এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির প্রতি ডজন ডিমে দাম বেড়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। গত মাসে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়।
ব্যবসায়ী বলছেন, রমজানে ডিমের চাহিদা কম থাকায় তখন দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু ঈদের পর ডিমের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।
আর উৎপাদনকারীরা বলছে, দাম বাড়লেও খামারিদের জন্য এটাই ন্যায্য দর। কারণ দাম কমে যাওয়ায় সম্প্রতি খামারিরা লোকসানে পড়েছিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজারে কয়েকজন ডিম ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩ টাকা করে। অর্থাৎ হালিতে বেড়েছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা। সে হিসেবে ডজনে বেড়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মতো।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিম বেশি খেয়ে থাকে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কিন্তু বর্তমানে সবজি, মাছ ও মাংসের দাম বেশি হওয়ায় চাপ বাড়ছে ডিমে। তাই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে। তবে দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতাদের কোনও হাত নেই বলে জানান তারা।
কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পাইকাররা দাম বাড়ালে খুচরা পর্যায়ে বাড়ে। তাই দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি পাইকারদের উপর নির্ভর করে।
তবে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মুরগির খামারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টিতে ডিমের উৎপাদনও কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তাই চাহিদার তুলনায় ডিম সরবরাহ কম। সে কারণে দাম বেড়েছে। তবে দাম বেড়ে বর্তমানে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে খামারিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে বলে জানান তারা।
তেজগাঁও বহুমুখি ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক কাদির খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গত বছর ডিমের দাম অনেক কম ছিল। সেসময় ব্যবসায়ী ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি তখন অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ডিমের উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেজন্য ডিমের দাম বেড়েছে।
“তবে এখন যে দাম রয়েছে সেটাই ন্যায্য দাম। কারণ এর নিচে দাম নেমে গেলে আবারও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
খামারি কাদির খান বলেন, মুরগীর খাদ্য উৎপাদনকারীরা উৎসা দিয়ে খামারিদের দিয়ে মুরগীর খামার সংখ্যা বাড়িয়েছে। তাদের প্ররোচণায় অনেককে এই ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মুরগী উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অনেক খামারি লোকসানে পড়েছে। কিন্তু খাদ্য ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা অর্থ ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ডিমের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৬৯৪ কোটি ১৬ লাখ পিসের। প্রতিবছর ডিম উৎপাদন হয় ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৩১ লাখ পিস। এ হিসাবে বছরে চাহিদার তুলনায় ২শ কোটি ৮৫ লাখ পিস ডিমের ঘাটতি রয়েছে।
এই অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। যা গত ৬ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৫৭৪ কোটি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে প্রতি হালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে এ দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। ২০১৭ সালে আবার তা কমে ৩২ টাকায় নেমে আসে।
তবে এই দর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। কিন্তু জুলাইতে ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে ডিমের হালি।