সামরিক আদালতে মাত্র পাঁচ মিনিটের বিচারে বাবার মৃত্যুদণ্ডের সময় মায়ের গর্ভে আট মাস তার। বুঝতে শেখার পর থেকে অন্তত বাবার মৃত্যুদিনটি জানার চেষ্টা করেছেন তিনি, কোথায় তার কবর সেটাও।
বিয়াল্লিশ বছর ধরে ঘুরেছেন সরকারি দপ্তরে দপ্তরে। অবশেষে তিনি জেনেছেন বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার দিনক্ষণ। এখন তার দাবি: অন্যায় বিচারে বাবাকে হত্যার জন্য জেনারেল জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার।
এই তিনি আতাউর, এখন প্রায় মধ্যবয়সী। বাবার কোন স্মৃতি নেই তার। বাবা কেমন ছিলেন সেটাও জানা নেই, কারণ যখন ৮ মাসের গর্ভে, তখন তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার মৃত্যুদণ্ড হয়। বেড়ে উঠার সময় জানার ছিলো কেন তার বাবাকে চলে যেতে হয়েছে।
সাত বছর বয়সে প্রথম একটু ধারণা পান, মা বলেছিলেন, জিয়া তোর বাবাকে ফাঁসি দিয়েছে। আট বছর বয়স থেকে নানীর কাছে বেড়ে উঠা। আতাউরের বাবার নাম ইব্রাহিম খান সেনা বাহিনী ব্যাজ নম্বর ৬৫৮৭২১২। শুধু এইটুকু তথ্য নিয়ে বাবার মৃত্যুদিন এবং কবর খোঁজার দীর্ঘ এবং প্রায় অসম্ভব এক যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি।
অবশেষে সমাপ্ত হলো আতাউরের বাবার মৃত্যু তারিখ খোঁজার যাত্রা। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে দিলো গত ৯ই জুলাই জাতীয় সংসদে হাসানুল হক ইনুর একটি বক্তব্য।
সেই বক্তব্যের সূত্রে সাংবাদিক-গবেষক জায়েদুল আহসানের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ১৯৭৭ সালের ২৯শে অক্টোবর ৫ মিনিটের বিচারে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ফাঁসি হয় তার বাবার। ওইসময় জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে কথিত ক্যুয়ের অভিযোগে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে সশস্ত্র বাহিনীর যে শত শত কর্মকর্তার ফাঁসি হয়েছিল, তার মধ্যে ১৭২ জনের ফাঁসি হয় কুমিল্লায়।
আতাউরের প্রশ্ন ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম দেশের জন্য যুদ্ধ করে কীভাবে দেশদ্রোহী হন!
সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে ১৯৭৭ সালে সংঘটিত সকল হত্যার বিচার চান আতাউর। চান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি। বাবাকে আর কখনও পাবেন না। তবে ৪২ বছরের জীবনে এবারই প্রথম মৃত্যুদিবসে কুমিল্লার পিকচার চরে বাবার কবরের মাটি স্পর্শ করতে যাবেন আতাউর।
বিস্তারিত দেখুন সোমা ইসলামের ভিডিও রিপোর্টে