একটা সময় ছিলো বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের মধ্যে দেখা হওয়াটাই অসম্ভব ছিলো। এখন দিন পাল্টেছে, পাল্টেছে যুগ। এখনো ভারতে বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছাড়াই বিয়ে করার প্রথাটা সেভাবে সামনে আসেনি। তবুও একটা আমূল পরিবর্তন চলে আসছে ডেটিং সাইটগুলোর কল্যাণে।
সাম্প্রতিকসময়ে ভারতে ডেটিং অ্যাপসগুলো বেশ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ভারতের প্রায় ১০ লাখ মানুষ তাদের স্মার্টফোনে কয়েক ডজন ডেটিং অ্যাপসের মধ্যে কোনো না কোনোটি ডাউনলোড করেই রেখেছে।
আর ফলাফলটাওতো মনে রাখার মতো। ভারতের ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন একই সাথে পশ্চিমা ধ্যানধারণা যেমন গ্রহণ করছে তেমন পশ্চিমা স্ক্যান্ডালগুলোতে নিজেকে জড়াতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না।
২৪ বছরের এক ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাগর দত্ত বলেন, আমি ভাবতেই পারিনি ভারতের মতো দেশে কেউ রাজি হবে শুধু মাত্র ছবি দেখে কারো সাথে কথা বলতে। আমি অন্তত বিশজন মানুষের সাথে দেখা করেছি। তাদের কেউ মেয়ে আবার কেউ ছেলে।
অ্যাপস ডেভেলপাররা বলছেন, ভারতে তাদের কাজটা বেশ ভালোই চলছে। পুরো ভারতে এখন উ, থ্রিল, ট্রুলিম্যাডলি, হিচআপ এবং দেশিক্রাশের মতো সাইটগুলোর বেশ রমরমা ব্যবসা।
ট্রুলিম্যাডলি অ্যাপসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শচীন ভাটিয়া বলেন, ভারতের মানুষ এখনো অনেক রক্ষণশীল। ডেটিংটাকে এখনো এখানে সামাজিক ট্যাবু হিসেবেই দেখা হয়।
তবে ভারতে এখন গণধর্ষণ বা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রাও বেড়ে গেছে, এসব অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যাচাই-বাছাই করে নেয়া, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যাপারটি খুবই জরুরী। সে কারণে এসব ব্যাপারে সবগুলো অ্যাপস প্রতিষ্ঠাতাই খুব বেশি সচেতন।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই ট্রুলিম্যাডলির মতো সাইটে আগে ছেলেদের ছবি দিতে হয়, পাসপোর্টের কপি দিতে হয়। দিতে হয় সরকারি আইডি কার্ডের কপিও। যেসব ছেলেরা বিবাহিত এবং সিগারেট বা বিয়ারের বোতল হাতে ছবি পোস্ট করে তাদের অংশগ্রহণও প্রত্যাখ্যান করা হয়। ছেলেদের চেহারা দেখেও বিবেচনা করা হয়। তবুও এই অ্যাপস ব্যবহারকারীর ৬৫ শতাংশই ছেলে।
মেয়েরাও এই অ্যাপসের ব্যবহারকে সুবিধা হিসেবেই দেখছে। কারণ এই অ্যাপসের মাধ্যমেই তারা এমন কিছু পুরুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যাদের সাথে অফিস বা আর কোনো উপায়েই দেখা হওয়ার সুযোগ ছিলো না।
১৯ বছর বয়সী অনিন্দিতা মালহোত্রার কথাও একই রকম। অ্যাপস খুলতেই আমি কয়েকজনের কমপ্লিমেন্ট পাই। এটা আমাকে অনেক আত্নবিশ্বাসীও করে। কিন্তু বিয়ের জন্য এই অ্যাপসের উপর মোটেও নির্ভর করতে চান না তিনি। বলেন, আমি চাই আমার অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হোক। নিজের পছন্দের উপর আমার মোটেও আস্থা নেই। তাই আমার জন্য কাউকে খোঁজার দায়িত্বটা মায়ের হাতেই দিয়ে দিয়েছি।