চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘টি-টুয়েন্টিতে তামিমের অ্যাপ্রোচ আদর্শ নয়’

তামিম ইকবালের স্ট্রাইকরেট নিয়ে কথা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। দেশসেরা ওপেনারকে আবারও আলোচনায় নিয়ে এসেছে বিপিএল। ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলা তামিম ১২ ম্যাচে ৩৯৬ রান করলেও স্ট্রাইকরেট ১০৯.৩৯। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে যা বড্ড বেমানান। ‘টেস্ট ক্রিকেটার’ তকমা গায়ে লাগা একই দলের মুমিনুল হকের স্ট্রাইকরেটও (১২২.২২) তামিমের চেয়ে বেশি।

ওয়ানডে ক্রিকেট তামিম খেলেন সময় নিয়ে। একপ্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা এ বাঁহাতি ওপেনারকে করে রেখেছে বোতলবন্দী। বিশ্বকাপে তার স্ট্রাইকরেট ছিল ৭১.৬৪। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটেও তার একই ধারায় ব্যাটিং করাকে আদর্শ মনে করছেন না কোচ ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি চান খোলস থেকে নিজেকে বের করে আনুক তামিম। বদলাক ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ।

ঢাকা প্লাটুনের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তামিমের অ্যাপ্রোচে সন্তুষ্ট থাকার কথা জানালেও নাজমুল আবেদীন মনে করেন, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কার্যকরী ইনিংসের দিকে নিজেকে টেনে নেয়ার সময় এখনই।

‘দলের হয়ত পরিকল্পনা ছিল তামিম ধরে খেলবে। সেটা থাকতেই পারে। কিন্তু তার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের রান করার সময় তো এখনই। একপাশে কেউ ধীরগতিতে খেললে অপর ব্যাটসম্যানের উপর রান বাড়ানোর চাপ বাড়ে। একটি দল বা একটি আসরের জন্য হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই অ্যাপ্রোচ কখনোই আদর্শ নয়।’

নাজমুল আবেদীন ফাহিম

‘তামিম অনেক বছর ক্রিকেট খেলেছে। তার হাতে যে ধরনের শট আছে, তা খেলা উচিত। অভিজ্ঞতা দিয়ে রান করার এখনই সময়। আমি চাই, তামিম তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ বদলাক। সহজাত খেলাটাই খেলুক। টি-টুয়েন্টি রানের খেলা। এখানে আক্রমণাত্মক থাকা উচিত। বাংলাদেশের হয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তাকে সময় নিয়ে খেলতে দেখি। কিন্তু টি-টুয়েন্টিতে এটি আদর্শ নয়। এখানে স্ট্রাইকরেট গুরুত্বপূর্ণ।’

এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় তামিমের পরই রংপুর রেঞ্জার্সের নাঈম শেখ। ৩৫৯ রান নিয়ে আট নম্বরে থাকা এ বাঁহাতি ওপেনারের স্ট্রাইকরেট ১১৫.৪৩। তার অ্যাপ্রোচ দেখেও খুশি নন নাজমুল আবেদীন।

‘ভারতের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজে নাঈমকে দেখেছি খুবই আক্রমণাত্মক। কিন্তু বিপিএলে সময় নিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্রাইকরেট আকর্ষণীয় করতে পারেনি। একজন খেলোয়াড় যখন সহজাত ব্যাটিং থেকে বেরিয়ে যাবে, তখন দলের জন্য ওই ইনিংস কার্যকরী ফল দেবে না। খুলনা টাইগার্সের নাজমুল হোসেন শান্তর কথাই বলি। সে নিজের মতো করেই খেলেছে। শুরুর দিকে রান না পেলেও শেষ দুইটা ম্যাচে রান করল, দল জিতল তার ব্যাটিংয়ে। টি-টুয়েন্টিতে কেউ খুব ধারাবাহিকভাবে রান করতে পারবে না। সেটা বুঝেই খেলা উচিত।’

রংপুরের অধিনায়ক শেন ওয়াটসন নাঈমকে বলে গেছেন ২২ গজে আক্রমণাত্মক থেকে টি-টুয়েন্টি খেলতে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটারের কথার সঙ্গে একমত নাজমুল আবেদীন।

‘যার খেলার ধরন যেমন সেভাবেই দলে অবদান রাখা উচিত। তার খেলার ধরন নিয়েই দলের পরিকল্পনা হওয়া উচিত। নাঈম হয়ত অনেক রান করেছে, কিন্তু কয়টা ইনিংস দলকে জেতাতে সাহায্য করেছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ধরন আক্রমণাত্মক। তারা পাঁচটা ভালো ইনিংস খেললে দুটিতে দলকে একাই জিতিয়ে দেবে। শান্ত যেমন জিতিয়েছে নিজের মতো করে খেলে। এখানেই পার্থক্য তৈরি হয়।’

শুরুর দিকে তামিম ছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের অগ্নিমূর্তি। সেই তামিম ২২ গজে এখন শান্ত-স্থির। ক্রমেই কমছে তার স্ট্রাইকরেট। ২০৪ ওয়ানডে খেলা তামিমের স্ট্রাইকরেট ৭৭.৭৪। টি-টুয়েন্টিতে (৭৫ ম্যাচ) ১১৬.৬৩। সব ধরনের টি-টুয়েন্টিতে (২০৩ ম্যাচ) স্ট্রাইকরেট ১১৯.৩১। সাদা বলের ক্রিকেটে মারমুখী ব্যাটিং প্রতিভা গুটিয়ে ফেলেছেন নিজেকে।

আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে চারশ’র বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইকরেট তামিমের। ৭১ ইনিংসে এ ওপেনার করেছেন ১৫৫৬ রান। যা দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। কিন্তু স্ট্রাইকরেট ১১৬। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, সাব্বির, লিটন, সৌম্য, আশরাফুলদের স্ট্রাইকরেট তামিমের চেয়ে ভালো।

 

বিপিএল ও তামিম
প্রথম বিপিএলে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন তামিম। দ্বিতীয় আসরে দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে ১০ ম্যাচে করেছিলেন ২৪৪ রান। স্ট্রাইকরেট ছিল ১২২.০। ২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে ৯ ম্যাচে করেন ২৯৮ রান। স্ট্রাইকরেট কমে হয় ১১৮.৭২। ২০১৬ সালে একই দলের হয়ে ১৩ ম্যাচে করেন ৪৭৬ রান। একটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি পেলেও স্ট্রাইকরেট চলে আসে ১১৫.৮১তে।

পরে ২০১৭ সালে পঞ্চম আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১০ ম্যাচে তামিম করেন ৩৩২ রান। স্ট্রাইকরেট বেড়ে হয় ১৩২.৮০। ২০১৯-এর জানুয়ারির বিপিএলে একই দলের হয়ে ১৪ ম্যাচে করেন ৪৬৭ রান। আদর্শ স্ট্রাইকরেট (১৩৩.৮১) নিয়ে শেষ করেন আসর। সবশেষ দুই আসরে স্ট্রাইকরেট দারুণ হলেও এবার নেমে এসেছে ১০৯.৩৯তে।