ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) এলাকায় এক ওষুধ দোকানীর ওপর হামলা চালিয়েছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা। লোহার পাইপের উপর্যপুরি আঘাতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে মাথায় ৮টি সেলাই দেওয়া হয়।
এছাড়া ওই ছাত্রলীগ নেতাকে ফেরাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ঢামেক’র জরুরি বিভাগ সংলগ্ন সেবা ফার্মেসির মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ শহীদুর রব (পেনু)। রোববার রাত আটটায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দোকানের মালিক মোঃ শহীদুর রব (পেনু) জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তার দোকানে কিছু ওষুধ কিনতে আসেন। ওই ওষুধগুলো তার দোকানে ছিল না। তখন ছাত্রলীগের ওই নেতা অন্য জায়গা থেকে ওষুধগুলো নিয়ে আসতে বলে।
দোকান কর্মচারী শুভ তা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি ক্ষেপে যান। একপর্যায়ে মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকেন। তাকে ফেরাতে গেলে দোকান মালিককেও সে লাঞ্ছিত করে।
তিনি বলেন, ‘আমার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার (মুন্সিগঞ্জের সিরজাদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) কথা বললেও সে থামেনি।’ তবে ছাত্রলীগ নেতা আমির হামজার দাবি, সে ওষুধ কিনতে গেলে ওই দোকান কর্মচারী মাকে নিয়ে গালি দিলে তার সঙ্গে হাতাহাতি হয়।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলা শেষে দোকানে তালা লাগিয়ে দেন তারা। আর এই তালার চাবি দেওয়া হয় এস এম হল ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মেহেদী হাসানের কাছে। এর আগে মেহেদীর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। তারা গিয়ে দোকানের তালা খোলানোর ব্যবস্থা করেন এবং ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
আমির হামজা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী। হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান মোল্লা জানান, তিনি এস এম হলের বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসানের কাছ থেকে দোকানের চাবি নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন চ্যানেল আই অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, সংগঠনের গতিশীলতা ও গঠনতান্ত্রিকতার স্বার্থে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ও সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হল ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হাসান ঝণ্টুকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। তবে তাদের সুপারিশের পরেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি।