আগের দিনে সিনেমা নাটকে দেখতাম জমিদার তার প্রতিবাদী প্রজাদের ‘খামোশ’ বলে চুপ করিয়ে দিতেন। হিন্দি ও উর্দু সিনেমাতেও খামোশ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। এবার শুনলাম ড. কামালের খামোশ হুংকার। আগের একটি লেখাতে আমি লিখেছিলাম ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল একটু ঘুরিয়েই জামায়াতের হাত ধরেছেন। আর এবার তিনি সত্যি সত্যিই জামায়াতের আত্মীয় বনে গেলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গিয়েছিলেন জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। প্রাসঙ্গিকভাবেই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন জামায়াত-শিবির নিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন আবার তাদের সাথে নিয়ে রাজনীতি করবেন, নির্বাচন করবেন, সে কারণেই প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্নটি ছিল: জামায়াতের বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? আর এ প্রশ্ন শুনেই ড. কামাল ও তার পারিষদরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। হুংকার ছাড়লেন ড. কামাল ‘খামোশ’। খামোশ বলে শুধু চুপ করিয়ে দেয়াই নয়, হুমকি-ধামকিও দিলেন। অপমান করলেন ওই সাংবাদিককে। বললেন, ‘প্রশ্নটি করতে কত টাকা নিয়েছ? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছো? তোমাকে চিনে রাখব, জেনে রাখব।’ এই হুমকি-ধামকি নির্দিষ্ট ওই সাংবাদিককেই নয় বরং তিনি হুমকি দিয়েছেন গোটা সাংবাদিক সমাজকেই। ‘কত টাকা নিয়েছ?’ এই কথা বলে তিনি অপমান করলেন সাংবাদিকতা পেশাকে।
হঠাৎ করেই ড. কামালের এত জামায়াতপ্রীতি প্রশ্ন জাগায়। সংবিধান প্রণেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টজন ড. কামালের এ কি অধঃপতন! পাকিস্তানের সাথে তার আত্মীয়তা থাকতেই পারে। তাই বলে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে এত সংকোচ? এতদিন মানুষ ভাবত ড.কামাল একজন অসাম্প্রদায়িক, গণতন্ত্রের প্রতি সম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ। তার ওই এক হুংকারেই মানুষের এই ভাবনায় বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে দিলো।
ড. কামাল, মান্না, রবরা নাকি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন। এই তাদের লড়াইয়ের নমুনা। তারা সম্মানিত রাজনীতিক, তাই বলে অন্যকে সম্মান দেবেন না? চুপ করিয়ে দেবেন? যাদের নিজেদের চরিত্রই অগণতান্ত্রিক তারা কীভাবে গণতন্ত্র আনবে?
ড. কামাল এবার তার নিজের চেহারা স্পষ্ট করেছেন। আসলে গণতন্ত্র (তাদের কথিত গণতন্ত্র) ফিরিয়ে আনা মূখ্য নয়, আসল উদ্দেশ্য ক্ষমতার স্বাদ। সেটা যেভাবেই হোক দণ্ডিত তারেকের আনুগত্য মেনেই হোক কিংবা জামায়াতের হাত ধরেই হোক। যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল মস্তানের মতো যেভাবে ধমকালেন, সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে যে কুকথা বললেন তাতে করে তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ তলানিতে গিয়েই ঠেকবে। সাংবাদিকদের কাজই তো প্রশ্ন করা। উত্তর দেয়া তো দূরে থাক, প্রশ্ন শুনেই যদি ড. কামাল অসহিষ্ণু আচরণ করেন তাহলে তার হাতে, তার পারিষদদের হাতে গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ? উনি প্রশ্ন করা সাংবাদিককে চিনে রাখার কথা বলেছেন। তার ধমক শুনে মনে হচ্ছে যদি কোনোদিন ক্ষমতা পান তাহলে গণতন্ত্রের অন্যতম অনুসঙ্গ গণমাধ্যমকে একহাত নিয়েই ছাড়বেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)