ডিস ও ইন্টারনেটের সিন্ডিকেট ব্যবসায় আব্দুর রাজ্জাক লিপু ওরফে বাবু (৩০) খুন হন বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জাগরণী ক্লাবের সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্বৃত্তরা মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ পরে এসেছিল, কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে ১ মিনিটের বেশি সময় নেয়নি তারা।
নিউ ম্যাক্স ক্যাবলস নামে ডিস ও ইন্টারনেটের বিজনেস করত বাবু, তার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন উজ্জ্বল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দক্ষিণ বাড্ডার জাগরণী ক্লাবে গিয়ে পুলিশি নিরাপত্তা লক্ষ্য করা যায়, ঘটনাস্থল বাঁশ দিয়ে ঘেরা, তার ভেতর মাটিতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ রয়েছে।
জাগরণী ক্লাবের ম্যানেজার মো. জামাল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বুধবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ওই সময় আমি ক্লাবে ছিলাম না।
জাগরণী ক্লাবের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্লাবের আশেপাশে মোট ৯টি ক্লোসড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রয়েছে, ক্লাবের সামনের রাস্তায় তিনটি, ক্লাবের গেইটে একটি, ক্লাবের ভেতরে তিনটি, ক্লাবের পেছনের রাস্তায় দুটি ক্যামেরা রয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালের ৩ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাইয়ান ওরফে রাহিন (৩০) কে জাগরণী ক্লাবের ভেতর খুন করে একদল দুর্বৃত্ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাগরণী ক্লাবের সংশ্লিষ্ট আরেকজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যে শাফায়াত নিহত হন তার ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতে পারত। তাহলে আজ বাবু’র মরদেহ দেখতে হতো না।
শাফায়াত ছাত্রলীগ নেতা রাহিন হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন: বাড্ডার ফোর মার্ডার থেকে শুরু করে শাফায়াতের বিরুদ্ধে নয়টিরও বেশি হত্যা মামলা ছিল।
জানা যায়, বুধবার রাতে জাগরণী ক্লাবে আড্ডা দিতেই এসেছিল বাবু। এসময় বাবু, রতন, উজ্জ্বল, টুটুলও ছিল।
তবে একটি সূত্র চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছে যে, দুর্বৃত্তদের প্রধান টার্গেট ছিল রতন আর উজ্জ্বল। দুর্বৃত্তরা ঢুকেই বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এরপর রতন, উজ্জ্বলকেও টার্গেট করে গুলি করলে সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। যে গুলির দাগ গুলো ক্লাবের দেয়ালে রয়েছে।
কিলিং মিশন শেষ করে দুর্বৃত্তরা বাইকে করে যাওয়ার সময় তাদের বাইকের স্টার্ট নষ্ট হয়ে যায়, এছাড়াও ওই সময় গুলির শব্দে এলাকাবাসী সহ বাড্ডা ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর শরীফ দীপুর নেতৃত্বে একদল কর্মীরা মধ্য বাড্ডা চেয়ারম্যান বাড়ি রোডের মুক্তিযোদ্ধা স্মরণীর একটি গলির মোড় থেকে তিনজন দুর্বৃত্তকে ধরে ফেলে। পরে তাদের পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসার আধিপত্য নিয়েই বাবুকে খুন করা হয় বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত বাবুর ময়না তদন্তের সময় মরদেহ থেকে ৯টি বুলেট বের করে চিকিৎসকরা। বাবুর শরীরের বিভিন্ন অংশে মাথায়, চোখের নীচে, পেটে ও বুকে গুলিগুলো বিদ্ধ হয়।
এছাড়াও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় রাতেই আমরা তিনজন দুর্বৃত্তদের আমরা আটক করি। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে ডিবি পুলিশ শাফায়েত নামে একজনকে নিয়ে আফতাব নগরে অভিযানে গেলে সেখানেই তার সহযোগীদের সঙ্গে গোলাগুলির হয় পুলিশের। গোলাগুলির এক পর্যায়ে বন্দুকযুদ্ধে রানা গুরুতর আহত হয়। ভোর ৫টার দিকে শাফায়াতকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।