আগেই জানা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন আইনে আগামী তিন বছর দেশটির ভিসা পাবেন না নোভাক জোকোভিচ। তাতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সর্বোচ্চ ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন সার্বিয়ান তারকার প্রিয় আসরে খেলার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে দীর্ঘ সময়ের জন্য।
এমন দুঃসময়ে জোকোভিচকে খানিকটা আশার আলোই দেখালেন স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানালেন, ‘সঠিক পরিস্থিতিতে’ তাকে জলদি প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতে পারে দেশটিতে।
সোমবার সাক্ষাৎকারে মরিসন বলেছেন, ‘তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে (নিষেধাজ্ঞা) চলে। তবে যাদের সঠিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে, তাদের সেসময় বিবেচনা করা হবে।’
আদালতের নির্দেশ মেনে রোববার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেছেন জোকোভিচ। ভিসা বাতিলের ব্যাপারে করা তার দ্বিতীয় আপিল আদালতে খারিজ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় সুযোগ মেলেনি কোর্টে নামার। সোমবার থেকে শুরু হওয়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বিশ্বের বর্তমান একনম্বরকে ছাড়াই কোর্টে গড়িয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার আগেই তিন বছরের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি জেনে গেছেন সার্বিয়ান তারকা। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও হয় ক্ষেত্র বিশেষে। অস্ট্রেলিয়ার আইনে সহানুভূতিশীল হওয়ার সুযোগ আছে। জোকোভিচের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হলে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোর্টে নামার পথ খুলবে রেকর্ড ২০টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিকের।
ভ্যাকসিন জটিলতায় অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে হল জোকোকে। নাটকের একেবারে শুরুটা গত ৬ জানুয়ারি। অস্ট্রেলিয়া সরকার তার ভিসা বাতিল করে দেয়। করোনা ভ্যাকসিনের তথ্য প্রকাশ না করার দায়ে মেলবোর্নের টুলামারিন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আট ঘণ্টা আটকেও রাখা হয়। পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রুমবন্দি রাখা হয়।
নাটকে নতুন মোড় নেয় শুক্রবার সকালে। প্রথমবার ভিসা বাতিলের পর জোকোর করা আপিলের প্রেক্ষিতে অজি আদালতের রায় এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে কোনো বাধা নেই সার্বিয়ান তারকার। রায়ের পর তিনি টেনিস কোর্টে ফিরে অনুশীলনও করেছেন। বৃহস্পতিবার বিশ্বের বর্তমান একনম্বরকে রেখেই আসরের ড্র সেরে নেয় ওপেন কর্তৃপক্ষ।
ড্রয়ের কয়েকঘণ্টা পেরোতে উল্টে যায় পাশার দান। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আইনজীবীরা আগেই জানিয়েছিলেন, দেশটির ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকার চাইলে ‘নিজস্ব ক্ষমতাবলে’ ফের বাতিল করতে পারেন জোকোভিচের ভিসা। শুক্রবার সেটি করে বসেছে অজি প্রশাসন।
করোনা ইস্যুতে শক্ত অবস্থানে থাকা অজি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও আগে বলেছিলেন, ‘জোকোভিচ কোনো বিশেষ কেউ নন। প্রত্যেকের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য।’
অস্ট্রেলিয়া সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানী বেলগ্রেডসহ সার্বিয়াজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় জোকোকে রাখা হোটেলের সামনেও। সার্বিয়ান সরকার দাবি করে, অস্ট্রেলিয়া জোকোভিচের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করছে।
পরে অস্ট্রেলিয়ার আদালতে করা আপিলে জোকোভিচের আইনজীবী জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জোকোর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়া সম্ভব ছিল না। আদালত টেনিস তারকার পক্ষে রায় দেন। বলে দেন দেশটিতে থাকতে কোনো বাধা নেই। এরপর খুলতে থাকে মাঠে নামার দরজাও।
অনুশীলনে ফিরে জোকোভিচ যখন বলেন, এখন শুধু খেলায় মনোযোগের সময়, সেটির চব্বিশঘণ্টা পেরিয়ে অজি ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকারের ‘নিজস্ব ক্ষমতাবল’ প্রয়োগে ফের ভিসা বাতিল করে দেন সার্বিয়ান তারকার। এরপর আবারও আপিল করে অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার চূড়ান্ত নির্দেশ পান নাদাল-ফেদেরারের সঙ্গে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড ভাগ করা তারকা।