ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিনই যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেই পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীও যখন জানতে চেয়েছেন: ‘প্রাণঘাতী এডিস মশা প্রতিরোধে কে কী করছে?’, এই অবস্থায় এলিট মশাতত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য।
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি সেমিনারে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন: দেশ যত উন্নত হবে মানুষের সমস্যা তত বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত সে দেশে তত রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু এলিট শ্রেণির একটি মশা। এ মশা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা শহরে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে তখনই এ দেশে ডেঙ্গু এসেছে। মানুষের যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে তত বেশি নানা রোগে আক্রান্ত হবে।’
দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু আসন্ন কোরবানির ঈদে জনস্বাস্থ্যের শঙ্কা বাড়ালেও প্রতিমন্ত্রী কোন বিবেচনায় এমন বক্তব্য দিতে পারেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। অথচ ডেঙ্গু নির্মূলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অপরিসীম। এমন সংকটে নিজের কাজের দিকে দৃষ্টি দেয়ার বদলে তার এমন মন্তব্যে আমরা হতবাক।
ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ আকার ধারণের শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও এ নিয়ে বেফাঁস কথাবার্তাও কম হয়নি। এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে কথা না বলে কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছেন: আমরা অনেক সময় দায়িত্বহীন কথা বলে থাকি। সকলের দায়িত্বশীল কথা বলা উচিত। ডেঙ্গুকে সহজভাবে নেওয়ার উপায় নেই। অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমরা যে নিজেদের দায়িত্ব অপেক্ষা করব এটারও কোনো সুযোগ নেই। যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে তাই কথা না বলে যার যার কাজে মনোনিবেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং দলীয় সাধারণ সম্পাদকের অনুরোধ সত্ত্বেও বেফাঁস কথাবার্তা যে কমেনি স্বপন ভট্টাচার্যের কথায় তা লক্ষণীয়। এ ধরনের কথাবার্তা শোকার্ত জনগণকে আরও ব্যথিত করবে বলেই আমরা মনে করি। এই মুহূর্তে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা যে ভালো ফল বয়ে আনবে না তাও সংশ্লিষ্টদের বুঝা দরকার। এছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা যে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কখনোই এ ধরনের মন্তব্য কাম্য নয়। এখনই এ ধরনের কথাবার্তার লাগাম টেনে না ধরলে সংকট মোকাবিলায় সদিচ্ছার পরও সরকারের জন্য তা হিতে বিপরীত হতে পারে।