রাত পোহালেই টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম ধাপে আজ সারাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজের সুবিধা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিশন আগামীকাল ২৩ মার্চ নাগরপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।
তবে নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও স্বস্তিতে নেই অংশগ্রহণকারী কোন দলের প্রার্থীই। সব দলেই রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রতিটি ইউনিয়নেই রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও সাধারণ ভোটারগণ মনে করছেন বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ উতরে যেতে পারেন নির্বাচনী তরী।
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের দাপটে কোণঠাসা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী। শঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। জয়ের জন্য আশাবাদী সবাই। চায়ের দোকনগুলোতে চলছে যুক্তিতর্ক আর হিসাব নিকাশ। নির্বাচন সুষ্ঠ হবে তো? এমনি জল্পনা কল্পনা প্রার্থীসহ সাধারণ ভোটারদের।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজ দুপুরে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ১২০ জন বিজিবি, ২টি স্টাইকিং ফোর্স, ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। আনসার, পুলিশ ও র্যাবসহ ৪ স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনীর মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
“তাছাড়াও কাল নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সকল প্রধান কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠ হবে। কোথাও কেউ কোন প্রকার অনিয়ম পরিলক্ষিত তা তাৎক্ষনিক সমাধান করার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে।”
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল শেষ হয় গত ২২ ফেব্রুয়ারী। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৭৭ জন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ১৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আর বিএনপিতে রয়েছেন চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী।
চর অধ্যুষিত নাগরপুরের ভারড়া ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গণের কারণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওই ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করেছেন নির্বাচন কমিশন। কাল ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গত পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। বিদ্রোহীদের কারণে বাড়তি চাপে রয়েছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১৪জন। আর বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন চারজন। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনীত ৪ জন, ইসলামী আন্দোলনের ২জন ও অপর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
প্রার্থী হিসাবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন:
সহবতপুর– মো. আনিসুর রহমান আনিস (নৌকা), আবুল হোসেন (ধানের শীষ), মো. তোফায়েল মোল্লা (ঘোড়া), মো. রতন মিয়া (লাঙ্গল), মো. শাহাদত হোসেন (পাখা)।
গয়হাটা- মোস্তাফিজুর রহমান আসকর (ঘোড়া), মো. কামরুজ্জামান (আনারস), মো. হারুনুর রশিদ হারুন (ধানের শীষ), জহির খান (পাখা), শেখ শামছুল হক (নৌকা), সোহেল রানা (মটর সাইকেল)।
আটগ্রাম- আব্দুল বারী (ধানের শীষ), আসাদুজ্জামান কিসলু (ঘোড়া), চিত্ত রঞ্জন সরকার (চশমা), মনিরুজ্জামান মোল্লা (আনারস), মো. শওকত হোসেন (নৌকা)।
সলিমাবাদ- ফরিদ হোসেন ভূইয়া (ধানের শীষ), দাউদুল ইসলাম দাউদ (নৌকা), আজাহারুল ইসলাম মন্টু (আনারস), মো. এমদাদ হোসেন (লাঙ্গল), মো.শফিকুল ইসলাম (ঘোড়া), তাহেরুল ইসলাম (মটর সাইকেল)।
নাগরপুর- মো. হাবিবুর রহমান হবি (ধানের শীষ), মো. কুদরত আলী (নৌকা), মো. আমির হোসেন(ঘোড়া), আব্দুস সবুর মিয়া (পাখা)।
দপ্তিয়র- এম ফিরোজ সিদ্দিকী (ধানের শীষ), মো. আবুল হাসেম (নৌকা), মো. রবিউল হোসেন (লাঙ্গল), মো. লূৎফর (আনারস), মো. আব্দুল মান্নান (ঘোড়া), মো. আব্দুস সালাম (মটর সাইকেল)।
ভাদ্রা- মো. হাবিবুর রহমান খান (ধানের শীষ), হামিদুর রহমান (নৌকা), আমিনুর রহমান (টেবিল ফ্যান), আব্দুর রাজ্জাক (লাঙ্গল), ছরোয়ার আজাদ (ঘোড়া), মোজাম্মেল হক (আনারস), মো,শওকত আলী (অটো রিক্সা), মো. সাইফুল ইসলাম (মটর সাইকেল), মো. শওকত আলী (চশমা)।
ধুবড়িয়া- আশিকুর রহমান (ধানের শীষ), শফিকুর রহমান খান শাকিল (আনারস), মতিয়ার রহমান (নৌকা), মো. বাবুল মিয়া (মটর সাইকেল)।
মামুদনগর- আক্তারুজ্জামান (চশমা), বাবুল আহমেদ (মটর সাইকেল), মাহে আলম সাবু (ধানের শীষ), মো. আনোয়ার হোসেন (আনারস), মো. শহিদুল ইসলাম (ঘোড়া), শেখ কামাল হোসেন (নৌকা)।
পাকুটিয়া- মো. আব্দুল আওয়াল মিয়া (আনারস), মো. আজহারুল ইসলাম (নৌকা), মো. সিদ্দিকুর রহমান (ধানের শীষ), জগলুল হায়দার সিদ্দিকী (ঘোড়া), মো. সেলিম খান(মটর সাইকেল)।
মোকনা- মো. আতাউর রহমান খান (ধানের শীষ), মো. শরিফুল ইসলাম (নৌকা), খন্দকার সাজ্জাদ হোসেন (ঘোড়া)।
শেষ সময়ে সাধারণ ভোটাররাও কষতে শুরু করেছেন ভোটের অঙ্ক। তাদের পছন্দের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে চলছে চুলচেড়া হিসাব নিকাশ। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজের কারণে উভয় দলেরই পাল্টে যেতে পারে জয়ের-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ।