ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। ইফতার সামগ্রী এবং পত্রিকার পাতা হাতে নিয়ে তরুণেরা জড়ো হতে থাকেন টিএসসির ভেতরের সবুজ মাঠটিতে। ছোট-বড় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পত্রিকা বিছিয়ে চলে বাহারি ইফতারের আয়োজন।দুইজন থেকে শুরু করে পাঁচ-দশ-বিশ ইত্যাদি সংখ্যক সদস্য থাকেন এসব দলে। ইফতারি প্রস্তত হয়ে গেলে চলে মাগরিবের আযানের অপেক্ষা। আযান পড়তেই খেজুর শরবত মুখে দিয়ে শুরু করেন ইফতার।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের পাশাপাশি সামাজিক মিলনমেলায় রূপ নেওয়া টিএসসির এ ইফতারে অংশ নেয় রাজধানীর নানা শ্রেণির মানুষ।বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শহরের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ-তরুণীরা এখানে আসেন ইফতার করতে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারাদিন রোজা রেখে টিএসসিতে ইফতার না করতে পারলে যেন পূর্ণতা পায় না তাদের সিয়াম সাধনা। তাই বিকেল হলেই তারা চলে আসেন টিএসসিতে। সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে কেনেন ইফতার সামগ্রী। তারপর সবাই মিলেমিশে তৈরি করেন ইফতার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের জন্য পবিত্র রমজান মাস যেন পুনর্মিলনীর একটি বড় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে রাজধানীসহ এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সাবেক শিক্ষার্থীরা মুঠোফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করে ঠিক করেন একটি দিন। তারপর সেই নির্দিষ্ট দিনে ইফতার উপলক্ষে জড়ো হন টিএসসিতে। সুযোগ হয় অনেক দিন না দেখা বন্ধুটিকে দেখার, তার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের পাশাপাশি এভাবে সুযোগ মেলে ব্যাচের, বিভাগের, হলের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ফোরামের বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতের।
কেবল বিশ্ববিদ্যালয়েরই নয় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও মিলনমেলার একটা বড় জায়গা টিএসসি।এখানে ইফতারি করতে দেখা যায় নানা পেশাজীবীদেরও।
শুক্রবার রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর দেখা মেলে টিএসসিতে। যারা ইফতার উপলক্ষে পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে রুপম হাসান নামে একজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: টিএসসিতে ইফতার করার মজাই আসলে আলাদা। ইফতারের পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধবসহ সব শ্রেণির মানুষের দেখা পাওয়া যায় এখানে। যেটা অনেক আনন্দের।
একটি সরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার দেখা মেলে। যাদের কেউ কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিলেন। তারা জানান, টিএসসির ইফতারের আসলে তুলনা হয় না। এখানে আসলে মনে হয় নতুন করে প্রাণের ছোঁয়া পাই। কী খেলাম সেটা বড় কথা নয়, সবাই মিলে একসঙ্গে মজা করে খেলাম সেটাই বড়।
শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ইফতারের আয়োজন করা হয় টিএসসিতে। এজন্য তারা আগে থেকেই টিএসসির মূল অডিটরিয়াম, মুনীর চৌধুরী অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া বা গেমস রুম বরাদ্দ করে রাখেন। ইফতারের আগে এসব জায়গায় চলে আলোচনা অনুষ্ঠানও।
তবে গত কয়েক বছর যাবত রমজান মাস বর্ষা মৌসুমে পড়ায় মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি বাগড়া দেয় ইফতারের সময়। তখন সবুজ মাঠ ছেড়ে ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম বা গেমস রুমের সামনে চলে ইফতারের আয়োজন।
গত কয়েক বছর যাবত ইফতারের পর উচ্ছ্বিষ্ট খাদ্য এবং অন্যান্য বর্জ্যে টিএসসি প্রাঙ্গন নোংরা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠায় এ বছর বিভিন্ন প্রান্তে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করেছে টিএসসি কর্তৃপক্ষ।