চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে ইউপি সদস্যের চালবাজি

৬ মাসেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন

টাঙ্গাইলের বাসাইলে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে বরাদ্দ চালের কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে উপজেলার কাউলজানী ইউপির ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য কামরুল সিকদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। অভিযোগের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি প্রশাসন।

সরেজমিনে জানা যায়, ৫ বছর পূর্বে উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য কামরুল সিকদার সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে বরাদ্দ চালের কার্ডের তালিকা করার দায়িত্ব পান। ইউপি সদস্য কামরুল সিকদার পার্শ্ববর্তী সখীপুর উপজেলার পৌর যুব দলের সভাপতি হওয়ায় তিনি বেশিরভাগ সময় সখীপুরে অবস্থান করেন। সখীপুরে তার নিজস্ব বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কামরুল সিকদারের নামে সখীপুর থানায় জমি দখলসহ ৬ থেকে ৭টি মামলা রয়েছে।

ইউপি সদস্য হওয়ায় তিনি মাঝে মধ্যে নিজ গ্রামের বাড়ি কলিয়া আসেন। সখীপুরে বসেই তিনি বরাদ্দকৃত কার্ডের তালিকায় করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি নামে বেনামে বরাদ্দকৃত অন্তত ৪০টি কার্ড নিজের নিকট রেখে দেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এই কার্ডগুলো ব্যবহার করে তিনি তার মনোনীত লোকদেরকে দিয়ে গত ৫ বছর যাবৎ চাল উত্তোলন করে আসছিলেন। হিসাব মতে তিনি সরকারি চাউলের মূল্য অনুযায়ী ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সম্প্রতি কার্ডের সাথে ছবি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিষয়টি জানতে পারেন ডিলার আ. জলিল মিয়া। ইউপি সদস্যের কৌশলে চাল উত্তোলনের বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ভূক্তভোগীদের মধ্যে ৪ জন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত খাদ্য বান্ধব কমিটির সভায় অভিযোগটি উপস্থাপন করেন। এ সময় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর হোসেন ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনায় ডিলার আ. জলিল মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। ভোক্তাদের কার্ডে ছবি সংযোজন করারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই ইউপি সদস্যের বিচার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী। পরে উপজেলা প্রশাসন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রৌশনি আক্তারকে প্রধান করে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে ৭ দিনেই প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত কমিটি ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়।

স্থানীয় একটি সূত্রমতে, উক্ত ঘটনার তদন্তের পর পরই স্থানীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাদেক হোসেন রনির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সাথে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও বার্তা প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষিত আছে।

অভিযোগকারী আমিনুর ইসলাম (কার্ড নং ৭০৫) বলেন, অভিযোগ করার পর আমি শুধু চাল উত্তোলনের কার্ডটি হাতে পেয়েছি। কিন্তু গত ৫ বছরে আমার মত ৪০ জনের নামে বরাদ্দকৃত চালগুলি যে ইউপি সদস্য তুলে নিল তার কোন শাস্তি না হওয়ায় আমরা হতাশ। লোকমুখে শুনছি তিনি মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে গেছেন। কেউ কোন অভিযোগ করে তার ক্ষতি করতে পারবে না বলেও কামরুল সিকদার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ডিলার আ. জলিল বলেন, সম্প্রতি কার্ডের সাথে ছবি সংযুক্ত বাধ্যতামূলক করে প্রশাসন। এর পর থেকেই বিষয়টি জানতে পেরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নীতিমালা ২০১৭ এর ৬.৮ ধারা মোতাবেক ইউপি সদস্য মো. কামরুল সিকদার এর মৌখিক প্রত্যয়ন স্বাপেক্ষে আমি উক্ত ভোক্তাদের চাল সরবারহ করেছি মর্মে ইউএনও বরাবর লিখিত জবাব দিয়েছি বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. কামরুল সিকাদার বলেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন। ওই ডিলারের চাল বিতরনের অনিয়ম ধরা পড়ায় তিনি এমন অভিযোগ করছেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাদেক হোসেন রনি বলেন, আমি কোন টাকা লেনদেন করিনি। উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে আমি তাদেরকে সহযোগিতা করেছি বলেও জানান।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মনজুর হোসেন বলেন, কোন প্রকার টাকা লেনদেনের বিষয় আমার জানা নেই। ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রতিবেদককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।