চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

টিপ পরেই প্রতিবাদ

বাঙালি নারীর কাছে টিপ কেবল সাজের উপাদান নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির একটি অংশ। যে কোনো অনুষ্ঠানে থ্রি-পিস, কুর্তি, ফ্রক আর শাড়ির সাথে মিলিয়ে নানান রঙের বিভিন্ন আকারের টিপ পরার রেওয়াজ রয়েছে নারীদের। কিন্তু হঠাৎ সেই টিপ নিয়ে কেন এতো গুঞ্জন? কেনই বা টিপ পরা ছবি দিয়ে নারীরা আজ প্রতিবাদ করছে? বিচার চাইছে? এ বিচার কার বিরুদ্ধে?

গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা। পথেই বাইকের ওপর বসে থাকা মধ্যবয়সী এক পুলিশ সদস্য তাকে দেখে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, এর কারণ তার কপালে ছিল বড় একটি টিপ। ওই শিক্ষিকা রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেকে সামলে নিয়ে প্রতিবাদ করেন । তাতে সেই পুলিশ সদস্য আরও বাজে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং তার পায়ের পাতার উপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান।

হঠাৎ করে নারীর কপালে এই টিপ আক্রমণের হাতিয়ার উঠায় আজ নারীরা তাদের সামাজিক মাধ্যমে টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ করছে। এই পুলিশ সদস্যের শাস্তির দাবিতে সকলেই সরব আজ। বাঙালি সংস্কৃতির অংশ এই টিপ আজ আক্রমণের হাতিয়ার হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীরা কীভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে তার কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হলো-

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী বলছেন, টিপ পরাকে নারীর মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদও ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রবাদ জানিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সমাজবিজ্ঞানী ড . সাদেকা হালিম, সবসময় টিপ পরেন এবং সারাজীবন টিপ পরবেন উল্লেখ করেন। পাশাপাশি একজন বাঙালি নারী হওয়ায় তিনি বেশ গর্ববোধ করেন জানিয়ে সেই পুলিশ সদস্যের শাস্তির দাবি করেন।
দেশের প্রথম রূপান্তরিত নারী সংবাদ উপস্থাপক তাসনুভা আনান শিশির যতখুশি ততবার টিপ পরবে জানিয়ে, উক্ত ঘটনার বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উদীচী কর্মী রুমি প্রভাও তার ফেসবুকে টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ  জানিয়েছেন গতকালের আক্রমণের।
শুধু টিপ নয়, যেকোনো বিষয়ে গড়পরতা মন্তব্য করে নারীদের হেনস্তা করার আরও অনেক ঘটনা দেখা যায়। গত মাসে পাবলিক বাসে টি-শার্ট পরে ভ্রমণ করায় এক নারী অন্য এক নারীকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করে। বিভিন্ন সময়েই এরকম ঘটনাগুলো ঘটে চলছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমিতে। যেখানে নারীদের চলাফেরা পোশাক থেকে শুরু করে সামান্য ছোট্ট টিপের জন্য দিন কিংবা রাতের যেকোনো মুহূর্তে প্রকাশ্যে অপমানিত হতে হয়। অথচ শ’ খানেক মানুষের উপস্থিতিও সেখানে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারে না। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলেও এসব ছবি বা ফেসবুক পোস্টের নিচে পাওয়া মন্তব্যগুলো সেই অপরাধকে সমর্থন করা আরেকটি দলকেও মাথা চড়া দিয়ে উঠতেও দেখা যায়।