ওয়ানডের পর এবার সফরের একমাত্র টি-২০ ম্যাচ জিতে টি-২০ সিরিজও নিজের করে নিল বাংলাদেশ। ১৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২২ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করে অপরাজিত থাকেন সাকিব আল হাসান। সাব্বির করেন অপরাজিত ৫১ রান।
এই নিয়ে ৭ পরাজয়ের পর অষ্টম ম্যাচে এসে প্রথম বারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। এতে করে ওয়ানডের ১৬ বছর আক্ষেপ ঘোঁচানের পর ৮ বছরের টি-২০ আক্ষেপ ঘুচলো টাইগারদের।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন ৫১ রান করে অপরাজিত থাকা সাব্বির রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বিজয়ী ট্রফি নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মূর্তজা।
১৪২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশের। মোহাম্মদ হাফিজের প্রথম ওভারের চার বল থেকেই তামিম ইকবাল তুলে নেন ১৪ রান। তবে পঞ্চম বলে সৌম্য সরকার রান আউটের শিকার হলে তামিমের সাথে জুটি বাঁধেন দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে সোহেল তানভির খরচ করেন মাত্র ১ রান। তবে তামিমও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। তৃতীয় ওভারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত খেলা তামিম ইকবালকে ফেরান উমর গুল। দ্বিতীয় বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ হাফিজের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
ষষ্ঠ ওভারে মুশফিকের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওহাব রিয়াজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান টাইগার এ রান মেশিন। ফেরার আগে ১৫ বল থেকে ১৯ রান করেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ৪ টি চারের মার।
তার বিদায়ে সাকিবকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন সাব্বির। দুইজনের ১০৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জয়ের বন্দরে পৌছে দেয় বাংলাদেশকে।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের ১৪২ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় পাকিস্তান।
শুরুতেই ব্যাট হাতে দুই পাকিস্তানী ওপেনার আহম্মেদ শেহজাদ ও মুকতার আহমেদ। বাংলাদেশের পক্ষে বল শুরু করেন প্রথম বারের মত দলে ডাক পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমান।
ম্যাচের প্রথম ওভারেই মুস্তাফিজুরের বলে ক্যাচ দেন আহম্মেদ শেহজাদ। তবে সামান্য সামনে পড়ায় ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন বলের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরাফাত সানি।
দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসান বল করতে এসে মাত্র দুই রান দেন। তবে কোন উইকেট পাননি।
তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রান আউটের সুযোগ হয়। তবে স্ট্যাম্পে আঘাত হানতে ব্যর্থ হন সাব্বির।
মুস্তাফিজের তৃতীয় ওভার থেকে আসে মাত্র ১ রান। চতুর্থ ওভারে বল করতে আসেন দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার ওভার থেকে পাকিস্তানী দুই ব্যাটসম্যান তুলে নেন ৯ রান। যার মধ্যে ছিল দুইটি চারের মার।
পঞ্চম ওভারে আরাফাত সানি বল করতে এলে আহম্মেদ শেহজাদের ব্যাটিং তোপের মুখে পড়েন। তার ওভার থেকে সফরকারীরা তুলে নেয় ১৩ রান। যাতে ছিল তিনটি চারের মার।
ষষ্ঠ ওভারে বল করতে আসেন দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তার ওভার থেকে আসে মাত্র ৩ রান।
সপ্তম ওভারে বোলিং আক্রমনে আসেন তাসকিন আহমেদ। টাইগার এ তরুণ তুর্কির ওভার থেকে আসে ৩ রান।
অষ্টম ওভারে বোলিং আক্রমণের দ্বায়িত্ব নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি নিজে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে তিনি খরচ করেন ৮ রান।
নবম ওভারে ইনিংসের দ্বিতীয় বারের মত বল করতে আসেন তাসকিন। তার ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছয়ের মার মারেন মুকতার। ওভারের শেষ বলে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দিলে তাসকিনের শিকারে পরিনত হন শেহজাদ।
শেহজাদের বিদায়ে ক্রিজে আসেছেন শহীদ আফ্রিদি। তবে তিনিও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। দলে প্রথম বারের মত ডাক পাওয়া মুস্তাফিজুরের বলে উইকেটের পেছনে দাাড়িয়ে থাকা মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ফেরার আগে তার সংগ্রহ ১২ রান।
এরপরই আরাফাত সানির শিকারে পরিনত হন শুরু থেকে ভালো খেলতে থাকা মুকতার আহমেদ। ১৩ তম ওভারের প্রথম বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। ফেরার আগে ৩০ বল থেকে সংগ্রহ করেন ৩৭ রান। যার মধ্যে ৫টি চার ও ১টি ছয়ের মার ছিল।
১৬ ওভারে নিজের তৃতীয় ওভারে বল করতে আসেন তাসকিন আহমেদ। তার ওভার থেকে পাকিস্তান তুলে নেয় ১৩ রান। একটি ছয় আসে হারিসের ব্যাট থেকে।
১৭তম ওভারে বোলিং আক্রমণে আসেন সাকিব আল হাসান। তিনি খরচ করেন ৯ রান।
১৮ তম ওভারে ইনিংসে শেষ বারের মত বল করতে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওভারের শেষ বলে এলবিডাব্লিউ করে ফেরান হাফিজকে। মুস্তাফিজ ৪ ওভার শেষে ১৯ রানে নেন ২ উইকেট।
২০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটের বিনিময়ে ১৪১ রান।
পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন মুকতার আহমেদ। আর সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন অভিষেক হওয়া মুস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের এ জয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি।
পাকিস্তান একাদশ: শহীদ আফ্রিদি, আহম্মেদ শেহেজাদ, হারিস সোহেল, মোহাম্মদ হাফিজ, মোহাম্মদ রেজওয়ান, সোহেল তানভির, ওহাব রিয়াজ, উমর গুল, সাইদ আজমল, সরফরাজ আহম্মেদ, মুকতার আহমেদ।