চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জমকালো আয়োজনে ‘টামবা’র ২৫ বছর পূর্তি

ব্যান্ড দলগুলোর মাঝে পারস্পারিক সহযোগিতা ও নতুন মিউজিশিয়ান তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েই ১৯৯৩ সালে গড়ে উঠে ‘টামবা’

আজম খানদের হাত ধরে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয়তা শুরু সেই সত্তরের দশক থেকেই। আশি ও নব্বই দশককে ব্যান্ড সংগীতের চর্চা ছড়িয়ে যায় দেশের জেলা শহরগুলোতেও। সেই সময়ে রাজধানী ঢাকার বাইরেও সমান দাপটে পাশ্চাত্য সংগীতের এই ধরনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। জেলা শহরে হিড়িক পড়ে ব্যান্ড দল গঠনের। আশি ও নব্বই দশকের শুরুতে টাঙ্গাইলে জন্ম নেয়া তেমন ব্যান্ড দলগুলো নিয়ে গড়ে উঠে ‘টাঙ্গাইল মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন’(টামবা)। 

ব্যান্ড দলগুলোর মাঝে পারস্পারিক সহযোগিতা, নতুন মিউজিশিয়ান তৈরী করা ও সর্বোপরি দেশীয় আলোকে ব্যান্ড মিউজিকের চর্চা করার উদ্দেশ্যেই ‘টামবা’র পথ চলার শুরু। এমনটাই বলছিলেন ‘টামবা’র সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সদস্য।

সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে হয়ে গেল টাঙ্গাইল মিউজিক্যাল ব্যান্ড এ্যাসোসিয়েশন(টামবা)-এর ২৫ বৎসর পূর্তি উৎসব। প্রচারবিমুখ এই প্রতিষ্ঠানের সফলতা আড়ালে রয়ে গেলেও টাঙ্গাইলবাসীর প্রিয় নাম ‘টামবা’। ২৫ বৎসর পূর্তি উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিল সকল প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সদস্যবৃন্দ। প্রতিষ্ঠাতা এক সদস্য সেই মুহূর্তুটাকে বর্ণনা করলেন এভাবে, সে ছিল এক আবেগঘন প্রাণের মেলা।

সকালে র‌্যালি ও কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু। এর পর এক এক করে মঞ্চে উঠে আসে ব্যান্ডগুলো। এবারে ‘টামবা’র ২০ টি ব্যান্ডসহ আরও ৪ টি অতিথি ব্যান্ড অংশগ্রহণ করে। প্রত্যাশিত পারফর্মেন্সের সাথে এবারে বাড়তি আকর্ষণ ছিল প্রোগ্রাম লেজার লাইট, ডিজিটাল ডিসপ্লে ও স্পেশাল ইফেক্ট। যা গানের পাশাপাশি মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতায় দর্শকদের অভিভূত করে। এছাড়াও টামবা’র এই মাইল ফলক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশী ও বিদেশী অনেক ব্যান্ড ও গায়ক শুভেচ্ছা ভিডিও পাঠায়।

টামবা’র সাবলীল ও মনমাতানো পরিবেশনা আপ্লুত করে আগত দর্শকদের

টাঙ্গাইল মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন(টামবা)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাজিব ইউসুফজাই চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মূলত যে সময়টায় আমরা ব্যান্ড মিউজিক শুরু করেছিলাম, সে সময়টা আমাদের খুব একটা অনুকূলে ছিলো না। তার মাঝে মফস্বলের মত একটা জায়গায় সেই উদ্যোগ ছিল আরও দূরহ। যে কয়টি ব্যান্ড ছিল, তাদের প্রায় সকলকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছে। মজার বিষয় হলো, আলাদা আলাদা পরিচিতি থাকলেও আমরা সব মিউজিশিয়ান একসাথে আড্ডা দিতাম।

রাজিব ইউসুফজাই

অনেক ভাবের বিনিময় হতো, জানতাম, জানাতাম অনেক কিছু। এমনি করে একটা পারস্পারিক সুসম্পর্ক তৈরী হয়। তখনি মাথায় আসে, এই পারস্পারিক নির্ভরশীলতা কে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া যায়।

‘আমাদের উদ্যেশ্য ছিল তৎকালীন ব্যান্ডগুলোকে সহায়তা করা। আর নতুন ব্যান্ড এবং মিউজিশিয়ান সৃষ্টি করা। আমরা যে তিক্ততার মাঝে দিয়ে গিয়েছি, তা যেন আমাদের পরবর্তী কাউকে স্পর্শ না করে।’-বলছিলেন রাজিব ইউসুফজাই।

সে আঙ্গিকে, টামবা’র হাত ধরে উল্লেখ্যোগ্য সংখ্যক ব্যান্ড এবং মিউজিশিয়ান তৈরী হয়েছে যারা দেশে এবং বিদেশে আমাদের সাফল্য গাঁথা গাইছে।

টামবা’র সফলতা:
প্রতি বৎসর নিজেদের আয়োজনে ‘টামবা’ শিরোনামে কনসার্ট আয়োজন করে। যাতে অংশ নেয় সবগুলো সদস্য ব্যান্ড। পাশাপাশি নিয়মিত পরিবেশনা তো আছেই। ব্যান্ড মিউজিকের চর্চা ছাড়াও এইড কনসার্ট, সামাজিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ও দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ‘টামবা’র হাত ধরে এগিয়ে চলা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যান্ড ও মিউজিশিয়ান আজ দেশ ও বিদেশের মাটিতে স্ব-মহিমায় ভাস্বর।

টামবা’র আগামী পরিকল্পনা:
টামবা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই নিভৃতচারী হবার কারণে এর প্রচার খুব সীমিত। কিন্তু বিগত ২৫ বছরের অর্জন নেহায়েত কম নয়। ‘টামবা’ কখনোই বাণিজ্যিক ভিত্তিক ব্যান্ড কালচারকে প্রশ্রয় দেয়নি। বরং বিশ্ব সংগীতের আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছে সকলকে। যেখানে সামগ্রিক কালচারটাই মুখ্য। কিন্তু বিস্তৃত বিবেচনায় ‘টামবা’ এবারে কিছু আলাদা কার্যক্রম হাতে নিতে চাচ্ছি। ‘টামবা’ সকল ব্যান্ডের সমন্বয়ে অডিও অ্যালবাম করার কথা ভেবে দেখছি।

দেশের ব্যান্ড মিউজিক চর্চার অন্যতম সুতিকাগার টামবা

কয়েকটা লাইভ কনসার্ট এর পরিকল্পনা আছে, যা অনুষ্ঠিত হবে টাঙ্গাইলের বাইরে কোথাও, যাতে দেশের সংগীতপ্রেমীরা ‘টামবা’র কথা জানতে পারে। সেখানে অংশ নেবে ‘টামবা’ ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে আগত অতিথি ব্যান্ড। এছাড়া ‘টামবা’র তৎকালীন সদস্যরা যা পায়নি, একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে শাস্ত্রীয় ও পাশ্চাত্য সংগীতের গভীরতম শিক্ষা প্রদান করা হবে। ‘টামবা’ অভিযাত্রায় টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের সকলের সহযোগিতা ও ভালবাসা পেয়েছে। আমাদের সকল প্রচেষ্টাই ছিল এই প্রিয় শহরের মানুষদের জন্য। আশাকরি ‘টামবা’র অগ্রযাত্রায় নিজেদের এলাকাসহ দেশের সকলের আস্থা ও ভালবাসা কুড়াতে পারবে।