চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঢাবিতে শুরু তিন দিনব্যাপী ‘প্রথম আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব’

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘প্রথম আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব-২০১৭।’ ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের আয়োজনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আয়োজক দেশ বাংলাদেশ সহ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপাল অ্যাম্বেসির কাউন্সিলর সেক্রেটারি দিল্লী প্রাসাদ আর্চারী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

মাইম অ্যাকশনের মডারেটর ফাদার ড. তপন ডি. রোজারি ‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মূকাভিনেতা মীর লোকমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এম এম মনিরুল আলম, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান সুদীপ চক্রবর্তী, প্রাণ কনফেকশনারী লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং সাখওয়াত আহমেদ, বাংলাদেশ মাইম ফেডারেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার‌্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আন্তর্জাতিক এই উৎসবের প্রশংসা করে বলেন, সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর‌্যায়ে অনেক স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছে, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এমন একটি আন্তর্জাতিক উৎসব আয়োজনের শক্তি অর্জন করেছে। এই আয়োজন বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সংস্কৃতির সুসম্পর্ক স্থাপন করবে। এতে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে এবং দেশের সংস্কৃতি-সভ্যতাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবে।

নেপাল অ্যাম্বেসির কাউন্সিলর সেক্রেটারি দিল্লী প্রাসাদ আর্চারী বলেন, মূকাভিনয় একটি বৈশ্বিক শিল্প। এ্টি এমন একটি শিল্প যার কোন সীমানা নেই। এই শিল্পটি মানুষে মানুষে গভীর সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। যদিও নেপাল এই শিল্পে তেমন পরিচিত নয়। তবে আমরা আন্তর্জাতিক এই উৎসবের মাধ্যমে নতুনভাবে মূকাভিনয় শিল্পকে নিয়ে ভাববো। অসাধারণ এই আয়োজনে নেপালকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজকদের প্রাণভরে ধন্যবাদ জানাই এবং উৎসবের সাফল্য কামনা করছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম ‍কুদ্দুস বলেন, মূকাভিনয়ের সূচনা সভ্যতার শুরুতেই। মানুষ যখন ভাষা জানতো না তখন শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতো। এই শিল্পটি বাংলাদেশে খুব নতুন নয়। পার্থ প্রতীম মজুমদারের হাত ধরে অনেকদূর এগিয়ে গেছে মূকাভিনয়। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মূকাভিনয় দল জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর‌্যায়ের যে উৎসব শুরু করলো তার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি নতুন পালক যুক্ত হলো। গোলাম কুদ্দুস বলেন, এই শিল্প সমাজের সর্বত্র প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষের জীবনে যেকোন সময় মূকাভিনয় প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল হিসেবেও মূকাভিনয় করেছিলেন, যা তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় সহযোগিতা করেছিল।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূকাভিনয় প্রদর্শনী করে দর্শকদের মুগ্ধ করে আয়োজক দল ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন এবং নেপাল সাংস্কৃতিক দল, গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল।

তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এই মূকাভিনয় উৎসবে নেপাল ছাড়াও অংশ নিচ্ছে জাপান, ভারত, শ্রীলংকা ও ভুটানের জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়াও অংশ নিবে বাংলাদেশে মূকাভিনয় চর্চারত দশটি দল যথাক্রমে- মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল (গাজিপুর), জেন্টেলম্যান প্যান্টোমাইম (ঢাকা), জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, মাইম আর্ট (ঢাকা), বেঙ্গল থিয়েটার (ঢাকা), সাইলেন্ট থিয়েটার( চট্টগ্রাম), প্রভাতফেরি (চুয়েট), নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি মাইম সোসাইটি, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি মাইম সোসা্ইটি, মাইম অ্যাকশন ময়মনসিংহ।

প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে থাকবে উৎসবের মূল আয়োজন। এছাড়াও শহীদ মিনার, কার্জন হল, কলাভবন, শাহবাগ সহ পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই থাকবে স্ট্রিট শো। তিন দিনের আয়োজনে থাকছে মূকাভিনয়ের উপর কর্মশালা, সেমিনার, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিযে মূকাভিনয় প্রতিযোগিতা এবং পোস্টার প্রদর্শনী। উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টায় থাকবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দলের মূকাভিনয় প্রদর্শনী।

১৯ এপ্রিল রাত ৯টায় অংশগ্রহণকারী দল এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় উৎসব।

উৎসবটি আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এটম সুইংগাম, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রকমারি ডটকম, ব্রিটিশ কাউন্সিল, সেন্টার ফর ইন্টার রিলিজিয়াস এন্ড ইন্টার কালচারাল ডায়ালগ’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সন্ধ্যার প্রদর্শনী দেখার জন্য অনলাইনে এবং প্রদর্শনীর আগে টিএসসির বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে।

২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি “না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা” স্লোগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর লোকমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে মূকাভিনয় সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন। পথচলার মাত্র ৬ বছরে সংগঠনটি অনেকগুলো জাতীয় মূকাভিনয় উৎসব আয়োজন সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও জেলা শহরে ৩ শ এর অধীক মূকাভিনয় প্রদর্শনী করেছে। একই সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনটি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক এই উৎসব আয়োজন করেছে।

১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে ।