চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

টিলারসন থাকছেন শেষ পর্যন্ত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে (৬৫) সরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে যে গুজব ছড়িয়েছিলো, তা প্রত্যাখ্যান করেছে হোয়াইট হাউজ। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষ কূটনীতিক “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকছেন।’

টিলারসনকে সরিয়ে দেয়া সংক্রান্ত খবরগুলোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংবাদগুলো ‘সত্যি নয়’।

টিলারসনকে সরিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান মাইক পোম্পেও-কে স্থলাভিষিক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিচয় গোপন রাখা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাতে এমনটি জানিয়েছিলো বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা। আর এই খবরগুলোই উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টিলারসনের মতভিন্নতার কারণেই ওই পদক্ষেপ বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো।

সংবাদগুলো কিভাবে আসলো?
নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ভ্যানিটি ফ্যায়ারে প্রথম এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সরকারি সূত্রের বরাতে তারা সংবাদটি প্রচার করে। পরে এপি পরিচয় গোপন রাখা দুইজন হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তার বরাতে জানায়, এ ধরণের (টিলারসনকে বরখাস্ত) একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার কথা। রয়টার্সও প্রশাসনের সূত্রের বরাতে এমনটি জানায়।

ওই পরিকল্পনায় সিআইএ প্রধান পোম্পেও-এর জায়গায় আসবেন রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন। ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই এই পরিবর্তন আসতে পারে বলেও আভাস দেওয়া হয়েছিলো। যদিও ট্রাম্প এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয় বলেও জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র স্যান্ডার্স বলেন, রেক্স এখানেই আছেন। এখানে কোন ব্যক্তিগত ঘোষণাও আসেনি।

“টিলারসন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। সমগ্র মন্ত্রীসভার নজর এখন ট্রাম্প প্রশাসনের অসাধারণ প্রথম বছরপূর্তী উদযাপনের দিকে।”

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স

পরবর্তী এক বিবৃতিতে স্যান্ডার্স যোগ করেন, প্রেসিডেন্ট কারও উপর আস্থা হারালে, তিনি আর দায়িত্বে থাকেন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নৌয়ার্ট টিলারসন ও ট্রাম্পের মধ্যে নীতিগত ক্ষেত্রে মতভিন্নতার বিষয়টি স্বীকার করেন।

কিন্তু হোয়াইট হাউজের চীফ অব স্টাফ জন কেলি তার ডিপার্টমেন্টকে ফোন করে জানিয়েছেন, “এই গুজব সত্য নয়।”

এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সিনেট ফরেইন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান বব কোর্কার বলেন, টিলারসন এই ধরণের কোন পরিবর্তন বিষয়ে অবগত নন।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সাংবাদিকদের জানান, এই প্রতিবেদনের কোন ভিত্তি নেই।

ট্রাম্প কেন টিলারসনের বিদায় চাইবেন?
ট্রাম্প-টিলারসনের সম্পর্ক ভালো চলছিলো না বলেই খবর।

বহহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সনমবিলের সাবেক প্রধান নির্বাহী টিলারসনের বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প, এরকম গুজব প্রায় সময়ই উঠেছিলো।

ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক বহুপক্ষীয় চুক্তির পক্ষে ছিলেন টিলারসন। এতে ইরানের এক্ষেত্রে (পরমাণু অস্ত্র বৃদ্ধির ক্ষেত্রে) লাগাম টানার বিনিময়ে দেশটির উপর অবরোধ শিথিল করা হয়েছিলো। এই চুক্তিকে কটাক্ষ করেছিলেন ট্রাম্প।

এছাড়াও নর্থ কোরিয়া বিষয়েও প্রকাশ্যে বিরোধীতায় জড়াতে দেখা গিয়েছিলো তাদের।

ব্যক্তিগত আলাপে ট্রাম্পকে ‘নির্বোধ’ বলেছিলেন টিলারসান, এমন অভিযোগও উঠেছিলো।

জুন মাসে ট্রাম্প ও টিলারসন সৌদি আরব-কাতার বিরোধ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বার্তা দিয়েছিলেন।

টিলারসন বলেছিলেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন এই অবরোধ চরমপন্থার বিরোধে লড়াইয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে বলেও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি।

অপরদিকে সৌদি নীতিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, এই অবরোধ ‘সন্ত্রাসবাদকে ভয় পাওয়ার শেষের সূচনা’। কাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবোদে অর্থায়নে অভিযোগের প্রেক্ষীতে ট্রাম্প এমনটি বলেছিলেন। যা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে কাতার।

এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে টিলারসনের পরিকল্পনাও কিছু ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়নি। ডেমোক্রেটস এবং কিছু রিপাবলিকান এই সংস্কারের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ছাটাই এবং বাজেট কাট-ছাঁট বহির্বিশ্বে আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছিলেন তারা।

বিশ্লেষকদের অভিমত
ট্রাম্প ও টিলারসনের মধ্যে উত্তেজনা বহুবার আলোচনায় এসেছে। ব্যক্তিগত দিক থেকেও, মেজাজ ও কাজের ধরণের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই বিপরীত মেরুর। টিলারসনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ ছিলো তিনি ‘পরিবর্তন বিরোধী’।

বিভিন্ন সময় টুইট করে কেন্দ্রীয় নীতির বিষয়ে টিলারসনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। যদিও নর্থ কোরিয়ার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে টিলারসনের কূটনৈতিক কৌশলকে ট্রাম্প গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কের বিষয়ে যা প্রকাশিত হয়েছে তার চেয়েও পরিস্থিতি জটিল ছিলো বলেই অভিমত বিশ্লেষকদের।

টিলারসনের ব্যবস্থাপনাগত স্টাইলও তার নিজ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছিলো: পররাষ্ট্র বিভাগ, কংগ্রেস এবং বিদেশী নীতিবিষয়ক কমিউনিটির অনেকের মধ্যেই। কারণ তিনি ট্রাম্পের বাজেট কাটছাটের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন কোন বিরোধীতা ছাড়াই। একই সাথে বিভাগে একটি বড় সংস্কারও এনেছিলেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি কোথায় যেতে চান বা তার কোন বিস্তারিত ব্যাখ্যাই তিনি দেননি।

এছাড়াও বেশ কয়েকটি সিনিয়র স্টাফের বিদায়ের পর তাদের শূণ্যস্থান পূরণে তিনি যথেষ্ট দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। যদিও এক্ষেত্রে টিলারসনকেই এককভাবে দায়ী করা যাবে না, কিন্তু তিনি ওয়াশিংটনের রাজনীতির সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সম্ভাব্য বড় পরিবর্তন
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস টিলারসনের বরখাস্তের আশঙ্কার সংবাদটি প্রকাশ করে জানায়, তা জাতীয় নিরাপত্তা দলের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। যা তদারক করবেন চিফ অব স্টাফ কেলি।

পোম্পেও, যাকে টিলারসনের সম্ভাব্য বদলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিলো, তার সাথে নিরাপত্তা গত ইস্যুতে ট্রাম্পের অনেক মিল রয়েছে বলেও ধারণা।

আরকানসাসের সিনেটর টম কটন, যাকে সিআইএ প্রধান হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করা হবে বলা হচ্ছিলো, ইরানের পরমাণু চুক্তির বিষয়ে তার অবস্থানও ট্রাম্পের মতোই।

ইরাক এবং আফগান যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন টম কটন প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে চান বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জানুয়ারিতে টিলারসনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। তার বরখাস্তের ঘটনা সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করা কোন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিতো।

অবশ্য টিলারসনের নিয়োগ বিতর্কিত ছিলো। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ টিলারসনের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ রয়েছে। এক্সনমবিলে তিনি ৪১ বছর ধরে কাজ করেন। এ সময়ের মধ্যে রুশ তেল কোম্পানি রোসনেফটের সঙ্গেও বেশ কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের প্রচারণা দল এবং রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে আঁতাতের অভিযোগে তদন্তের সম্মুখিন হতে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে।