কার্ডভিত্তিক লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের পর ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ অর্থাৎ পুরানো প্রযুক্তির কার্ড ইস্যু না করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছিল, চলতি বছরের জুনের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত তথা দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
কিন্তু এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রচলিত ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত কার্ডের তুলনায় চিপযুক্ত কার্ড বেশি নিরাপদ। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডের পেছনে কালো রঙের যে ফিতা বা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে, তাতে গোপনীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
প্রতারকরা স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে এ ধরনের কার্ডের তথ্য চুরি এবং তা দিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারে। আর চিপযুক্ত কার্ডের তথ্য সংরক্ষিত থাকে কম্পিউটার মাইক্রো চিপে। স্কিমিং ডিভাইস কোনোভাবে এ ধরনের কার্ড থেকে তথ্য চুরি করতে পারে না। যে কারণে বিশ্বব্যাপী এখন চিপভিত্তিক কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
এ বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা সব ব্র্যান্ডের কার্ড চিপ ও পিনযুক্ত হতে হবে। ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত সব কার্ড ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চিপভিত্তিক করতে হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব কার্ডের লেনদেন অবকাঠামো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পিসিআই ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফাইড করতে হবে।
এ ছাড়া কার্ডভিত্তিক সব ধরনের লেনদেনের তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। আর এজন্য নতুনভাবে স্থাপিত সব এটিএম বুথ বাধ্যতামূলকভাবে চিপ কার্ড পরিচালনার প্রযুক্তি, এন্টি স্কিমিং প্রযুক্তি, পিন গার্ড এবং এনক্রিপ্টেড পিন প্যাড সংবলিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আগে স্থাপিত এটিএম বুথ এসব প্রযুক্তি সংবলিত করার জন্য গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিন্তু অনেক ব্যাংক এখনও আগের এটিএম বুথ সরিয়ে নতুন প্রযুক্তির বুথ বসাতে সক্ষম হয়নি। যে কারণে চিপ প্রযুক্তির কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি। তাই নতুন করে আবারও সময় বাড়ানো হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার। এসব কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় ১৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। ১০ লাখ ৩২ হাজার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৩ কোটি টাকা।
আর এক লাখ ৭৪ হাজার প্রিপেইড কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।