ঘরের মাঠে স্পিন-সহায়ক উইকেট পেলে সাকিব, মিরাজ, তাইজুল বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন দারুণভাবে। তারা সামর্থ্য রাখেন প্রতিপক্ষকে দু’বার অলআউট করার। পেসারদের পারফরম্যান্স নিয়ে তেমন না ভাবলেও চলে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে তো নিজেদের পছন্দমতো উইকেট পাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে দায়িত্ব চাপে পেসারদের কাঁধে। আর তখনই হয়ে যায় গড়বড়।
উইন্ডিজ সফরে জ্যামাইকা, অ্যান্টিগা টেস্টে ক্যারিবিয়ান পেসার ও টাইগার পেসারদের মধ্যে দেখা গেছে যোজন যোজন ব্যবধান। স্বাগতিক দেশের বোলাররা টপাটপ উইকেট নিতে পারলেও বাংলাদেশের পেসাররা উইকেটের দেখা পেয়েছেন দীর্ঘ বিরতির পর।
লাল বলে পেস আক্রমণে দুর্বলতার চিত্র বহুদিন ধরেই। অথচ গত বছর থেকে নিয়মিত হচ্ছে বিশেষ বোলিং ক্যাম্প। যেখানে পাইপলাইনে থাকা ডজনখানেক পেসারকে বিদেশি কোচের অধীনে দেয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। তারপরও উন্নতি চোখ পড়ছে না বলেই চিন্তা বাড়ছে। সাদা বলের ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি সংস্করণে মোস্তাফিজ, রুবেলরা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও টেস্টের চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা।
বোলিং ক্যাম্পের নিয়মিত মুখ কামরুল ইসলাম রাব্বি (বর্তমানে এইচপি ক্যাম্পে আছেন) মনে করেন কঠোর পরিশ্রম, ঘরোয়াতে বেশি বোলিং করার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের পেসাররাও উন্নতির পথে হাঁটবে। সাতটি টেস্ট খেলা এই ডানহাতি পেসার আশা করেন আগামীতে বেশ কয়েকজন ভালো পেসার পাবে বাংলাদেশ।
শনিবার মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পেস বোলিং নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন কামরুল। প্রশ্নোত্তর পর্বটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
নতুন কোচ বলেছেন ভালো করতে দীর্ঘকায় পেসার খুঁজে বের করার কথা। পেস বোলারদের উচ্চতা কোনো ফ্যাক্ট কিনা?
কামরুল: সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে স্কিল ডেভেলপ করা। আমাদের স্কিলে আরও উন্নতি করতে হবে। অবস্থা বুঝে আরও ভালো খেলতে হবে। আমার মনে হয় আমরা যেই উচ্চতার বোলার সেই উচ্চতায়ও সম্ভব। বাংলাদেশের মানুষদের যেই জেনিটিক্যাল অবস্থা তাতে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মতো উচ্চতা পাব না। যদি এমন বোলার খুঁজতে বলা হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বোলার আনতে হবে। আমাদের যেই উচ্চতা আছে এই দিয়েই আমাদের ভালো করতে হবে। আমরা আশা করি এই উচ্চতা দিয়েই ভালো বোলিং করতে পারবো এবং ম্যাচ জেতাতে পারবো।
উন্নতি করতে কী করতে হবে ?
কামরুল: আমার মনে হয় আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। আরো বেশি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলতে হবে। আমরা জাতীয় লিগের খেলাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে খেলি, এখানে উইকেট ভিন্ন থাকে…যা আমাদের অনেক সাহায্য করছে। আমরা যেই গতিতে বল করি, এই গতিতে যদি আমরা ভালো সুইং করাতে পারি তাহলে আমরা ভালো করতে পারবো। আপনি দেখবেন ভুবনেশ্বর কুমার এবং ভারতের অন্যান্য বোলাররা ভালো সুইং করাতে পারে। আমরা গতির দিকে নজর না দিয়ে যদি যদি সুইংয়ে নজর দেই তাহলে উন্নতি করতে পারবো। আমাদের গতি ১৩০-৩৫ এর মধ্যে, এর সাথে সুইং যোগ করলেই ভালো করা সম্ভব।আমার মনে হয় কঠোর পরিশ্রম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মাশরাফী ভাই এখন খুবই ভালো করছে, তাকে দেখে আমাদের শেখা উচিত। বোঝা উচিত, আমরা চাইলেই পারি। কারণ আমাদের দেশের একজন যদি করে দেখাতে পারে তাহলে আমরা বাকিরা কেন পারবো না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সঙ্গে তুলনা করলে…
কামরুল: আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে চিন্তা না করে আমাদের শক্তি নিয়ে চিন্তা করা উচিত। আপনি দেখবেন ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টিতে ওদের লম্বা বোলারদের কিন্তু পাত্তা দেই নি। আমরা ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতেছি তখন কেউ বলে নি যে আমাদের বোলার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা খুব লম্বা বা ওরা অনেক ভালো। তখন কিন্তু কোচও এই কথা বলে নি। আমাদের মাশরাফী ভাই, রুবেলরাই কিন্তু সেখানে ভালো করছে। আমাদেরও ভালো করা সম্ভব, শুধু আমাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই তো পেসাররা শিখতে পারে। বাধা আসলে কোথায়?
কামরুল: আমরা জাতীয় লিগ, বিসিএলে খেলার সময় খুব বেশি বল করার সুযোগ পাই না। দেখা যায় যে নতুন বলে পেসাররা বল করার পর স্পিনাররা বলে আসে। দিন শেষে দেখা যায় একজন পেসার খুব গেলে ১২-১৩ ওভার বল করে আর সারাদিন ফিল্ডিং করে, আর স্পিনাররা দেখা যায় বল করছে ৩৫-৩৬ ওভার। এমন করে হিসাব করলে দেখা যায় তিনজন স্পিনার মিলে ৯০ ওভারের মধ্যে ৭০ ওভার বল করে, আর দুইজন পেসার মিলে বল করে ২০ ওভার। আমাদের এমন উইকেট ও আবহাওয়াতেই আমরা এত কম বল করি। এতে আসলে আমার শেখার জায়গাটা কমে যায়। তবে গত দুই বছর ধরে উইকেটে অনেক তফাত দেখা গেছে। এখন আমরা ভালো ভালো উইকেট পাই, তখন কিন্তু আমরা বোলিং করার সুযোগ পাই। শীতের সময় জাতীয় লিগ বা বিসিএল খেলা হলে তখন পেসাররা অনেক বল করে। এছাড়া স্পিনাররাই বেশিরভাগ সময় বল করে থাকে। এই জন্যই আগে থেকে আমাদের উন্নতিটা কম হয়ে আসছে। এখন আমরা ভালো উইকেট পাচ্ছি, আশা করি আগামী কয়েকবছরে দেখবেন ভালো কয়েকজন বোলার পাবে।’