সেতু বা ব্রিজের মত দেশের সব জাতীয় মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই টোল থেকে অর্জিত অর্থ এসব মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যবহারের নির্দেশও দেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দেশের ২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিতে গিয়ে এই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ব্রিজে আমরা টোল নেই। সড়ক নয়, জাতীয় মহাসড়কগুলোতে থাকা ব্রিজ ছাড়াও রাস্তার ওপর টোল বসানো হবে। সারাবিশ্বে তাই আছে।’ যদিও টোল কত টাকা নির্ধারণ করা হবে বা কখন থেকে কর্যকর হবে- সে বিষয়ে কিছু বলেননি পরিকল্পনামন্ত্রী।
তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দূরপাল্লার যানবাহনের ক্ষেত্রে (লং ডিসটেন্স ট্রাভেলার) এ টোল কার্যকর হবে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, দেশের প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের সেই টোলের আওতায় আনা হবে।
যে মহাসড়কেই টোল বসানো হোক না কেন, মূলত তার চাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়বে জনগণের ওপরই। কেননা যখনই টোল কার্যকর হবে, যানবাহনের মালিকেরা সেই বাড়তি খরচ নিজেদের পকেট থেকে দেবেন না। স্বাভাবিকভাবেই তা জনগণের কাছ থেকেই আদায় করবেন। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস মালিকেরা।
শুধু বাসের কথাই আসছে কেন? মালবাহী ট্রাকের ওপর যে টোল ধরা হবে, তাও সাধারণ জনগণের পকেট থেকেই যাবে। সেক্ষেত্রে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে তা আদায় করবেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে অন্যান্য যানবাহনকেও যে টোল দিতে হবে, তারও দায় মেটাতে হবে সাধারণ মানুষকেই।
এটা ঠিক, দেশের মহাসড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছরই সরকারকে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়। কোনো কোনো সময় সেই অর্থের সংস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়ে। সেই চাপ কিছুটা মেটাতেই হয়তো সরকারের এমন উদ্যোগ। অনেক উন্নত দেশে এভাবে টোল আদায়ের দৃষ্টান্ত আছে।
কিন্তু সেইসব দেশে শুধু কি সড়কের খরচ মেটাতে টোল আদায় করা হয়? নাকি সড়কে যানবাহনের চাপ কমাতে? কিংবা সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে? এসব বিষয়ে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক।
আরেকটি বিষয়, যেসব দেশের মহাসড়কে টোল ব্যবস্থা রয়েছে; তাদের সড়কের গুণগত মান এবং নির্মাণ খরচ আমাদের দেশের মতো? নিঃসন্দেহে এক না। এ সংক্রান্ত জরিপ এবং সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে সড়ক বা মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আবার গুণগতভাবেও নিম্নমানের। যে কারণে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অর্থাৎ বেশি খরচ করেও টেকসই সড়ক নির্মাণ করতে পারছে না।
এর বড় কারণ দরপত্রসহ নানা ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় দুর্নীতি এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করা। দুই বছর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, চার লেন সড়ক নির্মাণে চীন ও ভারতের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ব্যয় করে বাংলাদেশ।
আবার বাংলাদেশের মহাসড়কের নির্মাণ মান নিয়ে গত বছর ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের জরিপে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়কে ব্যবস্থার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
আমরা মনে করি, এসব বিষয় বিবেচনায় এনে আগে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করে স্বচ্ছতা আনা গেলে, ব্যয় কমার পাশাপাশি টেকসই নির্মাণও নিশ্চিত হবে। এরপরই কেবল টোল নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত। তা না হলে, অন্যদের দুর্নীতি-অনিয়মের দায় মেটাতে হবে দেশের জনগণকে।