কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডলি জহুর। মঞ্চ, টিভি নাটক, চলচ্চিত্র অভিনয়ের সব ক্ষেত্রেই তার বিচরণ। নব্বই দশকের প্রথমদিকে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ডলি জহুর। হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রথম ছবি ‘আগুনের পরশমনি’তেও দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। এরপর হুমায়ূন আহমেদের নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘এইসব দিনরাত্রি’তে মুগ্ধ করেছেন মমতাময়ী ভাবীর চরিত্রে, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবিতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন মমতাময়ী ‘বড় আপা’ চরিত্রে এবং হুমায়ূন আহমেদেরই গল্পে তৌকীর আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিতে শুভ্র চরিত্রে রিয়াজের মায়ের ভূমিকাতেও তিনি কাজ করেছেন। আজ নন্দিত এই কথা সাহিত্যিকের চলে যাওয়ার ছয় বছর। তাকে নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের স্মৃতি চারণ করলেন ডলি জহুর…
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয়:
‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের মাধ্যমে আমি হুমায়ূন সাহেবের কাজের সঙ্গে যুক্ত হই। এর আগে আমি তাকে সেভাবে চিনতাম না। বিটিভির প্রডিউসার মোস্তাফিজুর রহমান আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন নিলু চরিত্রটির জন্য। আমার সাথে মোস্তাফিজ সাহেবেরই নাটকটি নিয়ে প্রথমে কথা হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি বিটিভিতে যাই। আমি কোনো কিছু সেভাবে না জেনেই কাজ করতে রাজী হয়েছিলাম। কারণ নাটকটি ছিল ধারাবাহিক। তখন ধারাবাহিকের অন্যরকম আবেদন ছিল। কারণ এতো বেশি ধারাবাহিক হতো না। সেখানে কাজ করতে গিয়েই ওনার সঙ্গে পরিচয় ও মুগ্ধ হওয়া।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা:
মোস্তাফিজ সাহেবের অফিস রুমে ঢুকে দেখি এক কোণায় সোফায় পা তুলে একেবারে আরাম করে বসে আছেন হুমায়ূন সাহেব। আমি তার সঙ্গে কথা বললাম না। অন্যদের সঙ্গে বসে স্ক্রিপ্ট দেখছিলাম। তার স্ক্রিপ্ট পড়তে গিয়ে খুব অবাক হচ্ছিলাম। বলা যায়, ভেতরে ভেতরে রেগে গিয়েছিলাম। কী অবস্থা! ছোট ছোট দৃশ্য! ছাড়া ছাড়া সংলাপ! আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগছিল। আমি মোস্তাফিজ সাহেবকে বলেই বসলাম, এ আবার কেমন নাটক, এ নাটক কে লিখেছে? মোস্তাফিজ সাহেব আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলেন, কিছু বললেন না।
ওখানে আসাদুজ্জামান নূর, ডা. এনামুল হকসহ আরো অনেকেই ছিলেন। এনামুল ভাই বলে উঠলেন, ডলি তোমার তো বোধহয় হুমায়ূন সাহেবের সঙ্গে পরিচয় নাই, তাই না? আমি বুঝে গেলাম তিনি কি বোঝাতে চাইলেন। এরপর আমি আর কোনো কথা বললাম না। হুমায়ূন সাহেবকে দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। তারপর সালাম দিলাম। কথাবার্তাও হলো টুকটাক। তার সমালোচনা ছিল সামনাসামনি। যা বলার বললেন। তো যাই হোক, তিনি আমার অভিনয় পছন্দ করলেন। পরবর্তীতে ‘শঙ্খনীল কারাগার’ নির্মাণ হলো তার গল্প নিয়ে। সেখানে আমাকে তিনিই পছন্দ করেছিলেন। ১৯৯২ সালের ওই কাজটির জন্য আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলাম।
মানুষ হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ:
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অসম্ভব মেধাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন আমি কাজ করেছি। খুব কাছ থেকেই তাকে দেখেছি। নাটক লেখা ও পরিচালনার প্রতি তার অদ্ভুত এক নেশা ছিল। লেখা শুরু করলে স্নানাহার যেন ভুলেই যেতেন। হুমায়ূন আহমেদ শুটিং স্পটে বসেই অনেক নাটক লিখেছেন। গল্প পছন্দ না হলে প্রায়ই তিনি কাটাকাটি করতেন। এতে আমাদের কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়ত হতো। তবে তিনি খুবই ভোজনরসিক ও আমুদে প্রকৃতির ছিলেন। তার সেটে সবসময় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটি প্রাধান্য পয়েছে। দিনব্যাপী তুমুল আড্ডা চলেছে। তার ছেলে এবং আমার ছেলে একই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাই তিনি আমার ছেলের খোঁজ-খবর নিতেন নিয়মিতই।