আমাদের অনেকের নিজের কিছুই ভালো লাগেনা। এদের নিজের বাড়ি ভালো লাগেনা, ঘর ভালো লাগেনা। বাড়ির পাশের খাল, বিল, নদী, সাগর, পাহাড়, অরণ্য কিছুই ভালো লাগেনা। নিজের দেশ, দশ, বাজার, বন্দর কিছুই ভালো লাগেনা। নিজের ভাষা, সিনেমা, নাটক, গল্প, রূপকথা, মোবাইল ফোন, বেল্ট, মানিব্যাগ, সাইকেল, সাবান, সোডা, পেস্ট, কসমেটিকস, কিছুই ভালো লাগেনা।
নিজের স্যান্ডেল, জুতা, জামা, চাকরি কিছুই আমাদের মন পায়না। দেশের সবুজ-নীলিমা আমাদের ভালো লাগেনা, ভালো লাগে পরদেশের টয়লেট, নিজ-দেশে এক সময়ের বিজ্ঞানী, দূরদেশে আজ দারোয়ান! দেশে থাকতে ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট আর এখন দূরদেশে ট্যাক্সি চালক! দেশের পুলিশ ভালো না, আর্মি ভালো না! তাহলে ভালো টা কি?কী চাই আমরা? অভিযানে গিয়ে নিজের পুলিশ শহীদ হলে আমরা বলি, অদক্ষ! নিজের পুলিশ সফল অভিযান চালালে আমরা বলি “রহস্যময়”।
এই অপরিণামদর্শিতার পরিণাম কী হবে? নিজেরা আইন মানিনা, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কনস্টেবল প্রতি মুহূর্ত ট্র্যাফিক সামলাতে ব্যস্ত তাঁকে সুযোগ পেলেই গালি দিতে ছাড়িনা। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত শিক্ষিত মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সৎ খুঁজতে গেলে নাকাল! এক সময় সন্তানেরা রেজাল্ট নিয়ে এসে ঘরে বসা বাবা-মা’কে জড়িয়ে ধরে চুমু খেত। এখনকার ছেলে-মেয়েরা অপেক্ষা করে কখন বাবা ভোর রাতে প্রশ্ন নিয়ে আসবে! চাকরি দিবে বলে কেউ যদি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ না করে তাহলে আমরা বলি, “এই লোকটা খুব সৎ!! উনি তো টাকাটা মেরেও দিতে পারতেন!” এরপরেও বাংলাদেশ টিকে আছে, ভালোই আছে, এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনসংসারে টিকে থাকার অবিরাম পরিশ্রম এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের ক্লান্তিহীন আস্থা।
সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের এখন বিরাট বিপদ। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের পানি এসে বাংলাদেশের বিশাল অংশের বাড়ি, ঘর, জমি সব ডুবিয়ে দিয়েছে। গবাদিপশু থেকে শুরু করে মানুষ সবার জীবনই এখন জলমগ্ন। যাদুর শহর ঢাকায় বানের পানি পৌছুতে না পারলেও তিলোত্তমা নগরীর বেশিরভাগ মানুষের মনও এখন বানবাসীদের মতই জলমগ্ন। কারণ গ্রামেই আমাদের বাবা-মা থাকেন, চাচা-চাচি থাকেন। এই গ্রামের মানুষই আমাদের শিকড়। গ্রাম ভালো না থাকলে, বাংলাদেশ ভালো থাকেনা। বানের পানি এসে গ্রাম থেকে শহর, সবখানের নরম মনের মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছে।
সবচেয়ে বেশী অশান্তিতে আছে এদেশের তরুণ সমাজ; বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের একটা আলোকিত অংশের। এরা নিজেরা পড়ালেখা, টিউশনি, মনের মানুষের সান্নিধ্য-সব বাদ দিয়ে দিন-রাত চেষ্টা করে চলেছে কীভাবে বানবাসী মানুষের কষ্ট কমানো যায়। কথিত “আইএস” সংকট কাটাতে মহাব্যস্ত সরকারও মানুষের কষ্ট কমাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। যেখানে ভারতে প্রায় শ’খানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বানের পানিতে। এখানেই বাংলাদেশের সরকার এবং মানুষের সম্মিলিত সামর্থ্যের পরিচয় নিহিত।
সমাজের সব বিবেকবান মানুষই কষ্ট পাচ্ছেন; যারা পারছেন, বন্যা-কবলিত জনপদে ছুটে গিয়ে গরিবের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করছেন। যেকোন প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে বিবেকবান মানুষের মনে শান্তি থাকবেনা, রাজনৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ ছুটে গিয়ে দুঃখীর পাশে দাঁড়াবে; দলীয়, ধর্মীয় এবং সামাজিক পার্থক্য ভুলে গিয়ে মানবতার সেবা করার চেষ্টা করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। যারা স্ব-শরীরে দুঃখীর দুঃখ কমাতে কাজ করতে পারেনা, তাদের জন্য আছে সোশ্যাল মিডিয়া। অামাদের জন্য আছে ফেসবুক আর বড় বড় মানুষদের জন্য আছে টুইটার।
ভারতের নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত টুইট করে নিজের আনন্দ-বেদনা প্রকাশ করা শিখে গেছেন! দেশের বিপদে-আপদে মানুষ কতভাবেই না অংশগ্রহণ করে আজকাল। সংকট ব্যবস্থাপনায় বড় বড় মানুষদের দায়দায়িত্বও বেশী। যারা শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান তারা এইরকম বড় মানুষ। বড় অশান্তির সময় তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বড় থাকে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ২০০৬ সালের আগে কেউ নোবেল পুরষ্কার পাননি। জাতি অবশ্য নোবেল পুরষ্কারের জন্য সব কাজ ফেলে মুখ গুমরা করে বসে ছিলনা। স্বাধীনতার সংগ্রামে এদেশের ৩০ লাখকে মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। দু লাখ নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
সে সময়ে দেশের ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, সাংবাদিক, শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতাসহ সব দক্ষ ও সৃজনশীল মানুষকে হত্যা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতাকে প্রায় সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় চার নেতাকে জেলখানার ভেতরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের হত্যারযজ্ঞ এখনো চলছে।
এতকিছুর পরেও দেশ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে চলেছে। আবার যতখানি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সাংস্কৃতিকভাবে ততখানিই বোধ হয় অবনমন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে এপ্লাস বাড়ছে, সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে, বক ধার্মিকদের সংখ্যা বাড়ছে, ধর্ম আর দুর্নীতির সহাবস্থান দিন দিন পাকাপোক্ত হচ্ছে! বানের পানি একদিন কমে যাবে, কিন্তু অশান্তির ঢেউয়ের তোড় কমবে সে নিশ্চয়তা এখন দেয়া যাচ্ছেনা। স্বাধীন দেশে কত কঠিন সময় গেছে আমাদের! এই সেদিনও পেট্রোল ঢেলে বাসভর্তি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। একদিন নয়, দুদিন নয়, দিনের পর দিন।
একেকটা ক্রাইসিস একেক মাত্রার। মানুষ যখন ভাবল যাক এবার বোধহয় টেকসই শান্তি আসবে, তখনই বিভ্রান্ত ছেলে-মেয়েদের একটা দল জীবন্ত মানুষকে জবাই করে হত্যা করে গুলশানকে পরিণত করেছে এক রক্ত উপত্যকায়। ঈদের নামাজে এদের আরেকটা দল বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। বাংলাদেশ যেন আশা-নিরাশার দোলাচলে ভাসমান এক ভেলা। এই ভেলা এখনো ভাসমান, চলছে। সবাই যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে ডুবেও যেতে পারে। যাইহোক, নোবেল পুরষ্কারের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
ছোটবেলায় যখন নোবেল বিজয়ীদের নাম পত্রিকায় পড়তাম, শুধু পড়তাম না, বিজয়ীর নাম, ছবিতে হাত বুলিয়ে মুগ্ধ হওয়ার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে শান্তি এবং সাহিত্যে যারা নোবেল পুরষ্কার পেতেন, ওনাদেরকে মনে হত দেবতা। কত বড় মানুষ তারা! নোবেল জিতেছেন! অর্থনীতি, বিজ্ঞানের বিষয়ে আমি তেমন বুঝিনা; কিন্তু সাহিত্য ও শান্তির বিষয় দুটোর তাৎপর্যবোঝার তাকত আমি বহু আগেই অর্জন করেছি। সেই আমি যখন দেখলাম ২০০৬ সালে আমার দেশেরই একজন মানুষ নোবেল পুরষ্কার অর্জন (?) করেছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই খুশিতে আর মুগ্ধতায় আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আমি অজ্ঞান হইনি! প্রথম আলো পত্রিকায় টাইটানিকের নায়ক-নায়িকার অনুকরণে এই নোবেল বিজয়ীর দু হাত প্রসারিত ছবি দেখেও আমার জ্ঞান লোপ পায়নি। আমি নিজেকেই প্রশ্ন করেছি, ঘটনা কী? আমি কি নির্বোধ? নাকি পরশ্রীকাতর? ১০ বছর পরে এসে মনে হচ্ছে, আমার সেই সময়কার অনুভূতি, অনুধাবন সঠিক ছিল। শান্তিতে পুরষ্কার তিনিই জিতবেন যিনি শান্তি কায়েম করতে সক্ষম হবেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে শান্তি দেন, স্ত্রী স্বামীকে পুরষ্কার দিবেন, ছাত্র যদি শিক্ষককে শান্তি দেন তাহলে শিক্ষক ছাত্রকে পুরস্কৃত করবেন। তদ্রুপ সমাজে শান্তি স্থাপন করলে সমাজ শান্তিস্থাপনকারীকে পুরস্কার দিবেন। কাজের কাজ না করে কেউ যদি কোন পুরষ্কার পান তাহলে সেখানে সন্দেহের উদ্রেক হবেই। আর সেই পুরষ্কার যদি হয় নোবেল, তাহলে তো সচেতন মস্তিষ্কে বিরাট সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া উচিত।
দেশে যখন পেট্রোল বোমা মেরে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়ানো হচ্ছিল তখনও আমরা কোন বক্তৃতা, বিবৃতি শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর পাইনি। এই সেদিন যখন গুলশানে বিদেশী মেহমানদের জবাই করে হত্যা করা হল, তখনো তিনি খামোশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে উনার কোন বক্তৃতা, বিবৃতি নাই। দেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী শহীদ দিবস, ভাষা শহীদ, দিবস-কোন কিছুতেই উনার কোন উপস্থিতি নাই। জাতির জনকের জন্মদিন কিংবা জাতীয় শোক দিবসেও উনার কোন তৎপরতা নজরে আসেনা। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন ব্লকের সাথে পাকিস্তান ও জামাতে ইসলামীর যুগলবন্ধন, ৭১ এ তাদের গণহত্যা কোন কিছুতেই এই নোবেল বিজয়ীর কোন বিরোধী অবস্থান নেই। তাহলে কি সাম্প্রতিক কালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেয়া আসলে নির্ভর করে কে কোন ব্লকের তার উপর?
আরও কিছু নাম বললে বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যেমন মিয়ানমারের অং সান সুকি কিংবা তিব্বতের দালাইলামা। তিব্বত প্রশ্নে দালাইলামার চীন বিরোধী অবস্থান, মিয়ানমারে অং সান সুকির চীনের আশীর্বাদপুষ্ট সামরিক জোট বিরোধী অবস্থান-এসব উদাহরণ সামনে আসলে শান্তির পুরষ্কারের সতীত্ব নিয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। ইরানের সরকার বিরোধী শিরিন এবাদিকেও নোবেল দেয়া হয়েছে। আরেকটা উদাহরণ পাকিস্তানের মালালা ইউসুফ জাই। তালেবান তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, এরপরেও তিনি নারী শিক্ষার পক্ষে লড়ে যাচ্ছেন, এই জন্য তাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। কিন্তু এই তালেবান সৃষ্টি করেছে কে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্ররে নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী নিজ হাতে অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে এই তালেবান সৃষ্টি করেছিল সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। তালেবান গুলি করে মালালা কে মারতে চেয়েছিল আর ন্যাটো বাহিনী যে মনুষ্যবিহীন বিমান দিয়ে তালেবান দমনের নামে শত শত বেসামরিক মানুষ মারছে তার খবরকে নেবে? মার্কিন বাহিনী ইরাকে, আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। লিবিয়া, সিরিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে সরকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে ঐ দেশ দুটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
আজকে অভিবাসী সঙ্কটের কথা বলা হয়। এই অভিবাসীদের দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কারা? নব্য প্রত্যয় ‘আইএস” এর অস্ত্র, অর্থ আসে কোত্থেকে? আইএস এর হামলার খবর সবার আগে ওয়াশিংটনে যায় কীভাবে? সাইট ইন্টিলিজেন্স কার প্রতিষ্ঠান? উপরোক্ত কোন বিষয়েই আমাদের এই শান্তি পুরষ্কার বিজয়ীদের কোন প্রশ্ন নাই। ফিলিস্থিন কিংবা কাশ্মীরে শান্তিকামী মানুষদের প্রায় প্রতিদিন গুলি করে হত্যার বিষয়ে উনাদের কোন বিবৃতি চোখে পড়েনা। একবার তো আমরা দেখলাম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেই নোবেল পুরষ্কার দিয়ে দেয়া হল।
আমাদের নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী ব্যক্তি কেন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেলেন, এর উত্তর আমি বহুজনে জিজ্ঞেস করেছি, পাইনি। সবাই খালি বলে “ড. ইউনুস আমাদের গর্ব’। আমি বলি গর্ববোধ করেন অসুবিধা নাই, আমাকে বুঝান কেন তাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়া হল। উত্তর দিতে পারেনা। বাধ্য হয়ে আমি গেলাম নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে। সেখানে লেখা আছে, “The Norwegian Nobel Committee has decided to award the Nobel Peace Prize for 2006, divided into two equal parts, to Muhammad Yunus and Grameen Bank for their efforts to create economic and social development from below. Lasting peace cannot be achieved unless large population groups find ways in which to break out of poverty. Micro-credit is one such means. Development from below also serves to advance democracy and human rights.”
অর্থাৎ ক্ষুদ্র ঋণের বণ্টন এবং তার যথাযথ ব্যবহার করে দারিদ্র-বিমোচন করে সমাজে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে মোহাম্মদ ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংক এর প্রয়াসের জন্য নোবেল কমিটি তাদেরকে ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত করার সিদ্দান্ত নেয়। ক্ষুদ্র ঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা যদি অর্থনীতির ইউনিক কোন তত্ত্ব হয়ে থাকে তাহলে তাকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার দেয়া যেত। আমার ধারণা এসব ধারণা অর্থনীতির নতুন কোন বিষয় নয়। ফলে তাকে অর্থনীতিতে পুরষ্কার দেয়া যায়নি। আর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার তখনি পাবেন যখন তিনি একটা রাষ্ট্র থেকে, বড় সমাজ থেকে কিংবা বিশাল সংখ্যক মানুষের জীবন থেকে দারিদ্র দূর করতে পারবেন। আমাদের কাছে এমন অনেক প্রমাণ আছে যে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে গরিব আরও গরিব হয়েছে। উপরন্তু দারিদ্রের সাথে যোগ হয়েছে ঋণদাতার অত্যাচার, নির্যাতন।
ব্রিটিশ আমল কিংবা পাকিস্তান আমলের অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক শোষণ দূর করতে যারা আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন শান্তি পুরষ্কার তো তাদের পাওয়া উচিত কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশে যারা শুরু থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাড় করিয়েছেন তাদের পাওয়া উচিত এই পুরষ্কার। তাহলে ইউনুস সাহেবকে তাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হল কেন? আবার কেনইবা তিনি সুদূর ব্রাজিলে অলিম্পিকের মশাল নিয়ে দৌড়ালেন এই শেষ বয়সে?
আমার বিশ্লেষণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে তাদের সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা শুরু, বৃদ্ধি এবং আসন গেড়ে বসার জন্য দুই ধরণের শক্তি তৈরি করে। একটা ধর্মাশ্রয়ী, যেমন বাংলাদেশের জামাতে ইসলাম কিংবা তুরস্ক-মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড ; অন্যটা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লেবাসধারী তথাকথিত ‘গণতন্ত্রকামী’ শক্তি। এই ধর্মাশ্রয়ী এবং “সুশীল সমাজ” ভিন্ন স্টাইলে হলেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে তাদের স্বীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।
ইউনুস সাহেব হলেন বাংলাদেশের এইধরণের “গণতন্ত্রকামী” শক্তির স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক লিডার। উনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির এম্বাসেডর হয়ে কাজ করছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন উনি দেশের বন্যাকবলিত মানুষকে ফেলে কেন ব্রাজিলে অলিম্পিকের মশাল ধরলেন?উত্তরটা খুব কঠিন নয়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া কিংবা কিউবা মিলে যে বিশাল মার্কিনবিরোধী অঞ্চল সেখানে পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের একজন এজেন্ট দরকার। অলিম্পিক কমিটিতে প্রভাব খাটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই কাজটাই করেছে ইউনুস সাহেবকে অলিম্পিকের মশাল ধরার ব্যবস্থা করে দিয়ে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)