুলে নেওয়া হলে মানুষের মধ্যে একটা বার্তা ছড়াবে যে প্রভাব খাটিয়ে মামলা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। তা চূড়ান্তভাবে ডাক্তারদের প্রতি মানুষের আস্থা আরো তলানিতে নিয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত দেশে ভুল চিকিৎসা এবং রোগীদের হয়রানীর নজির যেমন আছে, তেমনি রোগী ও তাদের স্বজনদের হাতে ডাক্তারদের লাঞ্ছিত হওয়ার নজিরও আছে। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা আসা উচিত। ভুল চিকিৎসা হলে রোগী কি কি ব্যবস্থা নিতে পারবে, ভুল চিকিৎসায় হলে রোগীর মৃত্যু হলে কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকবে; ডাক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করলে রোগী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, অভিযোগ উঠলে তার নিষ্পত্তি হবে কিভাবে, ইত্যাদি বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার হওয়া দরকার।
সবকিছু যেভাবে চলছে এভাবে চলতে পারে না। কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা দাড়ি টানতেই হবে। তবে তা এখনই নয় কেন?
মূল বিতর্ক থেকে সরে এসে যারা মামলার বাদি কিংবা বিবাদি কে, তা নিয়ে টানাটানি করছেন, তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক এবং বিরক্তিকর। শোভনও বটে।
ডাক্তার আমিনুল ইসলাম এ নিয়ে বেশ ক’টি পোস্ট দিয়েছেন। একটি পোস্টে তিনি বলেছেন: ধর্ষকের ভক্ত ডাক্তারের যম= প্রোক্টর সাহেব বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাতে মেয়েদের প্রকাশ্য শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করার প্রয়োজন বোধতো করেই নাই বরং ঘটনাই অস্বীকার করে বসে। অন্যদিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভাংচুরের পর মামলা করতে তিলমাত্র বিলম্বও করে নাই। একই বলে ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম।’
অন্য একটি পোস্টে এ চিকিৎসক বলেন: আসামি টিভির লাইভে আসছেন, সত্যটা তুলে ধরছেন কিন্তু মামলাকারী প্রক্টর লাইভে আসতে সাহস পাচ্ছে না। একাত্তর টিভি ডেকেছিল, বেচারা মুখোমুখি হতে সাহস করেনি, পালিয়ে বেঁচেছে।
অন্যদিকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বলেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়ার মৃত্যু দুঃখজনক। এই বয়সের একটি মেয়ের মৃত্যু যে কাউকে ছুঁয়ে যাবে। তার বন্ধুদেরও নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে হাসপাতালে ভাঙচুর, ডাক্তারদের মারধোর, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার- সব মিলে বিষয়টা বাড়াবাড়ি হয়েছে। ভুল চিকিৎসা হয় না, তা বলছি না, আকছার হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে যে মানের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে সার্টিফিকেটধারী ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা আরো বাড়বে। কিন্তু যাদের দেখে এখনও বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখি, ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ তাদের একজন। আফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় যে ৯ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে, তার এক নম্বরে অাছে ডাঃ আব্দুল্লাহর নাম।
তিনি বলেন: পত্রিকায় দেখলাম, পুলিশ সেন্ট্রাল হাসপাতালের এক পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে, পরে আদালত তাকে জামিন দিয়েছে। বাকি ৮ আসামী নাকি পলাতক। তারমানে ডাঃ আব্দুল্লাহও পলাতক। কী অবিশ্বাস্য! ডাঃ আব্দুল্লাহকে আসামী করা আসলে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থাকেই আসামী করার নামান্তর। আগেই বলেছি, ভুল চিকিৎসা হয়। কিন্তু ডাঃ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধেও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে ভাঙচুর, মারধোর, মামলা করলে আমাদের আমাদের আর ভরসার জায়গা থাকে না। ভুল চিকিৎসায় যেমন রোগী মারা যেতে পারে, তেমনি সঠিক চিকিৎসার পরও মারা যেতে পারে। আফিয়া ডেঙ্গুতে মারা গেছেন না ব্লাড কান্সারে, তার চিকিৎসা ঠিক ছিল না ভুল; সেটা বিচারের ক্ষমতা নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রক্টর, সাংবাদিক বা পুলিশের নেই। ডাঃ আব্দুল্লাহ ভুল করেছিলেন কিনা, সেটা যাচাই করতে পারবেন ডাক্তাররাই। প্রয়োজনে বিএমডিসি বা বিএমএ তদন্ত করুক। কিন্তু অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। এ বি এম আব্দুল্লাহর মত ডাক্তার ভুল চিকিৎসার মামলার আসামী হয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছেন, এটা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার।
সাংবাদিক প্রভাষ আমিন আরো বলেন: * ডাঃ আব্দুল্লাহ পালিয়ে বেরাচ্ছেন, এই কথাটি লেখায় অনেকে অাপত্তি করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো উনি এই মামলার প্রধান আসামী এবং পুলিশের দৃষ্টিতে উনি পলাতক। আমি তাকে অসম্মানিত করার জন্য এটা লিখিনি, শুধু বাস্তবতাটা তুলে ধরেছি।
অনেকে বলছেন, ডাঃ আব্দুল্লাহ আমার পূর্ব পরিচিত বলেই আমি তার পক্ষে লিখেছি। আমি নিশ্চিত করে বলছি, তিনি আমার পূর্ব পরিচিত নন। বছর দশেক আগে রোগী হিসেবে একবার গিয়েছিলাম। কিন্তু ওনার সিরিয়াল পাওয়া অনেক কষ্টকর বলে পরে আর যাইনি।