টাঙ্গাইলের ২২টি ইউনিয়নের ১০১টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
এর মধ্যে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গরু-ছাগল ও পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁধ ও উঁচু বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল অংশে বুধবার যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও দুই দিন এ নদীতে পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে।
গত কয়েকদিনের নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে জেলার ভূঞারপুরের গোবিন্দাসীর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ফসলী জমি নদী গর্বে চলে গেছে।
এছাড়াও টাঙ্গাইল সদরের মাহমুদ নগর ও নাগরপুর উপজেলার কয়েকশ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আনছের আলী জানান, অকাল বন্যা ও বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘরে পানি উঠার কারণে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। পানি ও খাবার সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি বে-সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মনির জানান, গাবসারা ইউনিয়ন পুরোটাই চরাঞ্চল। বন্যার কারণে পুরো ইউনিয়নের সব গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরণের ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা, পুংলী, ঝিনাই, বংশাই ও ধলেশ্বরীর নদীতে পানি বেড়েছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সে.মি., ধলেশ্বরী নদীর দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ব্রিজের এখানে বিপদ সীমার ৮৯ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর কালিহাতী উপজেলার যোকারচর এলাকায় বিপদসীমার ৪৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাকি দুটি নদী পুংলী ও বংশাই নদী বিপদ সীমার নিচে রয়েছে। আগামী দুই দিন পানি আরও বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোশারফ হোসেন জানান, এখন পর্যন্তু বন্যায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি খবর পাওয়া যায়নি। বন্যা কবলিতদের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা বিতরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আরও তিনশ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।