১.
ঐশীর ফাঁসি দৃষ্টান্তমূলক।
ইয়াবা খেয়ে বাপ-মাকে হত্যা করলে কি হয়, এইটা বোঝানোর জন্য এই রায়ের দরকার ছিল। যে সব অ্যামনেস্টিবাদী এর মধ্যে মানবতা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তারা পরোক্ষভাবে ইয়াবা ব্যবসার প্রসার চান। ঐশীর কাছে যে ইয়াবা বেঁচতো, তাকে ফাঁসি কেন দেয়া হলো না, এই প্রশ্ন স্রেফ ত্যানা পেচানো। মামলাটা মাদক খাওয়ার নয়, খুনের। ইয়াবা বিক্রেতা নিশ্চয়ই এটা বলে দেয়নি যে, খাওয়ার পর বাপ-মাকে খুন কইরো।
২.
ঐশী যখন বাপ-মাকে হত্যা করলো, তখন তার প্রতি গণমানুষের এই সফট কর্নার ছিল না। সময় এখানে হিলারের কাজ করেছে, পেইন-কিলারের কাজ করেছে। পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর মৃত্যুশোক ভুলে এখন জাতি এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশীর শোকে আহত। বয়স বিবেচনায় অ্যামনেস্টিবাদীরা ঐশীর মৃত্যুদণ্ডের যে বিরোধিতা করছেন, এতে কিশোর অপরাধ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। ষোড়শী যখন জানবে, জোড়াখুন করলেও বাঙালি মনের সফট কর্নার আদায় করা যায়- তখন যে সে আরও বেপরোয়া হবে, তা বুঝতে মনোবিজ্ঞানী হওয়া লাগে না।
৩.
এমন ঐশী নির্মাণে যারা সমাজকে দায়ী করছেন, সমাজকাঠামোর বিচার দাবি করছেন; তারা ভালো করেই জানেন- তাদের দাবিটা বিচারহীনতার পক্ষে যায়। তবে ঐশীর জন্য আমার মনখারাপের কারণ ভিন্ন। মেয়েটি জেন্ডার ডিক্রেমিনেশনের শিকার; কোনও মাদকাসক্ত ছেলে বাপ-মাকে খুন করলে এতো কাভারেজ পাইতো কি না সন্দেহ! ফাঁসির খবর শোনার পর একটা কবিতা লিখেছিলাম, পাঠকদের উদ্দেশ্যে সেটা আবারও কপিপেস্ট!
‘ঐশী আসলে এপিক ক্যারেক্টার।
তারে নিয়া গান হবে, কবিতা হবে
পুঁথি হবে, গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে
আরো এক রগরগে কাহিনী–
শহরের মেয়েটা নেশা করতো।
ছেলেদের সাথে মেলামেশা করতো।
পার্টি করতো, আইটেম সং।
রঙঢঙ হবে। গ্ল্যামারাস সাসপেন্স;
ঐশী নামে সিনেমাও হবে।
বাণিজ্যিক আর্টফিল্ম।
সেক্স-সাসপেন্স-অ্যাকশন-ড্রামা
হলে ফিরবে দর্শক।’
৪.
আরেকটা গোপন কথা বলি! বয়স বিবেচনায় যদি আজ ঐশীর ফাঁসি না হতো, তাহলে বিচারব্যবস্থার গুষ্টি উদ্ধার করে এভাবেই ফেসবুক ফিড ভরে যেতো গালাগালিতে। বাঙালি অ্যাগেইনস্ট দ্যা উইন্ডে ভাসতে পছন্দ করে। এটা জাতির মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, ঐশীর নয়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)