যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অথবা কানাডায় আশ্রয় পাওয়ার আবেদন করেছেন ব্লাসফেমি আইনে পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মসিহ।
কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, পাকিস্তানে তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন।
আশিক মসিহ শনিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তিনি আমাদের সাহায্য করেন এবং যদি সম্ভব হয় আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেন।’
একই অনুরোধ তিনি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিও জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি।
শনিবার প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসিয়া বিবির আইনজীবী সাইফ মুলুকও দেশত্যাগ করেছেন।
সাজা থেকে অব্যাহতির ঘটনায় পাকিস্তান জুড়ে চলমান বিক্ষোভ সামলাতে কট্টরপন্থি ইসলামিস্ট দল তেহরিক-ই-লাবাইক পার্টির (টিএলপি) সঙ্গে শনিবার একটি সমঝোতায় পৌঁছায় দেশটির সরকার।
সমঝোতার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে আসিয়া বিবি ওরফে আসিয়া নওরিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে কতদিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা, তা এখনো জানানো হয়নি।
এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা আসিয়াকে খালাস দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে।
এই সমঝোতার পর আরও আশঙ্কায় আছে পরিবারটি। জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে আশিক মসিহ বলেন, তিনি এবং তা পরিবার খুবই আতঙ্কে আছেন।
‘এই সমঝোতার কথা শুনে আমার মেরুদণ্ড দিয়ে ভয়ের কাঁপুনি বয়ে গেছে। বিচার বিভাগের ওপর এভাবে চাপ প্রয়োগ করা সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক না,’ বলেন আশিক।
‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমরা এখান থেকে ওখানে শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছি, বারবার অবস্থান বদলাচ্ছি আমরা।’
আশিক বলেন, ‘আমার স্ত্রী, আসিয়া বিবি ইতোমধ্যেই অনেক বেশি ভুগেছে। সে প্রায় ১০ বছর জেলে কাটিয়েছে। আমার মেয়েরা তাদের মাকে মুক্ত দেখার জন্য অস্থির হয়ে ছিল। কিন্তু এখন এই রিভিউ পিটিশন তার মুক্তির প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে দিলো।’
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান এমপি টম টুগেন্ডহাট জানিয়েছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে এ বিষয়ে ‘জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি মূল্যায়ন’ করতে বলেছেন।
Violence against minorities is unacceptable. The treatment of Asia Bibi is vile. @ImranKhanPTI has a decision to make: will he stand for the rule of law or mob rule? Time for leadership, Imran. #AsiaBibiCase #Pakistan
— Tom Tugendhat (@TomTugendhat) November 3, 2018
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী অবশ্য বিবিসি’কে বলেছেন, আসিয়া বিবিকে সুরক্ষা দিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
‘হ্যাঁ, পরিস্থিতি একটা তৈরি হয়েছে এবং আমরা সেটি সামলাচ্ছি। তবে আমি নিশ্চিত করছি যে তার জীবন ঝুঁকিতে নেই,’ বলেন তিনি।
প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে জাতিকে বিভক্ত করার অভিযোগে ২০১০ সালে ব্লাসফেমি আইনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আসিয়া বিবি হিসেবে পরিচিত আসিয়া নওরিনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছিল।
অবশ্য আসিয়া বিবি বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন। তারপরও গত ৮ বছর ধরে প্রায় পুরোটা সময় কারাগারে একাকি বন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়েছে তাকে।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার ৩১ অক্টোবর আসিয়াকে ওই সাজা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্দেশ দেন, অন্য কোনো মামলায় আটক না থাকলে যেন তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হয়।
রায়ের পর থেকেই পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের সমর্থক গোষ্ঠী রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশজুড়ে রাজপথে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে।
এই মামলার বিভিন্ন কার্যক্রমের দিন মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার দাবিতে আদালতের সামনে অসংখ্য মানুষ মিছিল করেছে। তাই রায়কে ঘিরে বুধবারও ইসলামাবাদজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। দেশটির আইনি ব্যবস্থায় এর বিভিন্ন পদ্ধতি বেশ কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। তাই ব্লাসফেমি আইনগুলোর প্রতিও অধিকাংশ জনগণের সমর্থন বেশ দৃঢ়। কট্টর রাজনীতিকরা তাদের সমর্থনের ভিত্তি মজবুত করার জন্য ব্লাসফেমির কঠোর শাস্তিকে সমর্থন করে আসছে।