চিকিৎসা ও মানবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে এবং এভাবে চললে তার মৃত্যুও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ নীলস মেলজার।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, এর আগে গত মে মাসে এক বিবৃতিতে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ‘মানসিক নির্যাতন’ করা হচ্ছে বলে সতর্ক করেছিলেন মেলজার।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে নীলস মেলজার বলেন, গুপ্তরবৃত্তির অভিযোগে ব্রিটেন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের হুমকির মুখে থাকা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে হওয়া অমানবিক আচরণ তার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। যুক্তরাজ্য যদি জরুরিভাবে তার প্রতি মানবিক না হয়, তাহলে অ্যাসাঞ্জের জীবন খুব শিগগিরই অবসান হতে পারে।
২০১২ সাল থেকে বিগত সাত বছর লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ, যা এক প্রকার বন্দিই বলা চলে। চলতি বছরের মে মাসে ইকুয়েডর তার আশ্রয় বাতিল করলে লন্ডন পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৪৮ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান বন্দিকে। তখন থেকে তিনি লন্ডনের বেলমার্শ হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি আছেন।
গত মে মাসে মেলজার উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সাক্ষাত করে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, বিচ্ছিন্নতা, স্বেচ্ছাচারি আচরণ, গুরুতর উদ্বেগ তাকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় স্নায়ুবিক পতনের মাধ্যমে জীবন হুমকির মধ্যে চলে যাবে তার।
মেলজার বলেন, মে মাসে তিনি লন্ডনকে অ্যাসাঞ্জের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অবিলম্বে তার মর্যাদা রক্ষার দাবি করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে আমরা যা দেখেছি তা অ্যাসাঞ্জের অধিকার এবং সততার জন্য অবমাননা।
‘আমার আবেদনে জরুরি চিকিৎসা ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তদন্ত, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যুক্তরাজ্য সরকার।’
মেলজার আরও বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকারের নেতৃত্বে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে এমন আচরণ আশা করা যায় না। এতে তার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছে।
অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর না করার আহবান জানিয়ে তার মুক্তি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তার ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান মেলজার।
২০১০ সালের আগস্টে সুইডেনে নির্ধারিত একটি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়েই অ্যাসাঞ্জের সমস্যার শুরু। ওই সফরের সময়ে তার সঙ্গে দেখা করা দুই নারী তার বিরুদ্ধে পরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন অ্যাসাঞ্জ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। তখনকার মতো সুইডেন ছাড়তে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু পরে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালের ২০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল তাকে গ্রেপ্তার করতে রেড নোটিস জারি করে। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টারের এক বিচারকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে ডিসেম্বর মাসে তাকে দুই লাখ ৪০ হাজার ইউরো জমা ও নিশ্চয়তার শর্তে তাকে জামিন দেয় আদালত। ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের এক পর্যায়ে সুইডিশ আইনজীবীরা তাকে সুইডেনে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানায়।
২০১২ সালের ১৯ জুন জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে ঢুকে পড়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানান। ব্রিটিশ পুলিশ দূতাবাস ভবন ঘিরে রেখে তার বাইরে বের হওয়ার যাবতীয় সুযোগ বন্ধ করে রাখে। জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় ব্রিটেনের আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
২০১০ সালে কয়েক লাখ মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে উইকিলিকস হইচই ফেলে দেয় বিশ্বজুড়ে। তখন থেকেই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ওই বছরেই যৌন হয়রানির অভিযোগে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়।