প্রশ্নটি চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে গিয়েছিল খামখেয়ালী সভার অতিথি বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড.অভ্র বসুর কাছে। যিনি সভায় পাঠক্রমে ‘রবীন্দ্রনাথ: বাংলাদেশ ও ভারতে’ বিষয়ে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন শিল্পকলার কনফারেন্স রুমে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনার এর দ্বিতীয় অধিবেশনে। প্রশ্নটি হল, ‘রবীন্দ্রনাথ আলোচনার বিষয় সভায়। সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় কবিগুরুর বিরোধিতার বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের উদ্দেশ্যমূলক আলোচনা চলছে। তার ব্যাপারে কি ভাবছে সভা?’ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব নেন স্বয়ং সভার সভাপতি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আমার ছেলে আমাকে জানায় বিষয়টি। মেজর জেনারেল আবদুল মতিন মূলত তার ছোট একটি লেখায় এ বিতর্কের সুত্রপাত করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল এক সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। অথচ তার জীবন দারুন নিয়মতান্ত্রিক এবং লিপিবদ্ধ। সে সময় তিনি শিলাইদহে অবস্থান করছিলেন। এরকম কোন সভায় অংশ নেওয়ার কোন প্রমাণ নেই। দ্বিতীয়ত পরোক্ষে যুক্তি হল ১৯২১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠার বিরোধি হলে তার ৫ বছরের মাথায় সব ভুলে ১৯২৬ সালে ডিলিট কেন দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘হ্যা, এটা সত্য বাংলাদেশের শিক্ষিত হিন্দু সমাজ এর বিরোধিতা করেছিলেন। বিশেষ করে কলকাতা থেকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। বড় লাটের কাছ থেকে ৪টি প্রফেসর পদ আদায় করে তিনি বিরোধিতার পথ থেকে সরে এসেছিলেন।’
সভায় লিখিত প্রবন্ধে পশ্চিমবঙ্গের পাঠক্রমে রবীন্দ্রনাথের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বস্তরের পাঠ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথ পর্যাপ্ত ভাবে রয়েছে বলে প্রবন্ধে জানানো হয়।
আলোচক কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মঞ্জুলা বসু বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ পাঠের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। আর মানুষ গঠনের শিক্ষায় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা ভীষণ জরুরী।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রাবন্ধিক অভ্র বসু বলেন, শুধু সংকটের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ বিষয়টা সরলীকরণ হয়ে যায়। তবে রবীন্দ্রনাথ যে বাঙ্গালীর মনে স্থায়ী ভাবে রয়ে গেছে তার বড় প্রমাণ যুগে যুগে যে কোন সংকটে তাকে সমকালীন মনে করে নির্ভর করতে হয়।
আলোচনাপর্বে আরো আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র চেয়ার অধ্যাপক ড. মহুয়া মুখোপাধ্যায়।
এর আগে সকালে প্রথম অধিবেশনে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কবীর। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক শ্যামলী আকবর, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শোয়াইব জিবরান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।
শনিবার জাতীয় চিত্রশালা অডিটোরিয়ামে বিকালে তিনজনকে রবীন্দ্রগুণী সম্মাননা জানাবে খামখেয়ালী সভা। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন, অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী, অধ্যাপক মঞ্জুলা বসু ও শিল্পী মিতা হক। তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।