রানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে সামান্য এক দাস আবদুল করিমের বন্ধুত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের কমতি নেই। আজও একটা বড় রহস্য হয়েই আছে বিষয়টি। এবার চলচ্চিত্রের পর্দায় উঠে এসেছে সেই গোপন বন্ধুত্ব। স্টিফেন ফ্রেয়ার্সের পরিচালনায় ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’ ছবিতে দেখা যাবে তাদের জীবনের কিছু অজানা ঘটনা।
রানী ভিক্টোরিয়া ও আবদুল করিমের গল্প নিয়ে ২০১০ সালে ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল: দ্য ট্রু স্টোরি অব দ্য কুইন ক্লোজেস্ট’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন ভারতীয় লেখিকা শ্রাবণী বসু। তার লেখা সেই বইটি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এ চলচ্চিত্র। এতে ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুডি ডেঞ্চ। আর আবদুল করিমের চরিত্রে আলি ফজল।
আলোচিত এ ছবি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ৬ অক্টোবর থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটি দেখতে পাবেন দর্শকরা। ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় ছবির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে। আমন্ত্রিত অতিথিরা এই শো উপভোগ করতে পারবেন বলে জানান স্টার সিনেপ্লেক্স কতৃপক্ষ।
১৮৮৭ সালে সুদর্শন আবদুল করিম যখন প্রথম ইংল্যান্ডে পা রাখেন, তখন তার বয়স ২৪ বছর। সে বছর রানী ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত থেকে যে দু’জন সহকারী নেয়া হয়েছিলো আবদুল করিম ছিলেন তাদের একজন। কিছুদিনের মধ্যেই রানীর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। রানী যখন কোথাও ভ্রমণে যেতেন, তখন তার পরিবার এবং রাজপ্রতিনিধিদের আপত্তি সত্ত্বেও আবদুল করিমকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। রানীর সঙ্গে তার এই অপ্রত্যাশিত সুসম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাজপরিবারের অনেকে। এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন ডাল-পালা মেলে। বিষয়টি অনেকরকমভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছিল।
স্বাভাবিকভাবেই ছবির বিষয়বস্তু বেশ আকর্ষণীয়। বইয়ে বলা হয়েছিল, ভিক্টোরিয়ার এই প্রেমপর্ব তার জীবন বিতর্ক আর সমালোচনায় তোলপাড় করে দিয়েছিল। বিরাট সাম্রাজ্যে আর ক’জনকে এড়িয়েই বা ঘনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব! তাই সাধারণ মানুষের কাছে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সংবাদ। আর প্রকাশ্যে আসতেই পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন রানী।
ভিক্টোরিয়ার পুত্র ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হয়নি। শোনা যায়, রানীর মৃত্যুর পর করিমের সঙ্গে তার প্রেমকাহিনীর সমস্ত প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে ছবি, চিঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন তার ছেলে। কিন্তু সত্যিকে চাপা দেওয়া তো খুব সহজ কাজ নয়। তাদের সম্পর্কের কথা পরবর্তীকালে জানা যায় আবদুল করিমের একটি ডায়েরি থেকে।
প্রসঙ্গত, ১৯০১ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয় আবদুল করিমকে। এর পর বাকি জীবন তিনি আগ্রার কাছে একটি জায়গায় নিভৃতে বসবাস করেন, তার জন্য এ জায়গাটির বন্দোবস্ত করে দিয়ে যান স্বয়ং রানী ভিক্টোরিয়া। ১৯০৯ সালে ৪৬ বছর বয়েসে মৃত্যুবরণ করেন আবদুল করিম।