নোবেলজয়ী চীনা মানবাধিকার কর্মী লিও জিয়াওবোকে লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না দেয়ায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে চীন।
প্রয়াত এই নোবেলজয়ীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি চীনের ভূমিকার সমালোচনায় সরব নোবেল কমিটি থেকে শুরু করে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স। জিয়াওবোর স্ত্রী লিও জিয়াকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়ারও জোর দাবি উঠেছে। নোবেল কমিটির মতে জিয়াওবোর মৃত্যুর জন্য চীন দায় এড়াতে পারে না। জিয়াওবোর চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ছিলো জার্মানি।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘জিয়াওবোর ক্যান্সার কি অনেক আগেই সনাক্ত করা যেতো না? চীনকে এখন দ্রুত এবং স্পষ্টভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’
ডব্রটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন বলেন,‘জিয়াওবোকে নিজের প্রাণ রক্ষার চিকিৎসা করাতে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিৎ ছিলো। অথচ চীনের কর্তৃপক্ষ বারবার তার এমন জরুরি প্রয়োজনকে অস্বীকার করেছে।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো জবাব দেয়নি চীন। তবে চীনের একটি সংবাদপত্রের দাবি জিয়াওবোর স্বাভাবিক মৃত্যুকে পশ্চিমা শক্তি ‘রাজনৈতিক’ ইস্যু বানাচ্ছে।
লিও জিয়াওবো
১৯৫৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিলিনের চ্যাংচুনে লিও জিয়াওবোর জন্ম। একজন অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে কর্মজীবন শুরু তার। সাহিত্য ও দর্শনে পড়াশোনা করা লিও বেইজিং এর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হিসেবে তার শান্ত-নিস্তরঙ্গ জীবন উত্তাল হয়ে ১৯৮৯ সালের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে আন্দোলন। অনেকেই গণতন্ত্রের এই আন্দোলনে পিছু হটলেও তিনি অটল থাকেন।
তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের সেই বিক্ষোভের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। ফিরে আসেন এপ্রিলে। সেই বিক্ষোভে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সেনাবাহিনীর সাথে সফল মধ্যস্থতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এতে করে শত শত জীবন বেঁচে যায়।
আটকদের মুক্তির জন্য প্রচারণা অভিযানের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয় লিউকে। চীনের উত্তর-পূর্বাংশের শ্রম শিবিরে তাকে ৩ বছরের জন্য আটক রাখা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি ১৯৯৬ সালে কবি লিউ জিয়াকে বিয়ে করেন। পরে অবশ্য তিনি মুক্তি পান এবং গণতন্ত্রের পক্ষে তার অভিযান অব্যাহত রাখেন।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহু দলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য আজীবন লড়ে গেছেন লিউ। ভিন্ন মত অবলম্বন করায় এবং সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে তাকে বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে। এমনকি তাকে গৃহবন্দীও করা হয়েছে। তার স্ত্রীকেও গৃহবন্দি করা হয়।
নোবেল বিজয়ী চীনের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী লিও জিয়াওবো আজ ৬১ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
জীবনের শেষ কিছু দিন তিনি শুধু কয়েকদিন হাসপাতালে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে পেরেছেন। বিদেশে তার চিকিৎসার আবেদনও খারিজ করে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ।
অনেকের চোখেই লিও হিরো, কিন্তু নিজের দেশের সরকারের কাছে সে ভিলেন। “চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘ ও অহিংস আন্দোলনের” জন্য এই রাজনৈতিক কর্মী ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। চীনের মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ‘শীর্ষস্থানীয় প্রতীকী’ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে সুইডেন যেতে পারেননি তিনি। কারারুদ্ধ অবস্থাতেই বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হন তিনি।