চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

টাঙ্গাইলে ৩ মাসে ৫৪ ধর্ষণ!

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিলের ৩ তারিখ পর্যন্ত ৫৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। জেলাটিতে এর আগে ২০১৪ সালে ২৪৪ জন, ২০১৫ সালে ২২৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়।

গত বছর ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর হিসেবে ১১টি সহ মোট মামলা হয়েছে মাত্র ৭৭টি। অর্থাৎ নির্যাতনের শিকার নারীদের বেশিভাগই আইনের দ্বারস্থ হয়নি। এই চিত্রকে ভয়াবহ উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সম্প্রতি চলন্ত বাসে ঘটে যাওয়া পরিবহণ শ্রমিকের স্ত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বেড়িয়ে এসেছে আরেকটি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ। গত ২ এপ্রিল ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মেয়েটি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এক বছর আগে এলাসিন কলেজের একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রের মোবাইলে পরিচয় পরে পরিণয়। গত মঙ্গলবার রাতে সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে সে আমাকে একা রেখে পালিয়ে যায়। পরে দেলদুয়ার থানা পুলিশের সহায়তায় বাবা আমাকে বুধবার রাতে উদ্ধার করে বাড়ীতে নিয়ে নিয়ে আসে।

মেয়েটির বাবা জানায়, লোকলজ্জার ভয়ে প্রথমে আইনের আশ্রয় নিতে চাইনি। এ ঘটনায় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। শুক্রবার ৬ জনকে আসামী করে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছি। এখন পর্যন্ত কোন আসামী ধরা পড়েনি। মেয়েটির শারীরিক অবস্থাও ভাল নয়।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ায় ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।

এই মেয়েটির মতোই অনেকের ঘটনাই সামাজিক পটভূমির কারণে আইনের দ্বারস্থ হোন না নির্যাতনের শিকার হওয়া পরিবার।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী ও কন্যা শিশুদের ঝুকিপূর্ণ অবস্থানের কারণেই এমন ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়াও টাঙ্গাইল একটু পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় অধরাধীরা অপরাধ করে সহজে পালিয়ে যেতে পারে। এজন্য এই এলাকায় অপরাধের প্রবণতা বেশি।

টাঙ্গাইল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিশেষ পিপি কে. এম নাছিমুল আক্তার বলেন, বর্তমানের টাইব্যুনালের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। একাধিক ভুক্তভোগিরা মামলার সুফল পেয়েছন। কয়েকজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে।

টাঙ্গাইলের মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ধর্ষণ বর্তমানে একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে শুধু আইন দিয়ে নয় সামাজিক ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সালেহ মোহম্মদ তানভীর বলেন, এবিষয়ে আইন অনেক কঠোর। ধর্ষণের কোন অভিযোগ পেলেই ঘটনার সত্যতা নির্ধারণে প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। প্রমাণ পেলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে পাঠানো হয়। এর পরের বিষয়গুলো আদালতের।