চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘জীবনে প্রথম আমি সাহায্য চাইছি আমার শ্রোতাদের, বন্ধুদের’

১৬ মার্চ সত্তরে পা রাখলেন বাংলা গানের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ কবীর সুমন। বয়স হলেও থেমে নেই তার গান। সমান তালে বাজিয়ে চলেছেন গিটার আর পিয়ানো। সুরের ভেতর থাকা সত্তর বছর বয়স এই মানুষটি নিজের জন্মদিনেও(১৬ মার্চ) কলকাতার নজরুল মঞ্চে টানা তিন ঘন্টা গান করেন। মোহিত করেন তার শ্রোতা দর্শকদের। অথচ কলকাতার একটি খবরের কাগজে শনিবারের কাগজের শিরোনাম আসে ‘কারপাল টানেল সিনড্রোমের ব্যথায় থমকে গিয়েছে সুমনের আঙুল’! আর এমন সংবাদ দেখে ক্ষুব্ধ স্বয়ং কবীর সুমন।

এমন সংবাদকে তিনি নিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলেই মনে করছেন। তার দাবী: তার বিরুদ্ধে আগেও পত্রিকায় এমন খবর রটানো হয়েছে। এখনো হচ্ছে। রোজগার বন্ধ করতেই এমন সংবাদ ছাপা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। কোনোভাবেই অসুস্থ নন, বরং এমন সংবাদ ছাপানোর আগে পত্রিকার তরফ থেকে তাকে ফোন করাও হয়নি। সংবাদ পত্রের এমন খবরকে ‘মনগড়া’ আখ্যা দিয়েছেন কবীর সুমন। আর এ নিয়ে নিজের ফেসবুকে লম্বা স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তিনি মনে করছেন: সংবাদে প্রকাশিত লেখাটি পেশায় হস্তক্ষেপ করার সামিল। যেনো আমায় যাঁরা ভাড়া করতে চান আর না করেন। লোকে যাতে টিকিট না কাটে।

প্রকাশিত সংবাদের সমালোচনা করে কবীর সুমন তার শ্রোতা ভক্তদের অনুরোধ করেছেন। সাহায্য চাইছেন বাংলাদেশের মানুষের কাছেও। তার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:

‘‘আজকের সংবাদ প্রতিদিন কাগজে আমার সম্পর্কে মিথ্যে খবর ছাপা হয়েছে। আজকের সংবাদ প্রতিদিন-এ অভিরূপ দাস নামে এক লেখক উদ্ধৃতি চিহ্ণের মধ্যে লিখেছেন – যেন আমি এটা বলেছি: “কারপাল টানেল সিনড্রোমের ব্যথায় থমকে গিয়েছে আঙুল।” অভিরূপ দাস লিখছেন: ‘আঙুলের যন্ত্রণায় পিয়ানোয় হাত ছোঁয়াতে পারছেন না তিনি।’ – এই চমৎকার নিবন্ধটি ছাপা হওয়ার মাত্র ১৫ দিন আগে আমি নজরুল মঞ্চে হাজার দুই শ্রোতার সামনে তিন ঘন্টা একটি কীবোর্ড বাজিয়ে গান গেয়েছি। টানা তিন ঘন্টা। কোনও বিরতি নিইনি। ধন্য পশ্চিম বঙ্গ ও কলকাতার সাংবাদিকতা। সে খবরটাও রাখেন না এই “সাংবাদিক”।

নিবন্ধের শিরোনাম স্নায়ুর অসুখ বা এমনকি হাতের আঙুলের অসুখ নয়- ‘গানের অসুখ।’- যেন আমার গান অসুস্থ। অর্থাৎ আমার মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। এইরকম আর কী।

এই লেখাটি লেখার আগে লেখক বা সম্পাদক আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেননি, আমার মত নেননি। যে চিকিৎসকরা আমার চিকিৎসা করছেন তাঁদের সঙ্গেও আমার রোগ নিয়ে আলোচনা করেননি। আপন মনের মাধুরি মিশায়ে লিখে দিয়েছেন। দাস মশাই আবার লিখছেন – “সঙ্গীতে ভক্তদের মন খারাপ।” সেই! গত ১৬ মার্চ কলকাতার নজরুল মঞ্চে হাজার দুই লোক টানা তিন ঘন্টা আমার গান ও বাজনা শুনলেন, সঙ্গে গাইলেন, শেষে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিলেন। সক্কলের ভীষণ মন খারাপ কারণ সংবাদ প্রতিদিনের অভিরূপ দাস মশাই তা মনে করেন।

৭০ বছর বয়সে এক সঙ্গীতশিল্পী এখনও গেয়ে বাজিয়ে এত মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে – এটা ঠিক সহ্য হচ্ছে না। এইভাবে সংবাদ প্রতিদিন আমার পেশায় হস্তক্ষেপ করছে। একসময়ে কলকাতার আরও তিন চারটি কাগজ এটাই করে গেছে সমানে। এবারে সংবাদ প্রতিদিন – যে কাগজটায় আমায় অনুনয় বিনয় করে লিখিয়েছেন এখন পর্যন্ত দুজন কর্মী। মজার কথা, আমার স্বাস্থ্য ও পেশাজীবন সম্পর্কে মিথ্যে কথা যেদিন বেরোল (অর্থাৎ আজ) সেই একই দিনে – লে হালুয়া – আমার তিন দুগুনে সাত কলামটাও ছাপা হয়েছে। এই পেগোল-পেগোল-হরিছিদামুদ্দিগলিমার্কা কেস কলকাতাতেই হতে পারে- মরবি তো মর্‌ খবরকাগজে।

এখনও আমি পেশাদার অনুষ্ঠান করি। টিকিট বিক্রি হয়, কাউকে গছাতে হয় না। লোকে কেনে। হাউস ফুল হয়। সিপিএমের কমরেড রেভোলিউশন চ্যাটার্জি (রেভোলিউশনারি পদবিটা আনুষ্ঠানিকভাবে, আইনত ঝেড়ে ফেলে কী শান্তি যে পেয়েছি) লিখতেন আমি নাকি জনা ষাটেক লোক নিয়ে যাই। মাকু হলেই কি মিথ্যেবাদী হতে হবে? তিনি তারপর টিকিট পান লালদুর্গপার্টির- আর… জনা ষাটেকের একটু বেশি লোকের ভোট পেয়ে হেরে যান। আহা।- তা সংবাদ প্রতিদিনের এই সুধীও কি কোনও টিকিট পাচ্ছেন?

আমার ধারণা ছিল সংবাদ প্রতিদিন আমার সঙ্গে এ ধরণের আচরণ করবে না কারণ আমি এই কাগজে নিয়মিত লিখি। কিন্তু বুঝলাম একটি বিশেষ যুগমুহুর্তে এই পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী অসভ্যতা না করে পারলেন না।

খবর কাগজ যারা বের করে তারা তাদের মনগড়া যা খুশি তাই পৌঁছে দিতে পারে অনেক লোকের কাছে। সে ক্ষমতা আমার মতো সাধারণ লোকের নেই। তাও আজ আমি আমার শ্রোতাদের কাছে আবেদন করছি- এর বিহিত করুন।

সংবাদ প্রতিদিনের এই লেখাটি আমার পেশায় হস্তক্ষেপ করার সামিল- যাতে আমায় যাঁরা ভাড়া করতে চান আর না করেন। লোকে যাতে টিকিট না কাটে।

আমার শ্রোতারা, বন্ধুরা রুখে দিন এই কাগজটার আক্রমণ। ওরা হঠাৎ গায়ে পড়ে আমার পেশাজীবনে হস্তক্ষেপ করল। আমি ছেড়ে দিতে পারি না।

জীবনে প্রথম আমি সাহায্য চাইছি আমার শ্রোতাদের, বন্ধুদের। আমার লেখাটি শেয়ার করুন। বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের মানুষও জানুন কিছু খবর।’’